কাতার ও অস্ট্রেলিয়াকে ছাড়িয়ে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র

স্টাফ রিপোর্টার

বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে বিশ্বের শীর্ষ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রফতানিকারক দেশে পরিণত হয় যুক্তরাষ্ট্র। জ্বালানি সংকটে বিপর্যস্ত ইউরোপে সরবরাহের পরিমাণ অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বাড়ানোয় রফতানিতে শীর্ষে থাকা কাতার ও অস্ট্রেলিয়াকে ছাড়িয়ে যায় দেশটি। চলতি বছরও এ দুই দেশকে পেছনে ফেলে শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারকের মুকুট ধরে রাখতে সক্ষম হবে দেশটি।

তথ্য বলছে, গত বছর চীন ও এশিয়ার অন্যান্য দেশ এবং ইউরোপের বড় অর্থনীতিগুলো ভয়াবহ জ্বালানি সংকটে পড়ে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। বেড়ে যায় দাম। এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হতে শুরু করায় ধস নামে শিল্প উৎপাদনে। এসব অঞ্চলে যখন জ্বালানি সংকট চরমে, তখন মার্কিন মুলুকে সরবরাহ ছিল ভরপুর। আগামী বছরগুলোয়ও জ্বালানি সরবরাহে ঊর্ধ্বমুখিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

২০১৫ সালের পর থেকে প্রতি বছরই বিশ্বজুড়ে এলএনজির চাহিদা রেকর্ড পরিমাণ বাড়ছে। বিশেষ করে চীন ও এশিয়ার অন্যান্য দেশে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদায় উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। বৈশ্বিক এলএনজি চাহিদার একটি বড় অংশই পূরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। সাত বছর ধরে দেশটির এলএনজি রফতানি অব্যাহতভাবে রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। চলতি বছরও রফতানি ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।

মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি রফতানি দৈনিক ১ হাজার ১৫০ কোটি ঘনফুটে পৌঁছতে পারে। এটি আগামী বছরের বৈশ্বিক এলএনজি চাহিদার ২২ শতাংশের সমপরিমাণ। ওই বছর বৈশ্বিক চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে দৈনিক ৫ হাজার ৩৩০ কোটি ঘনফুটে। গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষকদের মতে, এ প্রক্ষেপণ সত্য হলে আগামী বছরগুলোয় কাতার ও অস্ট্রেলিয়াকে ছাড়িয়ে বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারক দেশের তকমা ধরে রাখবে যুক্তরাষ্ট্র।

তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ লাখ গৃহস্থালির জন্য প্রতিদিন ১০০ কোটি ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাসই যথেষ্ট। সে হিসাবে দেশটির স্থানীয় ব্যবহারের পর বড় পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানির জন্য উদ্বৃত্ত থেকে যায়। ২০২৫ সাল নাগাদ শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারক হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার সক্ষমতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এ সময়ের মধ্যে কাতারের দক্ষিণাঞ্চলের গ্যাসক্ষেত্র সম্প্রসারণ শেষে কার্যক্রম শুরু করতে সক্ষম হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সংশ্লিষ্টরা যদি নতুন নতুন এলএনজি রফতানি প্ল্যান্ট তৈরি করে, তবে কাতার ঘুরে দাঁড়ালেও যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলতে পারবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় এলএনজি রফতানিকারক শেনিয়ার এনার্জি সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বিপুল পরিমাণ দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি রফতানি চুক্তি করেছে। এর মধ্য দিয়ে কোম্পানিটি যে পরিমাণ আয় করবে, তা তাদের নতুন রফতানি প্ল্যান্ট তৈরিতে বড় ধরনের সহায়তা দেবে। দীর্ঘমেয়াদি এসব চুক্তির বেশির ভাগই করা হয়েছে চীনের সঙ্গে।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) নিকোস সাফোস বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে মার্কিন এলএনজি কেনার প্রতিশ্রুতি এড়িয়ে চলছিল চীন। অবশেষে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি কেনার পদক্ষেপ নিয়েছে।

ইআইএর দেয়া তথ্য বলছে, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ার দেশগুলোয় ব্যাপক এলএনজি রফতানি করে। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৩, চীনে ১৩ ও জাপানে ১০ শতাংশ এলএনজি রফতানি করা হয়েছে। ২০২০ সালেও এ তিন দেশ মার্কিন এলএনজির প্রধান রফতানি গন্তব্য ছিল।

সেন্টার ফর লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাসের (সিএলএনজি) নির্বাহী পরিচালক চার্লি রেইডল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রফতানি বাড়ানোয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণ এলএনজি সরবরাহ পাচ্ছে। নিম্নমুখী হয়ে উঠেছে দামও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *