কর্মসংস্থান সেবায় বেড়েছে, কৃষি ও শিল্প খাতে কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার

দেশে কর্মে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা কমেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চ সময়কালে কর্মসংস্থানে থাকা মানুষের সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১১ লাখ। এপ্রিল থেকে জুন সময়কালে এ সংখ্যা নেমেছে ৭ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজারে। তিন মাসে কর্মসংস্থান কমেছে ৩ লাখ ৯০ হাজার। গত বছরের তুলনায় কর্মসংস্থান কমেছে। ২০২২ সাল শেষে কর্মে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে এসব তথ্য এসেছে।

কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি কমেছে কৃষি খাতে। শিল্প খাতেও কিছুটা কমেছে। তবে সেবা খাতে বেড়েছে। শিল্প খাতে কমেছে প্রায় ১ লাখ। কৃষি খাতে কমেছে প্রায় ৮ লাখ। সেবা খাতে বেড়েছে প্রায় ৫ লাখ। অন্যদিকে পুরুষের চেয়ে নারীর কর্মসংস্থান কমেছে বেশি হারে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে নারীর কর্মসংস্থান আগের প্রান্তিকের চেয়ে কমেছে ৩ লাখ ৭০ হাজার। পুরুষের কমেছে ২০ হাজার। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিম্নগামী থাকার প্রভাব কর্মসংস্থানে পড়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।

কর্মে নিয়োজিত মানুষ কমলেও বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়েনি, বরং কমেছে। এর কারণ, মোট শ্রমশক্তি কমেছে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মোট শ্রমশক্তির সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯০ হাজার। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তা কমে ৭ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজারে নেমেছে। কমেছে ৪ লাখ ৯০ হাজার। অন্যদিকে শ্রমশক্তির বাইরের জনগোষ্ঠী বেড়ে গেছে। এ সংখ্যা ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ থেকে বেড়ে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯০০ হয়েছে। যারা কাজে নিয়োজিত নন এবং বেকার হিসেবেও বিবেচিত নন, তারা শ্রমশক্তির বাইরের জনগোষ্ঠী। যেমন– সাধারণ ছাত্র, অসুস্থ, বয়স্ক, কাজ করতে অক্ষম, অবসরপ্রাপ্ত ও গৃহিণীরা এর আওতায় পড়েন।

জরিপ অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৫ লাখ। আগের প্রান্তিকে ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার। বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। শ্রমশক্তির পরিমাণ কমে যাওয়ায় বেকারত্বের হার কমেছে। এর মানে এই নয়, কর্মসংস্থান পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় মোট কর্মসংস্থান কমে যাওয়া তুলনামূলক বেশি উদ্বেগের। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তিনি মনে করেন, দেশে শ্রমশক্তির আকার কমে যাওয়ার পেছনে বিদেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি একটি কারণ হতে পারে। এ ছাড়া কভিডের সময় শহর থেকে গ্রামে ফিরে যারা কৃষিতে নিয়োজিত হয়েছিলেন, তাদের একটি অংশ আবার শহরমুখী হয়েছেন। এ কারণে কৃষিতে কর্মসংস্থান কমতে পারে। যারা শহরে এসেছেন, তাদের একটি অংশ গিয়ে সেবা খাতে কাজ পেতে পারেন। অন্যদিকে শিল্প খাত অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক কারণে নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে। ডলার সংকটের কারণে অনেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনতে পারছে না। সার্বিকভাবে উৎপাদন ও বিনিয়োগে তেমন গতি নেই। এর ফলে শিল্প খাতে কর্মসংস্থান কমতে পারে। তাঁর মতে, বেকারত্বের যে সংজ্ঞা তা দিয়ে দেশের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি অনুধাবনের জন্য যথেষ্ট নয়।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে শ্রমশক্তিতে মানুষের অংশগ্রহণের হার ছিল ৬১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। পরের তিন মাসে তা কমে ৬০ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে। পুরুষের মধ্যে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৮০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অন্যদিকে নারীর অংশগ্রহণ ৪১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। বছরের প্রথম প্রান্তিকে পুরুষ ও নারীর হার ছিল যথাক্রমে ৮১ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং ৪১ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

বিবিএসের ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে ১৫ ও তার চেয়ে বেশি বয়সীদের তথ্য নমুনা এলাকায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে সংগ্রহ করা হয়। দেশের ৬৪টি জেলায় মোট ৩০ হাজার ৮১৬টি খানার তথ্য জরিপের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। দেশব্যাপী ১ হাজার ২৮৪টি নমুনা এলাকায় ২৪টি খানা দৈবচয়নের ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়েছে। শ্রমশক্তি বলতে কর্মে নিয়োজিত ও বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। কর্মে নিয়োজিত বলতে জরিপের আগের ৭ দিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে অথবা খানার নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছে এমন মানুষকে বোঝায়। বেকার বলতে জরিপের আগের ৭ দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টা কাজ করেননি; অথচ কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং গত ৩০ দিনে বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কোনো না কোনো কাজ খুঁজেছেন এমন মানুষকে বোঝায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *