এশিয়ায় এলএনজি বাজারে অবস্থান গড়ছে রাশিয়া

একসময় ইউরোপের দেশগুলো প্রাকৃতিক গ্যাসের সবচেয়ে বড় বাজার ছিল। ইউরোপের বাজারে জ্বালানি পণ্যটির রফতানিতে রাশিয়ার একক আধিপত্য রয়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, বৈশ্বিক রাজনীতি ও ভূরাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে কখনো রুশ গ্যাস রফতানি বন্ধ হয়ে গেলে ইউরোপের বড় একটি অংশ অন্ধকারে ডুবে যাবে।

এ আশঙ্কা থেকে ইউরোপের দেশগুলো প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প উেসর সন্ধান শুরু করেছে। তবে একই সময়ে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক বাজারও পূর্বে সরে এসেছে। এখন এশিয়ার দেশগুলো প্রাকৃতিক গ্যাসের সবচেয়ে বড় বাজার। বিশেষত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সবচেয়ে বড় ভোক্তা ও আমদানিকারক হয়ে উঠেছে চীনসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো। ইউরোপের পাশাপাশি উদীয়মান এ বাজারেও আধিপত্য জোরদারের চেষ্টা শুরু করেছে রাশিয়া।

এর অংশ হিসেবে এশিয়ার কেন্দ্রস্থলে এলএনজি রফতানি কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে মস্কো। জ্বালানি পণ্যটির রফতানিতে গড়ে তোলা হবে আস্ত কৃত্রিম দ্বীপ, টার্মিনাল। মূলত স্বল্প পরিবহন ব্যয়ে এশিয়ার দেশগুলোয় এলএনজি রফতানির লক্ষ্যে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। খবর অয়েলপ্রাইসডটকম ও রয়টার্স।

জাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া— এশিয়ার এ তিনটি দেশ সম্মিলিতভাবে বৈশ্বিক এলএনজি বাণিজ্যের ৬০ শতাংশের বেশি আমদানি করে। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। বাড়তি চাহিদার কারণে এসব দেশে এলএনজির আমদানিও বেড়েছে। গত বছর এলএনজি আমদানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে চীন।

স্বাভাবিকভাবেই জ্বালানি পণ্যটির রফতানিকারক দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো এশিয়ার বাজারে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। পিছিয়ে নেই রাশিয়াও। রুশ প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম সাইবেরিয়া গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ এ পাইপলাইন দিয়ে তুষারাবৃত সাইবেরিয়া পেরিয়ে রাশিয়া থেকে সরাসরি চীনে এলএনজি রফতানি করা সম্ভব হবে আশা করা হচ্ছে।

রাশিয়ার সবচেয়ে বড় এলএনজি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নোভাটেক। ইউরোপজুড়ে ব্যবসা করলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি এশিয়ার উদীয়মান বাজারে নজর দিয়েছে। আর্কটিকে ইয়ামাল গ্যাস ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিনিয়োগ করছে আর্কটিক এলএনজি-২ টার্মিনাল প্রকল্পেও। জাপানের উপকূলে হাবিকি এলএনজি টার্মিনালের আধুনিকায়নে বিনিয়োগের ব্যাপারে প্রাথমিক চুক্তি সই করেছে নোভাটেক ও জাপানি প্রতিষ্ঠান সাইবু গ্যাস। মূলত দূরপ্রাচ্য ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোয় এলএনজি রফতানির লক্ষ্য পূরণে এ প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। নোভাটেকের ডেপুটি চেয়ারম্যান লেভ ফিয়োদোয়েভ বলেন, এশিয়ার বাজারে এলএনজি রফতানিতে হাবিকি টার্মিনাল রাশিয়ার সামনে বড় সুযোগ এনে দেবে।

তবে এলএনজি খাতে নোভাটেকের সবচেয়ে উচ্চাভিলাসী প্রকল্পটি যাত্রা করছে রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপে। এশিয়ার দেশগুলোয় জ্বালানি পণ্যটির রফতানিতে এখানে একটি মেরিন শিপমেন্ট কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রাশিয়া। নির্মাণ করা হবে কৃত্রিম দ্বীপ। থাকবে টার্মিনালসহ এলএনজি রফতানির সব সুবিধা।

রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে পাইপ লাইনযোগে এলএনজি এনে এখান থেকে এশিয়ার দেশগুলোয় সরাসরি রফতানি করা হবে। পরবর্তীতে এলএনজি রফতানির আর্কটিক রুটের সঙ্গে এর সংযোগ স্থাপন করা হবে। এ কারণে দূরপ্রাচ্য ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এ প্রকল্পকে রুশ এলএনজি খাতের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হিসেবে চিন্তা করা হচ্ছে।

মূলত ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে এখান থেকে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ এশিয়ার দেশগুলোয় সহজে ও স্বল্প খরচে এলএনজি রফতানি করা সম্ভব হবে। এ কারণে নতুন কেন্দ্রটি রাশিয়ার এলএনজি রফতানি খাতকে বর্তমানের তুলনায় চাঙ্গা করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এ বিষয়ে নোভাটেকের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের চেয়ারম্যান লিওনিদ মিখেলসন বলেন, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় এলএনজি হাব নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পরিবহন ব্যয় কম লাগায় এটি রাশিয়া থেকে এশিয়ার বাজারে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি বাড়াবে। একই সঙ্গে এশিয়ার দেশগুলোয় এলএনজির ক্রমবিকাশমান বাজারে রাশিয়ার অবস্থান পোক্ত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। ফলে ইউরোপের পাশাপাশি এশিয়ার জ্বালানি বাজারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হবে রাশিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *