ক্লাউড কম্পিউটিং উন্নয়ন খাতে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে আলিবাবা
ক্লাউড কম্পিউটিং গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) খাতে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে চীনভিত্তিক ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা। ডিএএমও বা ডিসকভারি, অ্যাডভেঞ্চার, মোমেন্টাম অ্যান্ড আউটলুক একাডেমির অংশ হিসেবে আলিবাবা এ বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়েছে। এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সাতটি নতুন ল্যাব। এর দুটি চীনে এবং বাকি পাঁচটি সিঙ্গাপুর, মস্কো, সিয়াটল ও সিলিকন ভ্যালিতে চালু করা হবে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিক ক্লাউড ব্যবসায় নিজেদের দখল বাড়ানোর প্রত্যাশা করছে। খবর অ্যানালিটিকস ইন্ডিয়া।
বিনিয়োগ পরিকল্পনা ও ক্লাউড কম্পিউটিং প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মেধাবীদের নিয়োগ দেবে আলিবাবা। ডাটা ও ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ডাটা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) উন্নয়নে গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে কেন এ বড় অংকের এ বিনিয়োগ পরিকল্পনা?
এআই ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসায় বড় ধরনের উল্লম্ফনের প্রত্যাশা করছে আলিবাবা। এরই মধ্যে তারা ৬০টি রোবট নিয়ে ‘স্মার্ট ওয়্যারহাউজ’ চালু করেছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এর ফলে তাদের উৎপাদন প্রায় ৩০০ শতাংশ বেড়েছে। এ প্রকল্প সফল হলে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন হার আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে। কারণ ক্লাউড কম্পিউটিং প্রকল্পের কারণে প্রতিষ্ঠানটির অনেক কর্মী ছাঁটাই হতে পারেন।
২০০৯ সালে ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসায় প্রবেশ করে আলিবাবা। এর তিন বছর পর মার্কিন ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন তার ক্লাউড বিভাগ ‘অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস’ বা এডব্লিউএস চালু করে। তবে এ ব্যবসার প্রবৃদ্ধিতে আলিবাবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে অ্যামাজন। বর্তমানে ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসা থেকে এক প্রান্তিকে আলিবাবার রাজস্ব আসছে ২৫ কোটি ডলারের বেশি। অন্যদিকে একই সময়ে এডব্লিউএসের রাজস্ব ৪১০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীনের ক্লাউড বাজার দ্বিগুণের বেশি বাড়ছে। এ বাজারে এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য দখল রেখেছে আলিবাবা। ক্লাউড কম্পিউটিং গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পে আলিবাবার নতুন বিনিয়োগের ফলে এ বাজারে প্রতিষ্ঠানটির দখল আরো বাড়বে। এর ফলে আলিবাবার স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বী টেনসেন্ট ও চায়না টেলিকমের জন্য বাজারে দখল বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে।
আলিবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান জ্যাক মা বলেছেন, আইবিএম, মাইক্রোসফট কিংবা অন্য কোনো প্রযুক্তি কোম্পানির গবেষণা ল্যাব কৌশলকে তারা অনুকরণ করতে চান না। তাই এ খাতের উন্নয়নে তারা নতুন বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন।
আলিবাবার সাম্প্রতিক উন্নয়নে এটা স্পষ্ট হয়েছে, এডব্লিউএস এবং অন্য ক্লাউড প্রযুক্তি সেবাদাতাদের দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী চীনা প্রতিষ্ঠানটি। তবে আলিবাবা গ্রুপের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আলিবাবা ক্লাউডের প্রেসিডেন্ট সিমন হু কম্পিউটিং সম্মেলনের এক ফাঁকে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে জানিয়েছিলেন, তারা অ্যামাজনকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছেন। কারণ তিন বছরে আমাদের বেঞ্চমার্ক বেড়েছে।
বৈশ্বিক বাজার বিশেষ করে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলকে গুরুত্ব দিচ্ছে আলিবাবা। প্রতিষ্ঠানটি ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় নতুন দুটি তথ্যকেন্দ্র চালু করেছে। বৈশ্বিক বাজার সম্প্রসারণ এর ক্লাউড ব্যবসার প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
জ্যাক মা জানান, ডিএএমওর মাধ্যমে আলিবাবা গ্রুপ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারবে। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী দুই দশকের মধ্যে জ্যাক মা আলিবাবাকে বিশ্বের বৃহৎ কোম্পানি হিসেবে দেখতে চান। এ সময়ের মধ্যে তিনি ১০ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রত্যাশা করছেন।
জ্যাক মা বলেন, আলিবাবার প্রযুক্তি গবেষণার লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিক দায়বদ্ধতা। আমরা শুধু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গবেষণা করি না। আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনের মূলে রয়েছে জাতি ও যুগের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এদিকে চীনের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশনের পক্ষ থেকে গত বুধবার জানানো হয়েছে, চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (সিডিবি) সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে তারা। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে ব্যাংকটি ডাটা, ক্লাউড কম্পিউটিং ও স্মার্টসিটি প্রকল্পে ১০ হাজার কোটি ইউয়ান (১ হাজার ৪৬০ কোটি ডলার) বিনিয়োগ করবে। ডিজিটাল অর্থনীতির লক্ষ্যে চীন এমন পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে।