কোন বয়সে হাড় ক্ষয় বেশি হয়

হাড়ের ক্ষয়রোগ বা অস্টিওপরোসিস একটি প্রচলিত রোগ। এটি প্রতিরোধে সতর্ক থাকা জরুরি।এ বিষয়ে কথা বলেছেন ময়মনসিংহ কমিউনিটি বেইজ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের অর্থসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ চৌধুরী।

প্রশ্ন : হাড়ের ক্ষয়রোগ-এই রোগের জন্য কারা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর : অস্টিওপরোসিস হলো হাড়ের ক্ষয়জনিত রোগ। এখানে দুটো জিনিস ঘটে। একটি হলো হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। আর হাড়ের যেই গঠন থাকে সেখানে সমস্যা দেখা যায়। যার জন্য হাড় দুর্বল হয়ে যায়। এতে দেখা যায় খুব অল্প আঘাতের জন্য যে কারো হাড় ভেঙে যেতে পারে। এটা সাধারণত বয়স্কদের বেশি হয়। বিশেষ করে মনোপোজের পর মেয়েদের এটি বেশি হয়। অর্থাৎ ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মহিলাদের এটি বেশি হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রেও হতে পারে। এ ছাড়া ৩০ বছরের ক্ষেত্রে অনেক সময় হয়ে থাকে। সাধারণত ছোটবেলা থেকে যাদের ডায়েটারি সমস্যা থাকে, যারা কম কাজ করে, তাদের ক্ষেত্রে অস্টিওপরোসিস রোগটি হতে পারে।

এটা সাধারণত নীরব ঘাতক। এর সাধারণত খুব একটি লক্ষণ বা উপসর্গ আমরা প্রথমে বুঝতে পারি না। যখন দেখা যায় আমরা কোনো কারণে এক্সরে করি, তখন হাড়ের অস্টিওপরোসিসটা বোঝা যায়। সাধারণত হাড়ের করটেক্স পাতলা হয়ে যায় এবং হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। যার জন্য অনেক সময় রোগটি নির্ণয় করতে পারি। অনেক সময় দেখা যায় রোগীরা বাথরুমে যাওয়ার পর দেখা যায় অল্প একটু আঘাত পেল অথবা কারপেটের ভেতর যদি হোঁচট খায় দেখা যায় হাড় ভেঙে গেছে। সাধারণত যেটুকু আঘাতে একজন মানুষের হাড় ভেঙে যাওয়ার কথা নয়, সেই অল্প আঘাতেও হাড় ভেঙে যেতে পারে।

ডা. মামুনুর রশীদ চৌধুরী।
প্রশ্ন : কোন বয়স থেকে হাড়ক্ষয় বেশি হয় এবং  কখন তার পরীক্ষা করে দেখা উচিত যে অস্টিওপরোসিস হয়েছে কি না?

উত্তর : ইদানীংকালে দেখা যায়, ৩০ বা ৩৫ বছরের পর থেকেই রোগটি শুরু হতে পারে। সাধারণত হয় প্রায় ৫০ বছর থেকে। এই বয়সে সাধারণত অস্টিওপরোসিস হতে থাকে। হাড়ের উৎপাদন কম হয়, ক্ষয় বেশি হয়। সেই ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত তাদের বলতে পারি, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেগুলো রয়েছে, বিশেষ করে মাছের কাঁটা চিবিয়ে খাওয়া। আরেকটি হতে পারে ক্যালসিয়াম নিয়মিত খেতে পারি এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেগুলো রয়েছে এগুলো আমরা খেলে সাধারণত অস্টিওপরোসিস কিছুটা প্রতিরোধ হবে। এ ছাড়া তার নিয়মিত যে কার্যক্রম সেগুলো করা উচিত।

প্রশ্ন : একজন মানুষের যদি অস্টিওপরোসিস হয় সে ক্ষেত্রে আপনি ওষুধের কথা বলছিলেন, আমরা জানি এই রোগীদের যদি হাড় ভেঙে যায়, সেটার চিকিৎসাও জটিল। সহজে জোড়া লাগতে চায় না, সময় বেশি লাগে। সেই জন্য তার অস্টিওপরোসিসকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য, এই ওষুধ দেওয়া ছাড়া অর্থাৎ ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি যেটা বললেন– এর বাইরেও কী তার আর কোনো চিকিৎসা প্রয়োজন রয়েছে?

উত্তর : খুব একটা বেশি প্রয়োজন নেই। শারীরিক কার্যক্রমটা যদি ঠিকমতো করে, আর যাদের মেনোপজ হয়ে যায় তারা যদি হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নিতে থাকে তাহলে ভালো থাকে। হরমোন রিপ্লেসমেন্ট  থেরাপি পাঁচ বছর পর্যন্ত নিতে পারে। এরপর আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পারি, তার অস্টিওপরোসিসটা কী অবস্থায় রয়েছে। সে অনুযায়ী আবার যদি দরকার হয় তাহলে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করতে হবে। এ ছাড়া আরো কিছু নতুন ওষুধ এসছে সেগুলো খেতে পারে। এই ওষুধগুলো নিলে অস্টিওপরোসিসটা অনেক প্রতিরোধ করা যাবে। বিশেষ করে অস্টিওপোরোসিসের জন্য যে তার হাড়টা ভেঙে যায় সে জিনিসগুলো অনেকটাই প্রতিরোধ করতে পারব। এ ছাড়া যদি আমরা অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করতে যাই ডায়েটের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শারীরিক কার্যক্রম করতে হবে। ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। প্রয়োজনের তুলনায় কম ওজন থাকলেও সাধারণত অস্টিওপরোসিস হতে পারে।

এ ছাড়া যদি সেকেন্ডারি কোনো কারণ থাকে সেগুলোও আমাদের খুঁজতে হয়। যেমন হাইপারপেরাথাইরয়েডিজম থাকে, র্দীঘ মেয়াদি যদি সে অ্যালকোহল খায়, স্ট্যারেয়েড নিয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রেও তার অস্টিওপরোসিস হয়ে থাকে। কিছু কিছু পরীক্ষা আছে, যেমন ডেক্সা একটি পরীক্ষা আছে , সেটা দেখে বোঝা যায় কতখানি ক্ষয় হয়েছে।

প্রশ্ন : একজন মানুষের অস্টিওপরোটিক পরিবর্তন হলে এক্স-রে করে বোঝেন, তবে তার ঘনত্ব কতখানি কমল সেটা কী বোঝার কোনো উপায় আছে বা এর প্রয়োজন আছে কি?

উত্তর : সেটার প্রয়োজন আছে। আমি যেটা বললাম কিছুক্ষণ আগে ডেক্সা, সেটা স্বাভাবিক তরুণ প্রাপ্ত বয়স্কদের থেকে ২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার আদর্শ হিসাব হয়, সেই ক্ষেত্রে আমরা ধরব অস্টিওপরোসিস। তার চেয়ে বেশি হলে অস্টিওপেনিয়া, আর এর থেকে কম থাকলে এটি স্বাভাবিক।

প্রশ্ন : একজন মানুষের, বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্ব বা একটু প্রবীণ তাদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কী, অস্টিওপরোসিস হলেও সে যেন দুর্ঘটনায় আহত না হয়? কী কী সতর্কতা অবলম্বন করবে সে?

উত্তর :  যারা সাধারণত বয়স্ক থাকে, তাদের পেশি কিছুটা দুর্বল থাকে, হাড় ক্ষয় থাকে— সেক্ষেত্রে তারা বিশেষ করে বাথরুম ব্যবহার করার সময়, একটু সাবধাণতার সাথে যেতে হবে। যাতে কোনো ধরনের হোচট না খায়। এ ছাড়া ঘরে চলাফেরা করার  সময় যেন কারপেটের আঘাত না পায়, এই জিনিসটি সে খেয়াল করবে। এ ছাড়া নিয়মিত কিছু কার্যক্রম রয়েছে সেগুলো করবে। এতে হাড় ভালো থাকবে এবং অস্টিওপরোসিস অনেকটাই প্রতিরোধ করা যাবে। একই সঙ্গে তাকে হাড়ের যত্ন নিতে হবে।

সুত্রঃ NTV

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *