কিডনির রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে যেসব ভুলে
অসচেতনতা বা নিয়মের বাইরে গিয়ে গড়ে তোলা কিছু অভ্যাস কখনো কখনো সুস্থতার লাগাম টেনে অসুস্থতার জোয়াল চাপিয়ে দেয়। দিনে দিনে গড়ে তোলা অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো ভয়াবহ রোগের জন্ম দিতে পারে, যেমন- কিডনি রোগ।
ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনের মতে, বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১০ শতাংশ বিভিন্ন কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত এবং প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে।
ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যবস্থা। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ২০ লক্ষ কিডনি রোগী এই চিকিৎসা সুবিধা গ্রহণ করে সুস্থ জীবনে পুনরায় ফিরে আসছে। তবে আক্রান্তের তুলনায় এই সংখ্যাটি নগন্য। এই সংখ্যার মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিই বিশ্বের উন্নত দেশ এবং উচ্চ আয়ের দেশ, যেমন-যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, ব্রাজিল বা ইতালির অধিবাসী।
গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ স্টাডি, ২০১০ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে রোগমৃত্যুর কারণ হিসেবে কিডনি রোগের অবস্থান ছিল ২৭তম যা ২০১০ সালে এসে দাঁড়িয়েছিল ১৮তম অবস্থানে।
২০১৮ সালে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট রোগমৃত্যুর ২.১৮ শতাংশ এর জন্য দায়ী কিডনি ডিজিজ এবং বিশ্বে এই রোগে আক্রান্তের র্যাংকিং অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ৯৪তম।
ডায়ালাইসিস এবং কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হয় তা মধ্যম আয়ের দেশের রোগীদের পরিবারের উপর একটি বিশাল বোঝাস্বরূপ। আর নিম্ন আয়ের দেশের অধিবাসীদের জন্য এই চিকিৎসা ব্যবস্থা একদম নাগালের বাইরে।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের তথ্যমতে, ৬৫ বছরের বেশি প্রতি ৫ জন পুরুষে ১ জন এবং ৪ জন নারীতে ১ জন কিডনি রোগে আক্রান্ত।
কিডনিকে সুস্থ রাখতে হলে যে বদঅভ্যাসগুলোকে বিদায় জানাতে হবে
জেনে বা না জেনে এই কাজগুলো নিয়মিত করার ফলে সুস্থ কিডনির উপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে যা এক পর্যায়ে জটিল কিডনির কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে কর্মরত বিশিষ্ট কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞ, প্রফেসর ডা. এম এ সামাদের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিডনি রোগের কারণ হিসেবে মানুষের বেশকিছু অভ্যাসকে দায়ী করেছেন।
খাবারে অতিরিক্ত লবণের ব্যবহার
খাবারে লবণের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়। এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কিডনিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
‘প্রসেসড ফুড’ গ্রহণ
ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনের গবেষকদের মতে, প্রসেসড ফুড, যেমন-বাটারমিল্ক, চীজ, টমেটো প্রোডাক্ট, ক্যানড ভেজেটেবলস, ভেজেটেবল জুস ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম এবং ফসফরাস থাকে। ফসফরাস কিডনিতে ‘ক্যালসিফিকেশন’ কে ত্বরান্বিত করে এবং ধিরে ধিরে কিডনিকে অকেজো করে ফেলে।
পর্যাপ্ত পানি পান না করা
কিডনিকে সুস্থ রাখতে এবং স্বাভাবিক রেচন ক্রিয়া বজায় রাখতে একজন ব্যক্তির প্রতিদিন গড়ে ১.৫ থেকে ২ লিটার পানি পান করা উচিত। শরীরে পর্যাপ্ত পানির অভাব হলে তা প্রথমেই কিডনির উপর চাপ ফেলে।
লাল মাংস
প্রাণিজ আমিষ রক্তে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসিড তৈরি করে। এই উচ্চমাত্রার অ্যাসিড কিডনিতে ‘অ্যাসিডোসিস’ করে এবং কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
মানুষের ‘স্লিপ-অ্যাওয়াক-সাইকেলের’ দ্বারা কিডনির রেচন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব হলে কিডনির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যহত হয়।
অতিরিক্ত চিনি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ
অতিরিক্ত চিনি বা চিনি সমৃদ্ধ খাবার খেলে তা থেকে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে, কিডনি রোগের জন্য দুটিই অন্যতম প্রধান প্রভাবক হিসেবে থাকতে পারে।
ধূমপান
ধূমপান শুধু ফুসফুস বা হৃদপিণ্ডের জন্যই ক্ষতিকারক নয় বরং কিডনির জন্যও অশনি সংকেত স্বরূপ। যারা ধূমপান করেন তাদের মূত্রে প্রোটিনের উপস্থিতি পাওয়া যায় যা কিডনিকে বিকল করে দিতে পারে।
অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান
নিয়মিত অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান ক্রনিক কিডনি ডিজিজের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় অনেকাংশে।
মাত্রাতিরিক্ত ব্যথানাশক ঔষধ সেবন
ব্যথানাশক ঔষধ, যেমন নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামাটরি ড্রাগ বা অ্যানালজেসিক জাতীয় ঔষধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বা অতিরিক্ত ডোজে মাঝে মাঝে সেবন করলে তা কিডনির জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অপর্যাপ্ত কায়িক শ্রম
দীর্ঘসময় একভাবে বসে থাকলে বা পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রমের অভাবে হজম শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রক্তচাপের উপর প্রভাব ফেলে। এ দুইয়ের সমন্বয় খুব মারাত্মকভাবে কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।