করোনা মোকাবেলায় জার্মানির বৃহত্তম ‘সহায়তা প্যাকেজ’ ঘোষণা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সবচেয়ে বড় আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণার বিষয়ে পরিকল্পনা করছে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের সরকার। নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৮২ হাজার ২০০ কোটি ইউরোর এ প্যাকেজের মাধ্যমে দেশটির বিভিন্ন খাতে অর্থায়ন করা হবে। আংশিক জাতীয়করণের পাশাপাশি নিশ্চিত করা হবে ঋণ সুবিধা ও খণ্ডকালীন চাকরিতে বাধ্য হওয়া শ্রমিকদের অতিরিক্ত মজুরি। একই সঙ্গে সরকার তার চিরাচরিত ‘ঋণবিরোধী’ দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আনবে। খবর এএফপি।

সহায়তা প্যাকেজের খসড়া বিল অনুযায়ী, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজেট সুষম রাখার বিষয়ে একরোখা মনোভাব পরিত্যাগ করতে যাচ্ছে মেরকেল সরকার। এর পরিবর্তে সরকার তার বার্ষিক ঋণগ্রহণের আইনি সীমা বৃদ্ধির জন্য সংসদের অনুমতি আদায়ের চেষ্টা করবে। ২০২০ সালের জন্য মেরকেল সরকার ঋণ চাইবে ১৫ হাজার ৬০০ কোটি ইউরো, যা বার্ষিক ঋণসীমা ১ হাজার ইউরোর চেয়ে অনেক বেশি।

জার্মানির তথাকথিত ‘ঋণসীমা’ সংবিধানে যুক্ত হয় ২০০৯ সালে, যেখানে ফেডারেল বাজেট ঘাটতির সীমা নির্ধারণ করা হয় জিডিপির শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ। সংবিধান অনুযায়ী, প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা অন্য কোনো বিশেষ পরিস্থিতি দেশটির অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দিলে এ সীমা অতিক্রম করা যাবে। তবে মেরকেলের পার্টি বরাবরই ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়ে বদ্ধপরিকর।

কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের কারণে জার্মানি বর্তমানে থমকে আছে। কর্মীদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো, বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ দোকান। এ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে প্রয়োজনীয় যেকোনো কিছু করার প্রতিজ্ঞা করেছেন মেরকেল। গত সপ্তাহে তিনি বলেন, আমরা এ সংকট মোকাবেলায় করণীয় সবকিছু করব। এর ফলে বাজেট কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা পরে দেখা যাবে। বর্তমানে মূল লক্ষ্যই হলো ভাইরাস সংকটের অবস্থান।

নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাজেট নিয়ে মেরকেলের এ চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। জার্মানির জনজীবন থমকে যাওয়ায় এবার দেশটির কর আদায় হবে কম। ২০২০ সালে যে পরিমাণ আদায়যোগ্য কর হিসাব করা হয়েছিল, বাস্তবে তার চেয়ে আদায় কম হবে ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ইউরো। মূলত, সংক্রমণ রোধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নেয়া পদক্ষেপের কারণে অর্থনীতি ও শ্রমবাজার মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এমনকি এ বৈশ্বিক মহামারী ও তা প্রতিরোধে নেয়া পদক্ষেপ কতদিন স্থায়ী হবে, সে বিষয়েও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় দেশের ব্যবসা খাত যাতে নিম্নমুখী না হয়, সেজন্য ৪০ হাজার কোটি ইউরো বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ অর্থ দিয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ কিংবা সেগুলোয় অর্থায়নের মধ্য দিয়ে আংশিক রাষ্ট্রীয়করণের উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। অর্থায়নের এ পরিকল্পনা সংসদে উত্থাপনের আগে স্থানীয় সময় সোমবার ক্যাবিনেটে আলোচনা হবে।

জার্মান সরকারের এ সহায়তা প্যাকেজের আওতায় যেসব খাতকে সুবিধা দেয়া হবে, তার মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো দেশটির পর্যটন ও সেবা খাত। কারণ ভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই এ দুই খাত ক্ষতির মুখে পড়েছে সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া ইউরোপজুড়ে অবরোধ পরিস্থিতিতে খাত দুটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম প্রায় নেই বললেই চলে।

পর্যটন ও হোটেল গ্রুপ টিইউআই জানিয়েছে, ভাইরাসের কারণে তাদের অধিকাংশ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আগে থেকেই রাষ্ট্রীয় সহায়তার জন্য আবেদন করে আসছে তারা।

এরই মধ্যে আগামী সপ্তাহগুলোয় অধিকাংশ ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে জার্মান বিমান পরিবহন সংস্থা লুফথানসা। এর মূলে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু দেশের উইরোপ থেকে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *