কয়লাকে ছাড়িয়ে শীর্ষের পথে এলএনজি

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রফতানিতে দ্রুত উন্নতি করছে অস্ট্রেলিয়া। কাতারকে ছাপিয়ে বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের দৌড়ে বেশ এগিয়ে গেছে দেশটি। এ ধারাবাহিকতায় চলমান ২০১৮-১৯ মৌসুমে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজি রফতানি করে দেশটির সম্মিলিত আয় ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে সাম্প্রতিক এ প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ডাস্ট্রি, ইনোভেশন অ্যান্ড সায়েন্স।

আগামী মৌসুমে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি বাবদ দেশটির আয় আরো প্রায় ৮৫০ কোটি ডলার বাড়তে পারে। বিপরীতে কয়লা রফতানি বাবদ অস্ট্রেলিয়ার আয় কমতে পারে ১৮ শতাংশ। ফলে অচিরেই আয়ের দিক থেকে কয়লাকে ছাপিয়ে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ রফতানি পণ্যের স্বীকৃতি পেতে পারে এলএনজি। খবর রয়টার্স ও সিনহুয়া।

প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনকারী দেশগুলোর তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান বিশ্বে দশম। জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলনে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও এলএনজি রফতানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় দেশটি দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। তালিকায় কাতারকে ছাড়িয়ে শীর্ষ অবস্থানে যাওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে অস্ট্রেলীয় সরকার। এর অংশ হিসেবে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন রফতানি বাজার খোঁজা হচ্ছে। এর সুফলও মিলতে শুরু করেছে।

দেশটির সরকারি পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি ২০১৮-১৯ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার (স্থানীয় মুদ্রা) বা ২ হাজার ২২০ কোটি ডলারের এলএনজি রফতানি হতে পারে। প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০ মৌসুমে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি বাবদ অস্ট্রেলিয়ার আয় আরো ৮৪০ কোটি ডলার বেড়ে ৩ হাজার ৬০ কোটি ডলারে (৪ হাজার ২৪০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার) পৌঁছতে পারে।

মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি চাহিদার কারণে আগামী দিনগুলোয় অস্ট্রেলিয়া থেকে এলএনজি রফতানিতে চাঙ্গাভাব বজায় থাকতে পারে। একই সঙ্গে জ্বালানি পণ্যটির বাড়তি দাম অস্ট্রেলিয়ার রফতানি আয়ে অতিরিক্ত ডলার যুক্ত করতে পারে।

অস্ট্রেলিয়া থেকে রফতানি হওয়া খনিজ ও জ্বালানি পণ্যগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে এলএনজি। দেশটির শীর্ষ রফতানি পণ্য কয়লা। আগামী দিনগুলোয় কয়লা রফতানি বাবদ দেশটির আয় কমতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার সরকারি পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ মৌসুমে কয়লা রফতানি করে দেশটি ৪ হাজার ৩৯০ কোটি ডলার (৬ হাজার ৮০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার) আয় করতে পারে, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ১৮ শতাংশ কম।

মন্দাভাবের ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০ মৌসুমে কয়লা রফতানি করে দেশটির আয় আরো কমে ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে (৪ হাজার ৯৯০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার) নেমে আসতে পারে। এভাবে কমতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ রফতানি পণ্যের তালিকায় কয়লাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে এলএনজি।

এ বিষয়ে মেলবোর্নভিত্তিক অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড ব্যাংকের (এএনজেড) বিশ্লেষক স্টুয়ার্ট মেয়ার বলেন, অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের শীর্ষ কয়লা রফতানিকারক দেশ। তবে দেশটি থেকে কয়লা রফতানি ক্রমে কমছে। বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার এলএনজি রফতানি খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির রফতানি পণ্যের তালিকায় কয়লাকে ছাড়িয়ে অচিরেই এলএনজির নাম উঠতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার এলএনজি রফতানি খাতের এ বিকাশ কাতারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দোহার বিরুদ্ধে সৌদি আরব ও মিত্রদের চলমান অবরোধ কাতারের এলএনজি রফতানি খাতে প্রতিবন্ধকতার জন্ম দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে জ্বালানি পণ্যটির রফতানিকারকদের তালিকায় শীর্ষ অবস্থান দখলের লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়া এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে বলে জানান মেয়ার।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, দোহার বিরুদ্ধে অবরোধকে কাজে লাগিয়ে এলএনজির রফতানি বাড়াতে এরই মধ্যে এ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে অস্ট্রেলিয়া। বাড়ানো হয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলন। সব মিলিয়ে এলএনজির বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্য এখন অস্ট্রেলিয়ার অনুকূলে রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০২০ সাল নাগাদ এলএনজি রফতানিতে কাতারকে ছাড়িয়ে শীর্ষে অবস্থান করতে পারে অস্ট্রেলিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *