কাশ্মীরের ক্ষতি ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি
বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও রাজ্য ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে গত আগস্ট থেকে ভারত সরকার কাশ্মীরকে অবরুদ্ধ করে রাখায় উপত্যকার ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। অঞ্চলটির মূল বাণিজ্য সংস্থা এ হিসাব জানিয়ে বলেছে, এই ক্ষতির জন্য তারা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করছে।
গত আগস্টে পূর্ব ভারতের পাহারবেষ্টিত ‘রাজ্য’ জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রুপান্তরিত করে ক্ষমতাসীন মোদি সরকার। তারপর অবরুদ্ধ করে রাখা হয় উপত্যকাটিকে। মোবাইল সেবাসহ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় সকল ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই বিপুল এই ক্ষতির মুখে পড়েছে ভারত নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলটি।
কাশ্মীর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (কেসিসিআই) বলছে, হঠাৎ এ পদক্ষেপে অচল হয়ে পড়ে কাশ্মীরের অর্থনীতি। আর্থিক ব্যবস্থা পুরো ভেঙে পড়ে। এছাড়া প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্তে সংঘাত শুরু হওয়ায় আরও ধীর হয়ে যায় অর্থনীতির চাকা। সব মিলেয়ে উপত্যকাকে মারাত্মক রকম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়তে হয়।
তবে উপত্যকার ওই বাণিজ্য সংস্থাটি বলছে, যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে তা অধরা থেকে গেলেও বিদ্রোহীদের প্রতিহিংসামূলক হামলার ভয় থেকে রক্ষা পেতে সাধারণ মানুষ প্রতিরোধের অংশ হিসেবে দোকান ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার মতো যে কাজ করেছে এর জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ।
কাশ্মীরের এই বাণিজ্যিক সংগঠনটি বলছে, বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাশ্মীরের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১০০ বিলিয়ন রুপি। মার্কিন ডলারে তা ১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন। কেসিসিআই-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসির খান বলেন, এখন এই ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতের কাছে আবেদন জানাবো যেন তারা কাশ্মীরের বাইরের কোনো সংস্থাকে এই আর্থিক ক্ষতি পরিমাপের জন্য নিয়োগ করে। কেননা এটা আমাদের সাধ্যের বাইরে। উপত্যকায় টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো আনুমানিক হিসাব করতে পারিনি।’
ভারতের স্বরাষ্ট্র এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে জানতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্ত্রণালয়ই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে গতকাল ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিষাণ রেড্ডি জানান, গত ৫ আগস্ট থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত কাশ্মীরে ৭৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিশেষ মর্যাদা বাতিলের আগে নিরাপত্তার অজুহাতে ভারত সরকার বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকায়িত এলাকা কাশ্মীরে অতিরিক্ত আরও ৫০ হাজার সেনা পাঠায়। বন্ধ করে দেয়া হয় মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা করা হয়। সম্প্রতি কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলেও গোটা কাশ্মীর এখনো ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন।
কৃষিকাজ, ফল উৎপাদন, উদ্যানপালন এবং কারুশিল্পে এই অচলাবস্থা বিশলা আঘাত হেনেছে। উপত্যকার রফতানি নির্ভর অর্থনীতিতে এসই মূল অবদান রাখে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া সেখানকার অনেকে অন্যতম আয়ের উৎস আপেল বিক্রিও বন্ধ হয়ে যায়। যা বিরুপ প্রভাব ফেলে অর্থনীতিতে।
অবরুদ্ধের ১০৬ দিন কেটে গেলেও কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় শহর ও একসময় জম্মু-কাশ্মীরে প্রাদেশিক রাজধানী শ্রীনগরে এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও তা আগের মতো নয়। সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ী বিবেক ওয়াজির বলেন, ‘কত মাস ধরে যে আমি এখানে কোনো স্থিতিশীলতা দেখি না। এখানে শুধুই অনিশ্চয়তা।’