ওয়ালটন পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে পারে

একটা ভালো প্রতিষ্ঠান পূঁজিবাজারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। ওয়ালটনের মতো বড় ও স্বচ্ছ কোম্পানি শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে পারে, পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে। এতে বিনিয়াগকারীরা উপকৃত হবেন। উপকৃত হবে দেশ। এমন অভিমত পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে ইতিবাচক পরিবর্তনের আভাস নিয়ে আসছে দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির বিডিং সম্পন্ন হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পাওয়া বিডিংয়ের ওপর ভিত্তি করে ওয়ালটন শেয়ারের কাট-অফ-প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে ৩১৫ টাকা। কাট-অফ-প্রাইস ৩১৫ টাকা নির্ধারণ হওয়াটাকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, পুঁজিবাজারে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। ওয়ালটনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে আসার মধ্য দিয়ে দেশের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। অন্যদিকে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে নেট এ্যাসেট ভ্যালু, পি/ই রেশিও, ইপিএস বিচারে ওয়ালটনের কাট অব প্রাইস আরো বেশি হওয়া উচিত ছিলো।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজার থেকে লাভ পেতে হলে, ভালো কোম্পানিকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে। বড় কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে হবে। গত ১০ বছরের মধ্যে কোনো ভালো কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। বড় কোম্পানি এলে বাজারের আকার বাড়বে। ফলে গ্যাম্বলিং সম্ভব হবে না। হাই রিটার্ন অব ইক্যুইটি (আরওই) আসবে। বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন। দেশ উপকৃত হবে। বড় কোম্পানি হিসেবে ওয়ালটন, হেলথকেয়ার, ইনসেপ্টা এসব প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে ভালো প্রভাব রাখতে পারে।

জানা গেছে, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসেট ভ্যালু প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। দেশের ফ্রিজ বাজারের প্রায় ৭৫ শতাংশ মার্কেট শেয়ার ওয়ালটনের। এমন একটি বড় কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসায় পুঁজিবাজারের শক্তি বাড়বে। এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে, তারা লাভবান হবেন। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ওয়ালটন পুঁজিবাজারে আসায় এ খাত চাঙ্গা হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ‘যেসব কোম্পানির গুড ম্যানেজমেন্ট আছে, পেইড আপ ক্যাপিটাল বেশি, ভালো লভ্যাংশ দিতে পারে- এ ধরনের বড় বা ভালো কোম্পানিকে অবশ্যই পুঁজিবাজারে আনতে হবে। এরা পুঁজিবাজারের খুঁটি হিসেবে কাজ করে। তাহলে পুঁজিবাজারের শক্তি বাড়বে।’

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক এবং ডিএসই ব্রোকারেজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘দেশীয় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই পুঁজিবাজারে আনা জরুরি। বিদেশি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো দেশে ব্যবসা করছে। লভ্যাংশ হিসেবে দেশের বড় একটি অঙ্ক তারা নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জনসাধারণের সঙ্গে তাদের কোনো ইনভলবমেন্ট থাকছে না।

তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশে বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত। আমাদের দেশে উদ্যোগ নেয়া হলেও তারা এখনো পুঁজিবাজারে অনুপস্থিত। দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে ওয়ালটন বড় এবং ভালো কোম্পানি। এছাড়া পিএইচপি, ইনসেপ্টা- তারা পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে পারে।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে দেশে রেফ্রিজারেটর কারখানা স্থাপন করে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এরপর পর্যায়ক্রমে টেলিভিশন, এয়ারকন্ডিশনার, কম্প্রেসর, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ইলেকট্রিক অ্যাপ্লায়েন্স ইত্যাদি কারখানা গড়ে তোলে দেশীয় এই প্রতিষ্ঠানটি। উচ্চমান এবং সাশ্রয়ী দামের কারণে বাংলাদেশে তৈরি এসব পণ্য খুব দ্রুতই দেশীয় ক্রেতাদের মন জয় করে নেয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসব পণ্য রপ্তানিও হচ্ছে।

ওয়ালটন বাংলাদেশেই উচ্চমানের ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এতে কমেছে আমদানি ব্যয়। ফলে সাশ্রয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। হচ্ছে ব্যাপক কর্মসংস্থান। পাশাপাশি বেড়েছে রপ্তানি আয়। এরই প্রেক্ষিতে দেশের সাধারণ জনগণকে ওয়ালটনের এই অগ্রযাত্রার অংশীদার করার উদ্দেশ্যে পুঁজিবাজারে আসার সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ার বাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি রোড শো করে ওয়ালটন। এরপর চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭১৪তম সভায় কোম্পানিটির বিডিংয়ের অনুমোদন দেয়া হয়। গত ২ মার্চ থেকে ৫ মার্চ চলে ওয়ালটনের আইপিও বিডিং। এতে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ওয়ালটনের শেয়ারের কাট অফ প্রাইস নির্ধারিত হয় ৩১৫ টাকা। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, ওয়ালটনের আইপিওতে আসা নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।

ওয়ালটনের কোম্পানি সেক্রেটারি পার্থ প্রতিম দাশ বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশের পুঁজিবাজার খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করতে নেয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। এ অবস্থায় সাধারণ জনগণকে ওয়ালটনের উন্নয়ন অংশীদার করতে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুঁজিবাজারে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন।

তিনি বলেন, নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে ওয়ালটনের ইপিএস ৪৫.৮৭ টাকা এবং নেট অ্যাসেট ভ্যালু ২৪৩.১৬ টাকা। সেই হিসাবে ওয়ালটনের কাট অফ প্রাইস আরো বেশি হতে পারতো। তারপরও বিনিয়োগকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমরা এটিকে স্বাগত জানাই।

উল্লেখ্য, দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর আন্তর্জাতিক বাজারে তালিকাভুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে ওয়ালটনের। যা বিশ্বব্যাপী ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত ওয়ালটন পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন পার্থ প্রতিম দাশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *