শিশুর কাশির হলে যা করবেন

স্টাফ রিপোর্ট

‘ধুর! শীতে তো বাচ্চার একটু হালকা সর্দি-কাশি হবেই, তাই বলে আবার ডাক্তার দেখাতে হবে নাকি? শুধু শুধু গাঁটের পয়সা খরচ। তার চেয়ে পাড়ার দোকান থেকে কাশির সিরাপ এনে খাওয়ালেই তো হলো। ঝামেলা শেষ।’ অনেকেই হয়তো এমনটা ভেবে থাকেন। তবে ঝামেলা এড়াতে বা অর্থ বাঁচাতে গিয়ে আপনি পড়তে পারেন আরেক ঝামেলায়। কারণ, বেশির ভাগ কাশির সিরাপই খুব ছোট শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে থাকে।

এসব সিরাপের কোনোটা মাত্রাতিরিক্ত ডোজে, আবার কোনোটা স্বাভাবিক মাত্রায় দিলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, কফ সিরাপগুলো শিশুর খিঁচুনি, ঝিমুনি, অস্বাভাবিক হৃদপন্দন, কিডনি ও লিভারের ক্ষতি করতে পারে।

১৯৬৯ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কফ সিরাপ খেয়ে ৫৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আর সর্দির ওষুধ অ্যান্টিহিস্টামিন খেয়ে মারা গেছে ৬৯ শিশু। অন্যদিকে, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের হিসাবমতে, ২০০৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কফ সিরাপ খেয়ে দেড় হাজার শিশুর বিভিন্ন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা হয়েছে।

এ কারণে এরই মধ্যে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দুই বছরের নিচের শিশুদের জন্য প্রেসক্রিপশন ছাড়া কাশির সিরাপ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। আর কানাডার স্বাস্থ্য সংস্থা হেলথ কানাডা ছয় বছরের নিচের শিশুদের জন্য প্রেসক্রিপশন ছাড়া কাশির সিরাপ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে।

বছরে একটি শিশু গড়ে ছয় থেকে দশবার সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হতে পারে। তাই বড়দের চেয়ে শিশুদের জন্য কফ সিরাপের বিক্রি বেশি। এই সুযোগে খ্যাতনামা কোম্পানির সঙ্গে অনেক অখ্যাত কোম্পানিও শিশুদের কফ সিরাপ বাজারে এনেছে।

এসবের মধ্যে হারবাল ও ভেষজ কাশির সিরাপও দেখা যায়। এই সিরাপগুলোর গায়ে অনেক ক্ষেত্রেই উপাদানের নাম লেখা থাকে না। তা ছাড়া এসবের ট্রায়াল বা প্রয়োগ-সংক্রান্ত কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয় না। মূলত এসব সিরাপ খেয়েই শিশুরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে।

শিশুদের অনেক কাশির সিরাপে হাইড্রোকার্বন থাকে। সাধারণত বুক ব্যথা ও কাশি দমনে এটা ব্যবহৃত হয়। তবে হাইড্রোকার্বন এক ধরনের নারকোটিক, যা শিশুদের জন্য ক্ষতিকর। আবার শিশুদের অনেক সিরাপে বড়দের কফ সিরাপের অনেক উপাদান, যেমন—গুয়াইফেনেসিন, সিউডোএফিড্রিন, ট্রাইপোলিডিন, ডেক্সট্রো মেথরফেন ইত্যাদি থাকে।

এসব উপাদানের সবগুলোই শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। কেউ কেউ ঘরে থাকা বড়দের কফ সিরাপ একটু ডোজ কমিয়ে বাচ্চাদের খাইয়ে দেন। আমেরিকান পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের (শিশু চিকিৎসকদের সংগঠন) পক্ষ থেকে এই পদক্ষেপকে বিপজ্জনক হিসেবে অবহিত করা হয়েছে।

শিশুর ঠান্ডাজনিত যে কাশি, তার বেশির ভাগই ভাইরাস সংক্রমণের জন্য হয়। নিজ থেকে কয়েক দিনেই এটা ভালো হয়ে যায়। তাই এই কাশিতে ওষুধের কোনো প্রয়োজন নেই। এই সময় বরং নাকে লবণ পানি বা নরসল ড্রপ দিন। মধু, গরম পানি, রং চা ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে।

এ সময় বুকের দুধ ও প্রচুর তরল খাওয়ানো গেলে এবং আলো-বাতাসপূর্ণ ঘরে রাখলে অল্প কদিনেই শিশু সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে শিশুর শ্বাসকষ্ট ও জ্বর থাকলে, বুক নিচের দিকে দেবে গেলে, খিঁচুনি হলে, কিছুই খাওয়ানো না গেলে কিংবা অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরমর্শ নিতে হবে। তবে নিজ থেকে কিংবা ফার্মেসির দোকানদারের পরামর্শে শিশুদের কাশির সিরাপ কখনো খাওয়ানো ঠিক হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *