কমলাপুরে ট্রেনের টিকিট পেতে ‘যুদ্ধ’

স্টাফ রিপোর্টার

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের আগাম টিকিট কিনতে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দিনেও এমন ভিড় ছিলো কমলাপুর ও শহরতলী রেলস্টেশনে। অনেকেই একদিন আগে থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন টিকিটের জন্য।

রোববার (৩ জুলাই) সকালে সরেজমিনে এ রকম চিত্র দেখা গেছে।

রোববার সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিতরণ শুরুর কথা থাকলেও শনিবার থেকেই স্টেশনে অবস্থান নিয়েছেন হাজারো টিকিটপ্রত্যাশী। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে এসব টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড়। এর মধ্যে একটি অংশ রয়েছেন, যারা প্রথম দিন লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাননি।

ঈদযাত্রার টিকিট পেতে দীর্ঘসময় লাইনে থাকতে হচ্ছে তাদের। কেউ কেউ ৩০ ঘণ্টা ধরে লাইনেই আছেন। সময় পার করতে তাদের কেউ পত্রিকা পড়ছেন, শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বই বা নোট নিয়ে লাইনে বসেই পড়ছেন। অনেকে আবার অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়েও পড়ছেন।

যাত্রাবাড়ী থেকে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাবো। সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। আগামীকাল সকালে ট্রেনের টিকিট ছাড়বে। এত সময় শুধু দাঁড়িয়ে বা বসে পার হয় না। তাই সময় কাটাতে পত্রিকা পড়ছি।

গাইবান্ধা যাওয়ার জন্য সকালে এসে লাইনে দাঁড়ানো শাকিল বলেন, মাকে নিয়ে ঈদ করতে বাড়ি যাবো। টিকিট কাটতে এসে দেখি লম্বা লাইন। আবার কালকের টিকিটের জন্য আজকেই লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। তাই রাতটা পার করতে কয়েকজন মিলে গেমস খেলছি।

শুধু খেলা নয়, অনেকে পত্রিকা পড়া বা বই ও নোট খাতা পড়ে সময় পার করছেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে।

রংপুরের টিকিট কিনতে আসা মো. শিপুল রানা বলেন, সকাল থেকে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। সকালে টিকিট পাইনি। এখনো পঞ্চাশের বেশি সিরিয়ালে আছি। টিকিট পাবো কি না তা জানি না। তারপরও দাঁড়িয়ে আছি যদি কাল পেয়ে যাই। ২৪ ঘণ্টা সময় পার করা কষ্টের ব্যাপার। তাই পত্রিকা পড়ে সময় কাটাচ্ছি।

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মোহাম্মদ আশরাফুল নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, লালমনিরহাট যাওয়ার জন্য অগ্রিম টিকিট কাটতে আসছি। সকালে এসেছি। আগামীকালের জন্য টিকিট কাটবো, তাও অনেক বড় লাইন। এত দীর্ঘ সময় পার করতে পড়ার জন্য নোটখাতা নিয়ে আসলাম।

এদিন, পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও আগেভাগেই স্টেশনে এসেছেন আগাম টিকিট পাবার জন্য। ঈদের আগে সড়কপথে অনেক বেশি যানজট থাকবে এমন আশঙ্কায় তারা ট্রেনের টিকিট পেতে আগ্রহী। টিকিট কেনা যেনো রীতিমত এক যুদ্ধ।

এদিকে, টিকিট বিক্রির প্রথমদিন (শুক্রবার) কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করেছিলেন রেল মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দ্বিতীয় দিন এসেছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। শান্তিপূর্ণভাবে টিকিট বিতরণ নিশ্চিত করতেই কাজ করছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও আনসার সদস্যরা। আর কালোবাজারে টিকিট বিক্রি বন্ধে পুলিশের পাশাপাশি রয়েছে র‍্যাবের উপস্থিতি।

শুক্রবার (১ জুলাই) থেকে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ১ জুলাই দেওয়া হয় ৫ জুলাই এর ট্রেনের টিকিট, ২ জুলাই দেওয়া হয় ৬ জুলাইয়ের টিকিট, আজ ৩ জুলাই দেওয়া হচ্ছে ৭ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট, ৪ জুলাই দেওয়া হবে ৮ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট এবং ৫ জুলাই দেওয়া হবে ৯ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট।

এছাড়া ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৭ জুলাই থেকে। ওই দিন ১১ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে। ৮ জুলাই ১২ জুলাইয়ের টিকিট, ৯ জুলাই ১৩ জুলাইয়ের টিকিট, ১১ জুলাই ১৪ এবং ১৫ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে ১০ জুলাই ঈদ হলে ১১ জুলাই সীমিত কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে। তবে ১২ জুলাই থেকে সব ট্রেন চলাচল করবে।

ঢাকায় ছয়টি স্টেশন ও গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলস্টেশন থেকে ঈদের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট এবং কমলাপুর শহরতলী প্লাটফর্ম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে। তেজগাঁও রেলওয়েস্টেশনে পাওয়া যাবে ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট।

এছাড়া ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়েস্টেশনে পাওয়া যাবে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট। রাজধানীর ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে পাওয়া যাবে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট। গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড়ের ঈদ স্পেশাল ট্রেন ছাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *