এস আলম চায় ন্যূনতম ৫১ শতাংশ, বিপিসি ৬০

স্টাফ রিপোর্টার

দেশে পেট্রোলিয়াম জ্বালানিখাতের সবচেয়ে আইকনিক প্রকল্প ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট (ইআরএল-২)। এটি নির্মাণে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ) ন্যূনতম ৫১ শতাংশ চায় আগ্রহী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ। তবে প্রকল্প পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের কর্তৃত্ব বজায় রাখার স্বার্থে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) চায় ৬০ শতাংশ।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে জমা দেওয়া এস আলম গ্রুপ প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারক পর্যালোচনায় বিপিসির গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া যায়। ৩০ লাখ টন ক্রুড জ্বালানি পরিশোধন সক্ষমতার জন্য নেওয়া বিপিসির প্রকল্পটি পিপিপির মাধ্যমে ৩০-৫০ লাখ টনের পরিশোধন সক্ষমতার প্ল্যান্ট তৈরির আগ্রহ দেখায় এস আলম গ্রুপ।

তবে বিপিসির ওই প্রতিবেদনে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ ও প্রকল্প মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। কমিটির জমা করা সমঝোতা স্মারক প্রস্তাবনাটি আইনি দিক পর্যালোচনা ও মতামতের জন্য বর্তমানে আইন এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে রয়েছে বলে জানা যায়।

দেশের পেট্রোলিয়াম জ্বালানি পরিশোধনে দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির প্ল্যান্টটি প্রায় ৫৮ বছরের পুরোনো। প্রতিষ্ঠানটি বছরে ১৫ লাখ টন ক্রুড অয়েল পরিশোধন করে। সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ৩০ লাখ টনের দ্বিতীয় প্ল্যান্টটি ভৌত বাস্তবায়ন শুরুর পর্যায়ে অর্থ সংকটে জটিলতায় পড়ে নিজস্ব অর্থায়ন থেকে সরে আসে সরকার। চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগ্রুপ এস আলম গ্রুপ পিপিপিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগ্রহ প্রকাশ করে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে সমঝোতা স্মারক প্রস্তাবনা জমা দেয়।

সূত্র জানায়, ইস্টার্ন রিফাইনারি বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি। ১৯৬৬ সালে নগরীর গুপ্তখাল এলাকায় ইস্টার্ন রিফাইনারি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর বর্তমান প্ল্যান্টটি স্থাপিত হয়। ১৯৬৮ সালের ৭ মে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে এই রিফাইনারি। ফ্রান্সের টেকনিপ প্ল্যান্টটি নির্মাণ করে।

পরবর্তীসময়ে জ্বালানি সক্ষমতা ও নিরাপত্তা বাড়াতে ইস্টার্ন রিফাইনারির বর্তমান স্থাপনার মধ্যে ৩০ লাখ মেট্রিক টন সক্ষমতার ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ প্রকল্পটি হাতে নেয় বিপিসি। ২০১২ সালে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। শুরুর দিকে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হলেও পরবর্তীসময়ে একাধিকবার সংশোধিত হয়ে ১৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের ফিড কন্ট্রাক্টর হিসেবে ফ্রান্সের টেকনিপকে নিয়োগ দেওয়া হয়। টেকনিপ প্রকল্পটির (ইআরএল-২) ডিজাইন সম্পন্ন করে।

প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট (পিএমসি) হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল)। ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে বিপিসি। তৎকালীন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের উপস্থিতিতে চুক্তি সই অনুষ্ঠান হয়। ওইদিন মন্ত্রী বলেন, পরবর্তী বছরের মধ্যেই ইআরএল-২ প্রকল্পের ভৌত কাজ শুরু হবে। কিন্তু দীর্ঘ ৮ বছরের বেশি সময় পার হলেও প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

সময় গড়ানোর কারণে প্রকল্প ব্যয়ও বেড়ে যায়। পরবর্তীসময়ে আবারও সংশোধন করে সর্বশেষ প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৩ হাজার ৫৮ কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। প্রকল্প ব্যয়ের ৭০ শতাংশ জিওবি এবং ৩০ শতাংশ বিপিসির নিজস্ব অর্থে ব্যয় করার প্রস্তাব করা হয়। এতে সরকারি জিওবি খাত থেকে ১৬ হাজার ১৪২ কোটি ৯৯ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। অবশিষ্ট ৬ হাজার ৯১৬ কোটি ৯২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা বিপিসির নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ব্যয় মেটানোর কথা ছিল।

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট-১৫ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব ফয়সল জহুর স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘বিপিসির অধীন ইআরএল বাস্তবায়িতব্য ‘ইন্সটলেশন অব ইআরএল ইইনিট-২’ প্রকল্পে জিওবি অংশের প্রাক্কলিত ১৬১৪২.০০৯৯ কোটি টাকা ‘১০০ শতাংশ উন্নয়ন ঋণ’ হিসেবে অর্থায়নে অর্থবিভাগ সম্মতি দিয়েছে। পত্রে ঋণের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়, জিওবি ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার ৫ শতাংশ, ঋণ পরিশোধে সময়সীমা ৫ বছর গ্রেস পিড়িয়ডসহ ২০ বছর (ত্রৈ-মাসিক কিস্তিতে), প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে অর্থ বিভাগের সঙ্গে একটি ঋণচুক্তি সম্পাদনা করতে হবে এবং ঋণের লেভি নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে।’

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে প্রকল্প প্রস্তাবনাটি আবারও সংশোধন করে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৩ হাজার ৭৩৬ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ হিসেবে জিওবি ফান্ড থেকে ১৬ হাজার ৬৩৫ কোটি ২৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা এবং বিপিসির নিজস্ব তহবিল থেকে ৩০ শতাংশ হিসেবে ৭ হাজার ১শ কোটি ৮৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা অর্থায়নের একটি প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় সরকারি সিদ্ধান্তে প্রকল্পটিতে পিপিপিতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়ে সমঝোতা স্মারকের একটি প্রস্তাবনা জমা দেয় এস আলম গ্রুপ।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নতুন রিফাইনারি প্রতিষ্ঠার জন্য ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় এস আলম গ্রুপ। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ জানুয়ারি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব বরাবর সমঝোতা স্মারকের একটি প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়। সমঝেতা স্মারক প্রস্তাবনায় ৩-৫ মিলিয়ন টন সক্ষমতার নতুন রিফাইনারি নির্মাণের আগ্রহের কথা জানানো হয়। নতুন প্রস্তাবনায় ওই প্রকল্পে এস আলম গ্রুপ এবং ইস্টার্ন রিফাইনারির মধ্যে ৮০:২০ ইক্যুইটি শেয়ার থাকার কথা উল্লেখ করে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের চিঠি
পরবর্তীসময়ে ৫ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে বিপিসির আওতাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারির বাস্তবায়ন হতে যাওয়া ইআরএল-২ প্রকল্পটি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড এবং এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগী চুক্তির (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করার বিষয়ে বিপিসিকে সিদ্ধান্তের কথা জানায় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের ওই চিঠিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্তকরণের জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ইস্টার্ন রিফাইনারি এবং এস আলম গ্রুপ সমঝোতা হলে একটি স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল (এসপিভি) কোম্পানি গঠন কিংবা অন্য কোনো সম্মত পদ্ধতিতে প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির পর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী মো. আমীর মাসুদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বিপিসির পরিচালককে (অপারেশন্স ও পরিকল্পনা) আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে বিপিসি বরাবর প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই কমিটিকে প্রয়োজনে আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে যে কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ নিতে পারবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরে আহ্বায়কের বদলিসহ কমিটির কাজের সুবিধার্থে পরবর্তী ১৮ এপ্রিল কমিটি পুনর্গঠন করে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করে বিপিসি। গত ৮ জুলাই ওই কমিটি বিপিসি চেয়ারম্যান বরাবর প্রতিবেদন জমা দেয়। পরের দিন ৯ জুলাই ওই প্রতিবেদন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিবকে পাঠিয়ে দেন বিপিসি চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান।

কমিটিতে যারা
কমিটিতে আছেন আহ্বায়ক বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) অনুপম বড়ুয়া, সদস্য সচিব ইস্টার্ন রিফাইনারির মহাব্যবস্থাপক (ওঅ্যান্ডপি) রায়হান আহমাদ, ৭ সদস্য বিপিপির মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক ও পরিচালন) মুস্তফা কুদরুত-ই-ইলাহী, মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. আমীর মাসুদ, পদ্মা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান, ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. লোকমান, মহাব্যবস্থাপক (ইঅ্যান্ডএস) মো. শরীফ হাসনাত, উপ-মহাব্যবস্থাপক (আইঅ্যান্ডএস) এ কে এম নঈম উল্লাহ এবং সহকারী মহাব্যবস্থাপক (প্রসেস) মো. রাসেদুল হাসান।

তবে পুরো সমঝোতা স্মারক পর্যালোচনার জন্য তিনজন বিশেষজ্ঞের মতামত নেয় পর্যালোচনা কমিটি। এর মধ্যে একজন আইন বিশেষজ্ঞ, একজন প্রকিউরমেন্ট বিশেষজ্ঞ এবং একজন ফাইন্যান্সিয়াল বিশেষজ্ঞ।

কমিটির ৬ সুপারিশ
১. ‘ইন্সটলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ শীর্ষক প্রকল্পটি বিপিসির পক্ষে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড এবং এস আলম অ্যান্ড কোম্পানির মধ্যে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগী চুক্তির ভিত্তিতে ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্পের জন্য প্রস্তুত করা ফিডের (ফ্রন্ট ইন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন) আলোকে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

২. ভারত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা সুদৃঢ়করণ, জ্বালানি তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং জ্বালানি সংকট মোকাবিলার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত রিফাইনারি রয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যমান ইআরএলের স্বকীয়তা অক্ষুণ্ন রেখে সরকার/বিপিসির অনুকূলে এর শতভাগ মালিকানা বজায় রাখতে হবে

৩. প্রকল্পের জন্য এরই মধ্যে ব্যয় করা অর্থ (ফিড, পিএমসি, জমি ইত্যাদি বাবদ) প্রস্তাবিত জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানির ইক্যুইটি হিস্যায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৪. ইআরএল ছাড়া দেশে আর কোনো সরকারি রিফাইনারি না থাকায় দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে প্রস্তাবিত জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার লক্ষ্যে বিপিসি/ইআরএলের ইক্যুইটি হিস্যা অন্তত ৬০ শতাংশ রাখা আবশ্যক।

৫. ইআরএল ইউনিট-২ উচ্চ প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সমাদৃত একটি প্রকল্প বিবেচনায় প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে ইআরএল ইউনিট-২ এর জন্য প্রস্তুত ফিডের আলোকে প্রকল্পের কাজ এবং মালামালের গুণগতমান নিশ্চিতকল্পে বিশ্বমানের ইপিসি ঠিকাদার ও ভেন্ডর এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট নিয়োগ দিতে হবে।

৬. প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগী চুক্তির ভিত্তিতে বাস্তবায়নে পরবর্তী নেগোশিয়েশন সম্পন্ন করার জন্য সংযুক্ত সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষর করা যেতে পারে।

কমিটির পর্যালোচনা
বিপিসির পর্যালোচনা কমিটি ১৭টি সভা করে। এর মধ্যে তিনটি সভা এস আলম গ্রুপ প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে জমা দেওয়া প্রথম প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারকে ৮০ শতাংশ ইক্যুইটি দাবি করলেও পরবর্তীসময়ে চলতি বছরের ২ মে জমা করা দ্বিতীয় সংশোধিত সমঝোতা স্মারকে এস আলম গ্রুপের ইক্যুইটি হিস্যা ন্যূনতম ৫১ শতাংশ থাকবে হবে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্পের ফাইন্যান্সিয়াল বিষয়ে এস আলম কোম্পানি দাখিল করা খসড়া সমঝোতাস্মারকে সুস্পষ্ট কোনো প্রস্তাবনা নেই। আলোচনাকালে তাদের (এস আলম) কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য কমিটিকে দেওয়া হয়নি।

প্রতিবেদনের ইক্যুইটি শেয়ার পর্যালোচনা অংশে উল্লেখ করা হয়, প্রকিউরমেন্ট বিশেষজ্ঞের মতামত অনুসারে পিপিপি জেভিতে সরকার অন্যতম পার্টনার হলে সেখানে সরকারের ইক্যুইটি বেশি থাকা উচিত হবে, যাতে প্রকল্প পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের কর্তৃত্ব বজায় থাকে। প্রস্তাবিত এসপিভিতে বিপিসি/ইআরএলের ইক্যুইটি হিস্যার অংশ অন্তত ৬০ শতাংশ হওয়া উচিত বলে কমিটি মত দেয়।

যা বলছে বিপিসি
এ বিষয়ে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) ও যুগ্ম সচিব অনুপম বড়ুয়া বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ইআরএল-২ প্রকল্পটি পিপিপিতে দেওয়ার ব্যাপারে এস আলম গ্রুপের প্রস্তাবিত এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। যখন এমওইউ সই হবে তখন গণমাধ্যমসহ সবাইকে জানানো হবে।’

প্রকল্পে বিপিসির ৬০ শতাংশ হিস্যা রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনটি আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে বিপিসির হিস্যার বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রস্তাবিত এমওইউটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এস আলম গ্রুপের সম্মতি নিয়ে প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত করে বিপিসিতে জমা দেওয়া হয়। বিপিসি থেকে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে। বর্তমানে এমওইউটির বিষয়ে মতামত নেওয়ার জন্য আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের পর এটি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সম্মতি পাওয়া গেলে এমওইউ সই হতে পারে।’

এ বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান ২৯ জুলাই তার দপ্তরে প্রতিবেদককে বলেন, ‘ইআরএল-২ প্রকল্পটি এস আলম গ্রুপের সঙ্গে পিপিপিতে করার বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। এস আলম গ্রুপের প্রস্তাবিত এমওইউটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এখানে বিপিসি কিংবা এস আলম গ্রুপের হিস্যা কী হবে, তা নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি।’

যা বলছে এস আলম গ্রুপ
এ বিষয়ে কথা হলে প্রস্তাবিত প্রকল্পের পরামর্শক প্রকৌশলী মানজারে খোরশেদ আলম বলেন, ‘এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে ৮০ শতাংশ মালিকানার হিস্যা চাওয়া হয়। বিপিসি কী প্রতিবেদন দিয়েছে সেটা আমরা জানি না। এখন প্রকল্পটিতে আমাদের হিস্যা কী ৫১ শতাংশ হবে, নাকি ৬০ শতাংশ হবে, সেটি পরবর্তীসময়ে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *