কানের ময়লা পরিষ্কার করবেন কি করবেন না

কানের বিভিন্ন রোগব্যাধি হয়। তবে একটু সতর্ক থাকলে সেগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।  এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মনিলাল আইচ লিটু। বর্তমানে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের নাক কান গলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : কানে সাধারণত কী কী রোগ হয়ে থাকে?

উত্তর : আসলে কানের আমরা যেগুলো বেশি পাই, কানে ময়লা জমে, কানের ফাঙ্গাস। এ ছাড়া কানপাকা রয়েছে। এর আবার দুটি ধরন রয়েছে। একটি আছে সাধারণ, যেটি কানের ফুটোয় হয়; আরেকটি হলো কান ফুটো হয়, তবে তার সঙ্গে কলিস্টিটোমা থাকে। এটা জীবনঘাতী অবস্থাও তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া কানে কম শোনা, কানের বিভিন্ন ধরনের টিউমার, কানের যে ক্যানেল তার বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিকতা, এগুলোও পাওয়া যায়।

প্রশ্ন : কানের ভেতর ময়লা জমে কেন? এটা স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই কি পরিষ্কার হয়, নাকি পরিষ্কার করার প্রয়োজন আছে? অনেকে আবার পথেঘাটে কান পরিষ্কার করে। এটা কতখানি ক্ষতির কারণ হতে পারে?

উত্তর : এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর। পথেঘাটে যে কান পরিষ্কার করা হয়, এতে কানের আঘাতের হার অনেক বেড়ে যায়। একসময় কান ফুটো হয়ে, সংক্রমণ হয়ে, পর্দা ফুটো হয়ে যায়। এগুলো আমরা পেয়ে থাকি। পরে এলে আমরা চিকিৎসা করি। এ ধরনের চিকিৎসা আসলে খুব ক্ষতিকর। এগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত। এগুলো কুচিকিৎসা। প্রথমে বুঝতে হবে কানে ময়লা কেন জমে। কানে যে ময়লাটি জমে, সেটি কীভাবে পরিষ্কার হয়। আমরা যদি বহিঃকর্ণের দিকে প্রতিদিন এক মিলিমিটার করে চামড়া বাইরের দিকে আসে, ময়লা কানের স্বাভাবিক জিনিস। এটা স্বাভাবিকভাবে বের হয়ে আসে। শরীরের যত ছিদ্র রয়েছে, কোনোটা কি আমরা পরিষ্কার করি? আপনি যখনই ওখানে কোনো মুরগির পালক দিয়ে বা ম্যাচের কাঠি দিয়ে, সেপটিপিন দিয়ে, কোনো জিনিস দিয়ে যখন খোঁচাখুঁচি করবেন, তখন কিন্তু ওখানকার চামড়া আহত হয়। এতে ওর ওপর ফাঙ্গাস জমে। সেটা ওখানে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন ওখানে ময়লা জমতে থাকে এবং একসময় সেটি আটকে যায়। এ ছাড়া দুই ধরনের কানের ময়লা আছে। একটি হলো শুষ্ক ওয়াক্স, আরেকটি হলো ভেজা ওয়াক্স। আমাদের এ রকম অঞ্চলে সব হলো ওয়েট ওয়াক্স। এখানে পরিষ্কার করার কোনো প্রয়োজন হয় না। কিন্তু ককেশিয়ান লোকের মধ্যে শুষ্ক ওয়াক্সের প্রবণতা থাকে। তখন স্বাভাবিকভাবে আটকে যায়। তখন পরিষ্কার করার দরকার হতে পারে।

প্রশ্ন : তবে আমাদের এখানে তো এমনিতেই পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা। আমরা নিজেরাই যে কটনবাড দিয়ে খোঁচাই, এতে উল্টো ক্ষতি হতে পারে কি না?

উত্তর : অবশ্যই এটি ক্ষতি করে। কানের মধ্যে কোনো কিছু দিয়ে যদি আপনি খোঁচাখুঁচি করেন, স্বাভাবিক চামড়া যেটা থাকে, সেটাও তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কানে কেন কাঠি দেয়? কানে কাঠি দেয় এ কারণে বা কোনো কিছু দিয়ে খোঁচায় এ কারণে যে কানের মধ্যে তার চুলকায়। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের কানে ফাঙ্গাস আছে। কারণ, আমাদের পরিবেশে যে জলীয়বাষ্প থাকে বাতাসে, এটি ফাঙ্গাস তৈরি করার জন্য একটি উত্তম মাধ্যম। কানে আপনি যদি কোনো মলম দেন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কোনো মলম যদি দিনে দুবার কানে লাগিয়ে দেন, তাহলে কিন্তু এটি সেরে যায়। কিন্তু আমরা যেটি করি, নিজেরা কান পরিষ্কার করে, ওকে টেনে এনে পরিষ্কার করার চেষ্টা করি। তার কারণে ফাঙ্গাল স্পোর এগুলোর সংখ্যা আঘাতের কারণে আরো বেড়ে যায়। আরো বেশি ক্ষতি হয়।

সুত্রঃ NTV

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *