কমেছে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম
চলতি বছরের শুরুর দিকে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। ওই সময় মূল্যবৃদ্ধি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। তবে এপ্রিল থেকে দাম কমতে শুরু করে। সর্বশেষ গত মাসেও খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম কমেছে। এ নিয়ে টানা পাঁচ মাসের মতো দাম কমার ঘটনা ঘটল। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেল, খাদ্যশস্য, ভোজ্যতেল ও ধাতব পণ্যের সরবরাহ সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। রুশ সেনারা কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর অবরোধ করায় বন্ধ হয়ে পড়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ উৎপাদক ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রফতানি। যুদ্ধের প্রভাবে লজিস্টিকস সংকট, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, পরিবহন ব্যয়ের ঊর্ধ্বমুখিতাসহ নানামুখী প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মুুদ্রানীতি সংকোচন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। আর এতে করে অর্থনীতিগুলো মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ বিষয়টিকেই খাদ্যপণ্যের দাম কমার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা। তবে আগস্টে দাম কমার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তি।
এফএও বলছে, জুলাইয়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচক ছিল ১৪০ দশমিক ৭ পয়েন্ট। কিন্তু আগস্টে সূচক কমে ১৩৮ পয়েন্টে নেমেছে। মার্চের রেকর্ড ১৫৯ দশমিক ৭ পয়েন্ট থেকে সূচক অনেকটাই কমেছে। যদিও গত বছরের আগস্টের তুলনায় এখনো খাদ্যপণ্যের দাম ৭ শতাংশ বেশি।
এফএওতে দানাদার খাদ্যশস্যের মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। কূটনৈতিক চুক্তির কারণে ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর খুলে যাওয়ায় খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বাজারদর নেমে আসে। পাশাপাশি উত্তর আমেরিকা ও রাশিয়ায় ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন দাম কমাতে সহায়তা করেছে।
তবে গত মাসে ভুট্টার মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। ইউরোপের দেশগুলোয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে শুষ্ক আবহাওয়া শস্যটির উৎপাদন ও বৈশ্বিক সরবরাহে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এ কারণেই মূলত দাম বেড়েছে।
এদিকে ভোজ্যতেল, চিনি, দুগ্ধপণ্য ও মাংসের মূল্যসূচক কমছে। বৈশ্বিক সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায় এসব পণ্যের দাম কমেছে বলে এফএওর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
দানাদার খাদ্যশস্যের সরবরাহ ও চাহিদা প্রাক্কলনে এফএও বৈশ্বিক খাদ্যশস্য উৎপাদন পূর্বাভাস কমিয়েছে। সংস্থাটির দেয়া তথ্যমতে, চলতি বছর খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন দাঁড়াবে ২৭৭ কোটি ৪০ লাখ টন। গত বছরের তুলনায় উৎপাদন ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমবে। এর আগের পূর্বাভাসে ২৭৯ কোটি ২০ লাখ টন উৎপাদনের কথা বলা হয়েছিল। সে হিসেবে উৎপাদন কমবে।
এফএও বলছে, উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোয় বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভুট্টা উৎপাদন ব্যাপক ব্যাহত হতে পারে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় উৎপাদন গত পাঁচ বছরের গড়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ কমতে পারে। এর ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মোট বৈশ্বিক খাদ্যশস্য উৎপাদনে। আর এ কারণেই উৎপাদন পূর্বাভাস কমানো হয়েছে।
অন্যদিকে চলতি বছর দানাদার খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ব্যবহার উৎপাদনকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৭৯ কোটি ২০ লাখ টন। এর ফলে দানাদার খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক মজুদ আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ১ শতাংশ কমতে পারে। মজুদের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৪ কোটি ৫০ লাখ টনে।
এফএওর হিসাব অনুযায়ী, এ বছর মজুদ ও ব্যবহারের অনুপাত দাঁড়াবে ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আগের বছরের তুলনায় ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ কম। তবে এ অনুপাত এখনো অতীতের যেকোনো সময়ের ঊর্ধ্বেই অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।