ওমিক্রনের প্রভাবে কমতে পারে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি
সাম্প্রতিক সময়ে কভিড-১৯ মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে অর্থনীতির বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের গতি বেশ আশাব্যঞ্জক ছিল। তবে এ আশা অনেকটাই গতি হারাতে বসেছে কভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্তের খবরে। সর্বশেষ অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) জানায়, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম তার গতি হারানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রমে অসম হয়ে উঠেছে। এ সময় ওমিক্রনের সংক্রমণ এ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে হুমকি তৈরি করবে বলেও আশঙ্কা করে ওইসিডি। খবর ডয়েচে ভেলে।
৩৮ সদস্যের সংগঠনটি তার সর্বশেষ অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে উল্লেখ করে চলতি বছর বৈশ্বিক উৎপাদন প্রবৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে সংস্থাটির করা পূর্বাভাসের পরিমাণ ৫ দশমিক ৭ শতাংশের তুলনায় এটি দশমিক ১ শতাংশ কম। আগামী বছরের জন্য বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জিত হতে পারে বলে উল্লেখ করে ওইসিডি। ২০২৩ সালের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিমাণ নির্ণয় করা হয় ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
ওইসিডির প্রধান অর্থনীতিবিদ লরেন্স বোন বলেন, কভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের শক্তি নিয়ে আমরা যথেষ্ট সচেতন অবস্থায় রয়েছি। এরই মধ্যে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে আরো হুমকি মুখে ফেলতে পারে। এটি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের জন্য একটি হুমকিস্বরূপ।
এ সময় নীতিনির্ধারকদের কাছে কভিড-১৯ টিকা উৎপাদন ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এসব টিকা বিতরণ কার্যক্রম সহজলভ্য করতে আহ্বান জানান লরেন্স বোন। পাশাপাশি কভিড টিকার বুস্টার ডোজের প্রাপ্তির ব্যাপারেও পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। এ সময় বিশ্বব্যাপী টিকা বিতরণের ক্ষেত্রে লজিস্টিকস অবকাঠামো সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মন্তব্য করেন ওইসিডির এ কর্মকর্তা।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে প্রতিবন্ধকতা, ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধি এবং ইউরোপীয় অঞ্চলে কভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। ওমিক্রন সংক্রমণের পূর্বেই এসব কারণে গতি হারাতে শুরু করেছিল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম। একই সময়ে ওমিক্রন সংক্রমণ সামগ্রিক পরিবেশে একটি জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
এখনই নতুন অর্থনীতির ওপর নতুন এ ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য এরই মধ্যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন শুরু করেছে সরকারগুলো। এসব বিধিনিষেধ অর্থনীতির বৈশ্বিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম আরো ধোঁয়াশা করে তুলছে।
লরেন্স বোন বলেন, পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে বলতে গেলে আমরা বর্তমানে যে ঝুঁকির মধ্যে আছি তা আরো বাড়িয়ে তুলছে ওমিক্রন সংক্রমণ। সরবরাহ শৃঙ্খলে উদ্বেগ, সীমান্ত চলাচল বন্ধ ঘোষণা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা জোরদার করা সব ক্ষেত্রেই এ পরিস্থিতি প্রভাব রাখছে।
ফরাসি এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ওমিক্রন সংক্রমণের প্রভাবে আমরা মূলত দুটি চিত্র দেখতে পাব। এর মধ্যে একটি হলো, আমরা মহামারীর শুরু থেকেই দেখে আসছি যে শীতকাল এলে এটি পূর্ণ সংক্রমণ শুরু করবে। এটি বিশ্বব্যাপী পুনরুদ্ধার কার্যক্রমকে পিছনে ঠেলে দেবে তবে পূর্ণমাত্রায় ব্যাহত করবে না। ফলে আমরা সরবরাহ শৃঙ্খলে আরো প্রতিবন্ধকতা দেখতে পাব। পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি আরো জোরদার হবে। অন্য আরেকটি চিত্র হলো, পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে ধাবিত হবে। এ সময় আমাদের নিজেদের আরো সচেতনভাবে রক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক চাহিদা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তবে বর্তমানে বাজারে উচ্চমূল্যের যে পরিস্থিতি চলমান তা কমে আসবে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদরা জানান, ওমিক্রন সংক্রমণ শক্তিশালী হলে আগামী বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ২ শতাংশের বেশি কমে আসবে। ওইসিডির দৃষ্টিভঙ্গিতে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য হারে পার্থক্যের চিত্র ফুটে উঠেছে।
এ সময় পূর্ববর্তী পরিস্থিতি থেকে নীতিনির্ধারকদের শিক্ষা না নেয়ার সম্ভাবনাকেও একটি হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে ওইসিডি। সংস্থাটি জানায়, সরকারগুলো মহামারী প্রকাশ ও প্রসারের দুর্বলতাগুলো মোকাবেলা করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিতে পারে।