কাতারের এলএনজি উৎপাদন নিম্নমুখী ধারায়
চলতি বছর কাতারের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) উৎপাদন কমেছে। বাজারে চলমান সংকট মোকাবেলায় আমদানিনির্ভর দেশগুলো উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানালেও তা বাস্তবায়নে সক্ষম হয়নি বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি উৎপাদক দেশটি। খবর অয়েলপ্রাইস ডটকম।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। দেশটিতে আগ্রাসনের প্রতিবাদে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা দেশগুলো। জ্বালানি আমদানিতে রুশ নির্ভরতা কমিয়ে আনতে তখন থেকেই জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এক্ষেত্রে বিকল্প বাজার খুঁজছে ব্লকটি। এ কারণেই কাতারকে এলএনজি উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
পণ্যবাহী জাহাজের তথ্য সমন্বয় করে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৩ কোটি ৫০ লাখ টন এলএনজি রফতানি করেছে কাতার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি ১০ লাখ টন কমেছে। নিম্নমুখী উৎপাদনে রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এদিকে উৎপাদন কমে যাওয়ার খবরের কয়েক মাস আগেই কাতার ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি নিশ্চয়তা চেয়েছিল, তারা যাতে স্পট মার্কেটে ইউরোপের বাইরে এলএনজি পুনরায় বিক্রি সীমিত করে। এছাড়া ২০১৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিসংক্রান্ত একটি তদন্ত সমাধান করারও আহ্বান জানোনো হয়েছে ইউরোপের প্রতি।
কিন্তু এরপর থেকে এলএনজি উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে আর কোনো কথা বলেনি কাতার। দেশটি এশিয়ার পরিবর্তে এলএনজি কার্গোগুলো ইউরোপের উদ্দেশে পাঠাচ্ছে। অঞ্চলটিতে রফতানি বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কাতার।
জার্মানি অর্থমন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক সম্প্রতি কাতার সফর করেছেন। এ সফরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেশটি থেকে অতিরিক্ত এলএনজি কার্গো নিশ্চিত করা। সফরকালে রবার্ট হ্যাবেক সাংবাদিকদের বলেন, কাতারে গ্যাস নিষ্কাশন বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। স্বল্পমেয়াদে দেশটি থেকে আমাদের আরো অনেক গ্যাস প্রয়োজন। এর মাধ্যমে আমরা রাশিয়ার সরবরাহকে স্থানান্তর করতে পারব।
গত বছর কাতার একটি এলএনজি সম্প্রসারণ প্রকল্পে চূড়ান্তভাবে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়, যা দেশটির বার্ষিক সক্ষমতা ৭ কোটি ৭০ লাখ টন থেকে বাড়িয়ে ১১ কোটি টনে উন্নীত করবে। কিন্তু ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের প্রকল্পটি ২০২৫ সালের আগে সম্পন্ন হবে না।
ব্লুমবার্গ জানায়, কাতারের বার্ষিক সক্ষমতা ৭ কোটি ৭০ লাখ টন। কিন্তু গত বছর দেশটি ৮ কোটি ৪০ হাজার টন এলএনজি রফতানি করতে সক্ষম হয়েছিল।
জার্মানির দুটি আমদানি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব টার্মিনাল দিয়ে সরবরাহকৃত এলএনজির চালান গ্রহণ করা হবে। কিন্তু গত মাসে জার্মানি ও কাতারের মধ্যকার দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তিসংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা বাধাপ্রাপ্ত হয়। কাতার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পরিকল্পনা করলেও জার্মানি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসার কথা ভাবছে।
এদিকে বিনিয়োগস্বল্পতা, ঊর্ধ্বমুখী দামসহ বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে এলএনজির বৈশ্বিক বাজার। এর মধ্যে ভয়াবহ সরবরাহ অনিশ্চয়তা তো রয়েছেই। অথচ প্রতিদিনই ব্যাপক হারে বাড়ছে জ্বালানিটির চাহিদা। অনিশ্চয়তা থেকে উত্তরণের জন্য কয়েক মাস ধরে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বাড়ানো হয়েছে, যা বাজারকে আরো চাপের মুখে ফেলেছে। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড গ্যাস কনফারেন্সে যুক্তরাজ্যভিত্তিক জ্বালানি মেজর শেল এনার্জির নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট স্টিভ হিল এসব কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, কার্বনশূন্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, জ্বালানি সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ ও সক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। তবে পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনা গেলে বাজার ইতিবাচক দিকে মোড় নিতে পারে। সেজন্য চাই পর্যাপ্ত বিনিয়োগ।
স্টিভ বলেন, আমাদের সবসময় ভোক্তা পর্যায় থেকে শুরু করা উচিত। বাজারদরের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ ভোক্তারা যে পরিমাণ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন তা আমাদের বুঝতে হবে। বর্তমানে ভোক্তারা যে অনিশ্চয়তার মধ্যে তা অনুধাবন করতে হবে।