কারগিল যুদ্ধের সেনা আসামে ‘বিদেশি’ হয়ে গেলেন জেলে

দুই দশক আগে কারগিল যুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হয়ে লড়াই করেছিলেন মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। অবসরের পর আসাম পুলিশের সীমান্ত শাখায় এএসআই হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি।

অথচ তিনিই নাকি বিদেশি নাগরিক! তাই সাবেক এই অনারারি লেফটেন্যান্টকে জেলে পাঠানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার ভারতের আসাম রাজ্যে এই ঘটনা ঘটে। দ্য হিন্দু অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

৫২ বছর বয়সী সানাউল্লাহ আসাম পুলিশের সীমান্ত শাখায় এএসআই হিসেবে সন্দেহভাজন নাগরিক ও অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত, আটক, বিতাড়নের মতো কাজ করতেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আজ তাঁকেই ‘বিদেশি নাগরিক’ হিসেবে চিহ্নিত করে জেলে পাঠানো হলো।

ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের বিচারক মঙ্গলবার সানাউল্লাহকে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করেন। এই রায়ের পরই আসাম বর্ডার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়। তাঁকে বিদেশি বা অবৈধ অভিবাসীদের বন্দিশিবিরে রাখা হয়।

রায়ের বিরুদ্ধে গতকাল বুধবার সানাউল্লাহর পরিবার গুয়াহাটির হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে।

সানাউল্লাহর আত্মীয় মোহাম্মদ আজমল হক বলেন, এত বছর দেশের সেবার পর এই প্রতিদান পেলে তার চেয়ে হৃদয়বিদারক আর কিছুই হতে পারে না। কারগিল যুদ্ধে অংশ নেওয়াসহ ৩০ বছর সেনাবাহিনীতে থেকে দেশ রক্ষার জন্য এই পুরস্কার!

আজমল জানান, সানাউল্লাহর জন্ম আসামে, ১৯৬৭ সালে। ২০ বছর বয়সে ১৯৮৭ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ৩০ বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। ২০১৭ সালে অবসরে যান। অবসরের পর যোগ দেন বর্ডার পুলিশে।

রাজ্যের বকো ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল গত বছর সানাউল্লাহকে নোটিশ দেন। তিনি পাঁচটি শুনানিতে অংশ নেন।

ট্রাইব্যুনালে শুনানিতে একবার সানাউল্লাহ ভুল করে বলেছিলেন, তিনি ১৯৭৮ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। এই ভুলের ওপর ভিত্তি করেই তাঁকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করেন ট্রাইব্যুনাল। এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভোটও দিয়েছেন সানাউল্লাহ।

আজমল বলেন, সেনাবাহিনীতে সানাউল্লাহ সব প্রমাণপত্র আছে। মুখ ফসকে বলা ভুলকে প্রমাণ হিসেবে ধরা যায় না।

সানাউল্লাহ ‘বিদেশি’ চিহ্নিত হওয়ার তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলের নাম জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে পরিবারটির সদস্যদের আশা, তাঁরা উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *