করোনাভাইরাসের নতুন কিছু উপসর্গ

করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে বিস্তার লাভ করেছে। চীনের উহান শহর থেকে প্রথম তাণ্ডব শুরু করা এ ভাইরাস ধীরে ধীরে পৃথিবীর ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে সামগ্রিক জনজীবনে অনেক পরিবর্তন এনেছে। প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু তো বটেই, পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, এর জন্যও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভাইরাসটির সংক্রমণই দায়ী।

ভাইরাসটি যেহেতু নতুন ছড়িয়েছে। তাই এর ভ্যাকসিন বা কার্যকর স্বীকৃত কোনো চিকিৎসা পদ্ধতিও এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। পাশাপাশি জেনেটিক মিউটেশনের জন্য সময়ের সাথে সাথে কিছু নতুন বৈশিষ্ট্যও ভাইরাসটি অর্জন করেছে। সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব লক্ষণ দেখা যেত, সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন আরও কিছু উপসর্গও যুক্ত হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণগুলোর মাঝে আছে জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। সাধারণত ভাইরাস আক্রমণের ২-১৪ দিনের মাঝে লক্ষণগুলো প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন আগের লক্ষণগুলোর সাথে নতুন আরও কিছু লক্ষণ যোগ করেছে।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণের মাঝে থাকবে শুকনো কাশি ও শ্বাসকষ্ট অথবা জ্বর, শীত শীত অনুভূত হওয়া বা শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, তীব্র কাঁপুনি দেওয়া, মাংসপেশীতে ব্যথা, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, নতুন করে স্বাদগ্রহণ হ্রাস বা ঘ্রাণশক্তি হ্রাসের মাঝে কমপক্ষে ২টি লক্ষণ বিদ্যমান থাকবে।

সিডিসি থেকে আরও জানানো হয় যে, অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট, সবসময় বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভব করা, মুখমণ্ডল বা ঠোঁট নীলচে বর্ণ ধারণ করা, ঝিমুনি অনুভব করা ইত্যাদির কোনোটি উপস্থিত থাকলে সাথে সাথে হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সর্বাধিক সাধারণ লক্ষণগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো- জ্বর, শুকনো কাশি এবং ক্লান্তি। সঙ্গে গলা ব্যথা ও ডায়রিয়ার মত উপসর্গও থাকতে পারে। এছাড়া নতুন আরও একটি লক্ষণ হিসেবে ‘কোভিড ফিট’কে বিবেচনা করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের নতুন এ উপসর্গ হিসেবে দেখা দিচ্ছে ত্বকের কিছু সমস্যা। যেখানে বুকে-পিঠে ও হাত-পায়ে লাল দাগ দেখা দিতে পারে।

এসব উপসর্গ বেশি দেখা দিচ্ছে শিশু ও কমবয়সীদের মধ্যে। এ উপসর্গ প্রথম দেখা দেয় ইতালিতে। তারপর ফিনল্যান্ড, স্পেন, কানাডা, আমেরিকা থেকেও এমন উপসর্গের খবর আসতে শুরু করে। দেখা যায় যে, যেসব অঞ্চলে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বেশি, সেখানেই এ জাতীয় সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। মূলত শীতপ্রধান দেশগুলোতে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলেও ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ুর দেশগুলোতেও এমন সমস্যা যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে।

আসলে এ করোনাভাইরাস নিয়ে এখন প্রতিদিনই নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন চিকিৎসক-গবেষকরা। কারণ প্রতিনিয়ত এ রোগের উপসর্গের পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন নতুন উপসর্গ যুক্ত হচ্ছে। কখনো হঠাৎ স্বাদ বা গন্ধের বোধ চলে যাচ্ছে। কখনো বা দেখা দিচ্ছে ‘পিঙ্ক আই’-সে ক্ষেত্রে আবার চোখের রং বদলে লাল হয়ে যাচ্ছে।

এখন নতুন করে যুক্ত হলো- কোভিড ফিট। কোভিড-১৯ এর এ নতুন উপসর্গে হাত বা পায়ের একটা নির্দিষ্ট অংশজুড়ে ফ্রস্ট বাইটের মতো হয়। বরফ থেকে যেমন ঘা হয় পায়ে, ঠিক তেমনই। প্রাথমিক পর্যায়ে তা লালচে ফোস্কার মতো দেখায়। সেই অংশের রংও বদলে যায় সময়ের সাথে। সঙ্গে দেখা দেয় চুলকানি। এ ছাড়া পায়ের পাতা, হাতের তালু, হাত-পায়ের আঙুলে এ সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে।

কোথাও কোথাও একে ‘অ্যাকিউট অ্যাক্রো-ইস্কিমিয়া’ বলেও অভিহিত করা হচ্ছে। প্রায় ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অন্যান্য উপসর্গের পাশাপাশি ত্বকেও সমস্যা হয়েছে। তার মধ্যে ৮% ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল শুরু থেকেই। ১০% ক্ষেত্রে তা দেখা যায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪% ক্ষেত্রে ত্বকে লাল দাগ দেখা যায়-যাকে বলে ‘এরাইথ্রোমেটাস র্যাশ’। আর ৩% ক্ষেত্রে হয় ‘আর্টিকেরিয়া’, ১% ক্ষেত্রে জলবসন্তের মতো ফোস্কা-সেটি আবার শুধু হাত-পায়ে নয়, বরং বুকে ও পিঠে বেশি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে শারীরিক পরিস্থিতির উপর খেয়াল রাখুন। কোনো সমস্যা অনুভব করলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *