কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে
কৃষিপণ্যের বৈশ্বিক বাজারকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত। যুদ্ধের প্রভাবে প্রধান প্রধান কৃষিপণ্যের দাম বর্তমানে রেকর্ড সর্বোচ্চে অবস্থান করছে। সারসহ অন্যান্য উৎপাদন উপকরণ ব্যয় আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। ইউরোস্ট্যাটের এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ইউরোস্ট্যাটের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কৃষি খাতে ব্যবহূত পণ্য ও সেবার গড় দাম ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে বেড়েছে। এর মধ্যে সার ও মাটির উর্বরতা বাড়ানোর উপকরণের দামই বেড়েছে ২১ দশমিক ২০ শতাংশ। এ খাতে ব্যবহূত জ্বালানি ও লুব্রিক্যান্টের দাম বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে পশুখাদ্যের দাম ৯ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়েছে। প্রথম প্রান্তিকে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের গড় দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ।
রাশিয়া ও ইউক্রেন কৃষিপণ্যের নেতৃস্থানীয় রফতানিকারক দেশ। কিন্তু চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে সার ও ভোজ্যতেল রফতানি বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে বছরের শুরুর দিকেই গম, সয়াবিন ও ভুট্টার আন্তর্জাতিক বাজারদর রেকর্ড সর্বোচ্চের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ সার রফতানিকারক দেশ। অন্যদিকে ইউক্রেন ভুট্টা ও সূর্যমুখী তেল রফতানিতে নেতৃস্থানীয়।
তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সার ও মাটির উর্বরতা বর্ধকের দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অন্যদিকে জ্বালানি ও লুব্রিক্যান্টের দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৫ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়েছে। দানাদার খাদ্যশস্য ও জ্বালানির ঊর্ধ্বমুখী দামের প্রতিফলন দেখা গিয়েছে পশুখাদ্যের দামেও। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পশুখাদ্যের দাম ২২ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়েছে।
ইউরোস্ট্যাট বলছে, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে দানাদার খাদ্যশস্য, তেলবীজ, মাংস ও দুধসহ কৃষিপণ্যের দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৪০ থেকে ৫১ দশমিক ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
এদিকে ২০২১-২২ মৌসুমে বৈশ্বিক খাদ্যশস্য উৎপাদন আগের মৌসুমের তুলনায় ৩ শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাস মিলেছে। উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করবে গম ও ভুট্টার ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইনস কাউন্সিল (আইজিসি) কর্তৃক প্রকাশিত গ্রেইন মার্কেট প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আইজিসি বলছে, এ মৌসুমে সরবরাহ বৃদ্ধির হার খাদ্যশস্যের ব্যবহারকে ছাড়িয়ে যাবে। মৌসুমের শেষ নাগাদ প্রাক্কলিত মজুদের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬০ কোটি ৭০ লাখ টনে, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি। ২০১৬-১৭ মৌসুমের পর এবারই প্রথম মজুদ বাড়তে যাচ্ছে।
আইজিসির প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২১-২২ মৌসুমে রেকর্ড খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ২২৯ কোটি টনে, যা ২০২০-২১ মৌসুমে উৎপাদিত ২২২ কোটি টন খাদ্যশস্যের চেয়ে বেশি।
তবে উৎপাদন উপকরণ যে হারে বাড়ছে তাতে কৃষকরা লোকসানের আশায় উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা বিকল্প পণ্যের দিকে ঝুঁকতে পারেন। পাশাপাশি খাদ্যশস্যের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এ পরিস্থিতি কত দিন স্থায়ী তা নির্ভর করছে যুদ্ধের ওপর।
২০২১-২২ মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক রফতানি পূর্বাভাস কমিয়েছে আইজিসি। সংস্থাটি বলছে, মৌসুম থেকে রফতানির পরিমাণ ৪১ কোটি ৭০ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ২ শতাংশ কম। আইজিসির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০২২-২৩ মৌসুমে খাদ্যশস্যের বাণিজ্য আরো কমে ৪০ কোটি ৫০ লাখ টনে নামতে পারে।