এশিয়ায় শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি
ভারতের তাপশক্তি ও কয়লা ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। কয়লা খনির টাইকুন হিসেবেই পরিচিত তিনি। তবে কয়েক বছর ধরে তিনি সৌরশক্তিতে ঝুঁকেছেন। জলবায়ু সুরক্ষায় ব্যবসা বিস্তৃত করায় তার প্রতি আস্থা বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের। এর মাধ্যমেই এশিয়ার শীর্ষ ধনী হয়ে উঠেছেন গৌতম আদানি। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ৮ হাজার ৮৫০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
ফোর্বস ও ব্লুমবার্গের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২১ সালে গৌতম আদানির সম্পদে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার যুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি স্বদেশী ধনকুবের মুকেশ আম্বানিকে টপকে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন।
সম্প্রতি একদিনেই ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার হারানোর পর শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকা থেকে ছিটকে পড়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। ফোর্বসের রিয়েল-টাইম বিলিয়নেয়ারদের তালিকায় ফেসবুকের এ প্রতিষ্ঠাতা দ্বাদশ স্থানে রয়েছেন। তার চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছেন ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানি।
গৌতম আদানি অস্ট্রেলিয়ায় বিতর্কিত কারমাইকেল খনি প্রকল্প নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। এর মধ্যেও তিনি সৌরশক্তিতে ব্যবসা বিস্তৃত করেছেন। তার আদানি গ্রুপ নবায়নযোগ্য এ জ্বালানিতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে। গ্রুপটি গৌতম আদানির নিজ রাজ্য গুজরাটে ভারতের বৃহত্তম মুন্দ্রা বন্দর নিয়ন্ত্রণ করে। মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৭৪ শতাংশ মালিকানাও গ্রুপটির হাতে। তবে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে ঝোঁকার পর গৌতম আদানির সম্পদে উল্লম্ফন দেখা দেয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রিন এনার্জির শেয়ারের দাম গত ১২ মাসে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এর মাধ্যমে সংস্থাটি গৌতম আদানির সবচেয়ে মূল্যবান হয়ে উঠেছে।
গ্রুপটি ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনকারী হতে চায়। এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পগুলোয় ৭ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। গৌতম আদানির এ উচ্চাকাঙ্ক্ষা আরেক গুজরাটি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত গ্লাসগো সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামাতে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন নরেন্দ্র মোদি। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প উেসর সক্ষমতা ৫৫ গিগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছে। পাশাপাশি লক্ষ্য অনুযায়ী, এ সময়ের মধ্যে বিদ্যুত্শক্তির ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসবে। সব মিলিয়ে ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামাতে চায় ভারত।
এ অবস্থায় আদানি ও ভারতের সৌরশক্তির বিপ্লবে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে ফরাসি জ্বালানি তেল কোম্পানি টোটাল। গত বছর সংস্থাটি আদানি গ্রিন এনার্জির ২০ শতাংশ অংশীদারিত্ব কিনে নেয়।
মুম্বাইভিত্তিক ব্রোকারেজ এইচডিএফসি সিকিউরিটিজের খুচরা গবেষণা বিভাগের প্রধান দীপক জাসানি বলেন, আদানি গ্রুপ উপযুক্ত সময়ে লোভনীয় সব খাতে ব্যবসা বিস্তৃত করেছে। আর এটিই প্রতিষ্ঠানটিকে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। যদিও বিভিন্ন সময়ে গ্রুপটি ব্যবসা বিস্তৃতিতে তহবিল সংগ্রহে সামান্য অসুবিধারও সম্মুখীন হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, গৌতম আদানি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উচ্চালিভাষী লক্ষ্য রয়েছে। যদিও তার গ্রুপ এখনো পরিবেশ দূষণকারী কয়লা ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসেনি। জীবাশ্ম জ্বালানিবিরোধী কর্মী, পরিবেশবাদী ও আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর তীব্র বিরোধিতার মধ্যেও আদানি গ্রুপ বিশালাকার কুইন্সল্যান্ডে কয়লা খনির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।