এলডিসি উত্তোরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শুল্ক কাঠামোর আমূল সংষ্কার জরুরী: ডিসিসিআই সভাপতি

স্টাফ রিপোর্টার

এলডিসি উত্তোরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের রাজস্ব ও শুল্ক কাঠামোর আমূল সংস্কার, নীতিমালা সহজীকরণ, দক্ষতা উন্নয়ন, বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সাথে পিটিএ এবং এফটিএ স্বাক্ষরের পাশাপাশি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংস্থাসমূহে নিজেদের অর্ন্তভূক্তি একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন, ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। অদ্য ২৬ অক্টোবর, ২০২২ তারিখে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘প্রতিযোগিতামূলক শুল্ক কাঠামো : প্রেক্ষিত স্বল্পোন্নত দেশের উত্তরণ’ শীর্ষক ওয়ার্কশপে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

ডিসিসিআই আয়োজিত ওয়ার্কশপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান মো. মশিউল ইসলাম, যেখানে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফারহানা আইরিছ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)’র প্রথম সচিব (শুল্ক রেয়াত ও প্রকল্প সুবিধা) ড. মো. নিয়োমুল ইসলাম।

ওয়ার্কশপের উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, এলডিসি উত্তোরণের পর আর্ন্তজাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাবে এবং দেশে উৎপাদিত পণ্য বর্হিবিশ্বে রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রায় ৮%-১৬% শুল্ক প্রদান করতে হবে, যা আমাদের রপ্তানির সক্ষমতাকে মারাতœকভাবে ব্যাহত করবে। তিনি বলেন, স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষায় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে চলমান নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কাঠামোতে উল্লেখজনক হারে পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে, একই সাথে আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পণ্য বহুমুখীরণের মাধ্যমে ভ্যালু এডিশন নিশ্চিতকরনের কোন বিকল্প নেই। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায়, সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, দেশের রাজস্ব ও শুল্ক কাঠামোর আমূল সংষ্কার ও অটোমেশন নিশ্চিতকরণ, নীতিমালা সহজীকরণ, দ্রততম সময়ে ও হয়রানিমুক্ত ভাবে উদ্যোক্তাদের সরকারি সেবা প্রাপ্তি, শ্রমিক ও উদ্যোক্তাদের দক্ষতা এবং সক্ষমতা উন্নয়ন, বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সাথে পিটিএ এবং এফটিএ স্বাক্ষরের পাশাপাশি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংস্থায় নিজেদের অর্ন্তভূক্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন, ডিসিসিআই সভাপতি।

ওয়ার্কশপে মূল প্রবন্ধে উপস্থাপনকালে মো. মশিউল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছর বাংলাদেশ ৫২বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং সর্বোচ্চ রপ্তানিকৃত ২০টি পণ্যের মধ্যে ১৮টিই শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করেছে। এলডিসি উত্তোরণের পর আমাদের উদ্যোক্তারা এ সুবিধা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হবেন, এমতাবস্থায় বৈশ্বিক বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেসরকারিখাতকে দক্ষতা ও সক্ষমাত বাড়াতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এলক্ষ্যে বাণিজ্য সহযোগী দেশসমূহের সাথে দ্রæততম সময়ে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর (এফটিএ) এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বøক গুলোর সাথে বাংলাদেশের অর্ন্তভূক্তি নিশ্চিতকরণ একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও স্থানীয় শিল্পায়নকে বেগবান করতে দেশের সার্বিক রাজস্ব এবং শুল্ক কাঠামোর আমূল সংষ্কার ও অটোমেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরনের উপর তিনি জোরারোপ করেন। এছাড়াও পরিবর্তিত বৈশ্বিক বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশ একটি ‘ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি’ প্রণয়ন করার প্রয়োজন রয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন মশিউল ইসলাম। একই সাথে আমাদের রপ্তানিকৃত পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে ভ্যালু অডিশনের উপর আরো বেশি হারে মনোনিবেশ করার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি তিনি আহবান জানান।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি বলেন, বাস্তব ভিত্তিক শুল্ক কাঠামো প্রণয়নে দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, কোভিড মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থা বাংলাদেশের এলডিসি উত্তোরণের পরিস্থিতিতে জটিল করেছে। তিনি জানান, বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সাথে এফটিএ এবং পিটিএ স্বাক্ষরের লক্ষ্যে সরকার বেশ কিছু গবেষণা পরিচালনা করেছে এবং বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক মনোভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, আমাদের জিডিপিতে করের অবদান মাত্র ৭.৯%, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এলডিসি উত্তোরণের পর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকারকে আরো অধিক হারে ভ্যাট ও কর আহরণের উপর নজর দিতে হবে, তিনি মত প্রকাশ করেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফারহানা আইরিছ বলেন, শুল্ক কাঠামো সহজীকরণের পাশাপাশি আমাদেরকে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানো ও পণ্য বহুমুখীকরণের উপর নজর দিতে হবে, কারণ বর্তমানে আমাদের রপ্তানি ও আমদানির মধ্যে বিশাল ঘাটতি রয়েছে। তিনি জানান, ভূটান, নেপাল এবং শ্রীলংকার সাথে এফটিএ স্বাক্ষরের লক্ষ্যে সরকার গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

এনবিআরের প্রথম সচিব ড. মো. নিয়োমুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে দেশের মোট রাজস্বের ৩৪% আসে আমদানি শুল্ক হতে এবং এলডিসি’র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে আমদানি শুল্ক হারে উল্লেখজনক হ্রাস করতে হবে, সেক্ষেত্রে ভ্যাট ও আয়করের উপর বেশি হারে প্রাধান্য দিতে হবে। তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৬টি পণ্যের আমদানি শুল্ক হার কমানো হয়েছে এবং আরো ৬০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাসের লক্ষ্যে এনবিআর কাজ করছে, তবে এক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা যেন ব্যাহত না হয় সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এলডিসি’র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয় শিল্পের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই বলে, তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *