এশিয়ার বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখবে আরামকো
সম্প্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন বড় পরিসরে কমানোর ঘোষণা দিয়েছে রফতানিকারক দেশগুলোর মিত্র জোট ওপেক প্লাস। এতে বিশ্বজুড়ে জ্বালানিটির সরবরাহ সংকট তীব্র হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেও জ্বালানি জায়ান্ট সৌদি আরামকো এশিয়ার দেশগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন কোম্পানিসংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় ২ শতাংশের সমান। দেশটি আরো জানায়, পশ্চিমা দেশগুলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অব্যাহত সুদের হার বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতির গতি ক্রমেই শ্লথ হয়ে আসছে। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেল উত্তোলন কমিয়ে আনা জরুরি ছিল।
সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী আব্দুল আজিজ বিন সালমান বলেন, কাগজে-কলমে উত্তোলন দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল করে কমানোর কথা বলা হলেও মূলত দৈনিক ১০-১১ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমবে।
জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত সবচেয়ে বেশি পরিমাণে উত্তোলন কমাবে। এর বাইরে মিত্র জোটটির বেশির ভাগ সদস্যই তাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পরিমাণে জ্বালানি তেল উত্তোলন করছে। বিনিয়োগ স্বল্পতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এসব দেশের উত্তোলন ব্যাহত হচ্ছে।
উত্তোলন কমানোর ঘোষণা আসার পর অনেকেই মনে করেছিলেন, সৌদি আরামকো অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের রফতানি মূল্য বাড়াবে। কিন্তু নভেম্বরে এশিয়ার দেশগুলোয় সরবরাহের জন্য চুক্তীকৃত বাজার আদর্শ আরব লাইট ক্রুডের দাম অক্টোবরের মতোই অপরিবর্তিত রেখেছে।
অন্যদিকে নভেম্বরে ইউরোপের বাজারে সরবরাহের জন্য চুক্তীকৃত আরব লাইট ক্রডের দাম কমিয়েছে আরামকো। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের জন্য দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আরব মিডিয়াম ও আরব হেভি ক্রডের দাম চলতি মাসে ব্যারেলপ্রতি ২৫ সেন্ট করে বেড়েছে।
যখন বিশ্বের জ্বালানি তেল ক্রেতা দেশগুলো অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, ঠিক তখনই আরামকো প্রধান বৈশ্বিক জ্বালানি তেল উত্তোলন সক্ষমতা কমছে বলে সতর্ক করেছেন।
চলতি মাসের শুরুর দিকে এনার্জি ইন্টিলিজেন্স ফোরামে আরামকোর প্রধান আমিন নাসির বলেন, চীন যদি লকডাউনসহ সব ধরনের বিধিনিষেধ পুরোপুরি উঠিয়ে নেয়, দেশটির অর্থনীতিতে দ্রুত প্রসার ঘটে এবং এভিয়েশন খাতে জেট জ্বালানির চাহিদা আরো বৃদ্ধি পায়, তবে বর্তমানে যে অতিরিক্ত সক্ষমতা রয়েছে সেটিও কমে যাবে। আর সেটি অর্থনীতিগুলোর জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি বয়ে আনবে।
নাসির ও বিন সালমান জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ নিয়ে সতর্ক করে আসছেন। তারা বলছেন, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনে এরই মধ্যে বিনিয়োগ স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। তার ওপর বর্তমান পরিস্থিতি নতুন বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছে। নাসির বলেন, আমরা বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে কয়েক বছর সময়ও লেগে যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, বাইডেন প্রশাসনসহ পশ্চিমা দেশগুলো লম্বা সময় ধরেই সৌদি আরব ও ওপেক প্লাসের প্রতি উত্তোলন আরো বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আসছিল। উদ্দেশ্য ঊর্ধ্বমুখী বাজারদরে লাগাম টেনে ধরা। কিন্তু ওপেক নেতারা এ আহ্বানে সাড়া দেননি। ফলে বাধ্য হয়েই রাষ্ট্রীয় মজুদ থেকে স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে দেশটি। আহ্বানে সাড়া দিয়ে আরো কয়েকটি দেশ মজুদ থেকে সরবরাহ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয় সামাল দিতে জ্বালানি তেল রফতানি বাড়াচ্ছে। পণ্যটির রফতানি আয় থেকেই যুদ্ধের বেশির ভাগ ব্যয় বহন করা হচ্ছে। এ কারণেই রাশিয়ার জ্বালানি রফতানি আয় বন্ধ করে দেয়ার উপায় খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে পণ্যটির দাম কমলে আয়ও কমবে বলে মনে করছেন বাইডেন প্রশাসন।
তবে ওপেক বলছে, সম্প্রতি অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কাসহ কিছু কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপক হারে কমেছে। এটিকে জ্বালানি খাতের জন্য নেতিবাচক হিসেবেই দেখছে জোটটি।
তিন মাস আগে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ১২০ ডলারে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু ডলারের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্রের রেকর্ড সুদের হার বৃদ্ধি এবং মন্দার আশঙ্কায় সম্প্রতি পণ্যটির গড় দাম ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলারে নেমেছে। বাজারদর যাতে আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে, সে লক্ষ্যেই উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানায় ওপেক প্লাস।