ওয়াজে উসকানি ঠেকাতে ৬ নির্দেশনা

ওয়াজ মাহফিলে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মবিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ, জঙ্গিবাদের পক্ষে এবং গণতন্ত্রবিরোধী ও দেশীয় সংস্কৃতিবিরোধী বক্তব্য দেয়া ১৫ জনকে চিহ্নিত করেছে সরকার।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা থেকে এই ১৫ বক্তাকে চিহ্নিত করে ছয়টি নির্দেশনা সম্বলিত একটি চিঠি ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

নির্দেশনায় ওয়াজে উসকানি ঠেকাতে ওয়াজকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ওয়াজ মাহফিলের বক্তাদের আয়কর দেয়ার বিষয়টি নজরদারি করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে চিঠিতে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) আবু বকর ছিদ্দিক এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের এখানে ওয়াজ মাহফিল সবসময় মনিটরিং হয়। ওয়াজ মাহফিলে কে কোথায় কী বলেন, তা আমরা সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা দফতর থেকে পেয়ে আবার বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে থাকি। আমরা গোয়েন্দা রিপোর্ট যেভাবে পাই সেভাবে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিভিন্ন দফতরে পাঠাই।’

তিনি বলেন, ‘এসব প্রতিবেদনের কনটেন্টগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তৈরি করে না। আমরা নিয়মিতই গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে রিপোর্ট পাই, আগাম ব্যবস্থা হিসেবে সেগুলোর বিষয়ে রিলেডেট জায়গাগুলোতে কমিউনিকেট করতে হয়, সেটাই আমরা করেছি।’

চিঠিতে ওয়াজ মাহফিল করা ১৫ বক্তার নাম উল্লেখ করে বলা হয়, এসব বক্তা সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মবিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ, জঙ্গিবাদ, গণতন্ত্রবিরোধী ও দেশীয় সংস্কৃতিবিরোধী বয়ান দেন বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা রেডিক্যালাইজড (মৌলবাদী) হয়ে উগ্রবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে।’

১৫ বক্তার মধ্যে রয়েছেন- আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ (সালাফি), মাওলানা মুফতি মাহমুদুল হাসান (মোহাম্মদপুর জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া মাদরাসার মুহতামিম), আল্লামা মামুনুল হক (বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব), মুফতি ইলিয়াছুর রহমান জিহাদী (ক্যান্টনমেন্টের বাইতুল রসুল ক্যাডেট মাদরাসা ও এতিমখানার প্রিন্সিপাল), মুফতি ফয়জুল করিম (ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েব আমির), মুজাফফর বিন মুহসিন, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন (ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব), মতিউর রহমান মাদানী, মাওলানা আমির হামজা, মাওলানা সিফাত হাসান, দেওয়ানবাগী পীর, মাওলানা আরিফ বিল্লাহ, হাফেজ মাওলানা ফয়সাল আহমদ হেলাল ও মোহাম্মদ রাক্বিব ইবনে সিরাজ।

চিঠিতে এই বক্তাদের বিভিন্ন সময়ে ওয়াজ মাহফিলে দেয়া আপত্তিকর বক্তব্যগুলোও তুলে ধরা হয়েছে।

‘আল্লাহর রাস্তার প্রতিষ্ঠায় উত্তম জিহাদ হচ্ছে সশস্ত্র জিহাদ’, ‘আল্লাহ রাসুলকে গালি দিলে কোপাতে হবে’, ‘ইসলামের বিরুদ্ধে আইন করলে কোপাতে হব’, ‘মূর্তি ভাঙা ধর্মীয় কাজ’, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাফের’, ‘অমুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়’, ‘গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ধর্মনিরেপক্ষতাবাদ মুশরিকদের কাজ’, ‘শহীদ মিনারে ফুল দেয়া, প্রতিমূর্তিতে ফুল দিয়ে নীরবতা পালন করা শিরক’, ‘গণতন্ত্র ইসলামে নাই, ইহা হারাম’ এবং ‘জাতীয় সংগীত কওমি মাদরাসায় চাপিয়ে দেয়া যাবে না’ ইত্যাদি- ১৫ বক্তার বিভিন্ন সময় দেয়া এই বক্তব্যগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ওয়াজি হুজুররা যেন বাস্তবধর্মী ও ইসলামের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সংহতিপূর্ণ বক্তব্য দেন, সেজন্য তাদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণের ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন ও কমিউনিটি পুলিশের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ।

যারা ওয়াজের নামে হাস্যকর ও বিতর্কিত বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে ধর্মের ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট করার চেষ্টা চালান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রো-অ্যাকটিভ উদ্বুদ্ধকরণ করা। অনেক আলেমের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রির মতো উচ্চশিক্ষা ছাড়া যারা ওয়াজ করেন তারাই জঙ্গিবাদ ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাই মাদরাসায় উচ্চশিক্ষিত ওয়াজকারীদের নিবন্ধনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, অনেকেই আছেন, যারা হেলিকপ্টারযোগে ওয়াজ মাহফিলে যোগ দেন এবং ঘণ্টাচুক্তিতে বক্তব্য দিয়ে বিশাল অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেন। তারা নিয়মিত ও সঠিকভাবে আয়কর প্রদান করেন কি-না তা নজরদারির জন্য আয়কর বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগে কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি করা।

ওয়াজি হুজুরদের বক্তব্য স্থানীয় প্রশাসনের সংরক্ষণ ও পর্যালোচনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া এবং উসকানিমূলক ও বিদ্বেষ ছড়ানোর বক্তব্য দিলে তাদের সতর্ক করা। প্রয়োজনে পরবর্তী সময়ে তাদের ওয়াজ করার অনুমতি না দেয়া। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রদানকারীদের আইনের আওতায় আনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *