এলএনজি রফতানিতে বিশ্বের শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র
কাতারের পাশাপাশি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রফতানিতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। খুব দ্রুত সরবরাহ সক্ষমতার কারণে গত বছরজুড়ে ক্রেতা দেশগুলোয় মার্কিন এলএনজির চাহিদা ছিল বেশ ভালো। খবর অয়েল প্রাইস ডটকম।
কার্গোর তথ্য পরিষেবা দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র সব মিলিয়ে ৮ কোটি ১২ লাখ টন এলএনজি রফতানি করেছে। শীর্ষে থাকা কাতারের রফতানির পরিমাণও ছিল একই।
রাইস্ট্যাড এনার্জি জানায়, ২০২২ সালের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিপোর্ট এলএনজি অবকাঠামো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে দৈনিক ২০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি রফতানি কমে যায়। বছরের শেষ সময় পর্যন্তও ফ্রিপোর্ট এলএনজির কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি। এ সমস্যায় না পড়লে এলএনজি রফতানিতে কাতারকে ছাড়িয়ে যেত যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ফ্রিপোর্ট এলএনজির রফতানিসহ দেশটির মোট রফতানি ৮ কোটি ৬০ লাখ টনে পৌঁছার সম্ভাবনা ছিল।
জ্বালানি পণ্যের বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, চলতি বছর ফ্রিপোর্ট এলএনজি পুনরায় চালু হলে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি রফতানি ২০২২ সালের তুলনায় ১১ শতাংশ বাড়তে পারে, যা দেশটিকে এককভাবে বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারকে পরিণত করবে।
তবে আগামী বছরগুলোয় রফতানিতে ঊর্ধ্বমুখী এ ধারা অব্যাহত রাখতে দেশটিকে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কারণ কাতার এরই মধ্যে বার্ষিক রফতানি সক্ষমতা ১০ কোটি ঘনফুটেরও বেশি বাড়াতে কাজ করছে।
যদিও চাহিদা নিয়ে দেশটির এলএনজি উৎপাদকদের দুশ্চিন্তা করতে হবে না বলে মনে করছে রাইস্ট্যাড। কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এরই মধ্যে ইউরোপ রাশিয়া থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে এলএনজি সরবরাহ থেকে সরে আসছে। এ পরিস্থিতিতে ব্লকটির বড় বিকল্প উৎস হয়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ার বাজারেও চাহিদা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এতে আগামী দিনগুলোয় জ্বালানিটির দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। বর্তমানে এশিয়ার বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে এলএনজি লেনদেন হচ্ছে। প্রতি এমএমবিটিইউর দাম পড়ছে প্রায় ২৯ ডলার, যেখানে ইউরোপে বিক্রি হচ্ছে ২২ ডলারে। বেশি দামের কারণে আগামী দিনগুলোয় এশিয়ার বাজারে যুক্তরাষ্ট্র রফতানি ব্যাপক বাড়াবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
বিপুল পরিমাণ শেল গ্যাস (পাথরের ভাঁজ থেকে উত্তোলিত) মজুদ ও বিশ্বব্যাপী বর্ধমান চাহিদার কারণে ২০১৬ সালে এলএনজি রফতানি শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরের আগ পর্যন্ত দেশটির শীর্ষ রফতানি গন্তব্য ছিল এশিয়া। কিন্তু রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় ইউরোপ মার্কিন এলএনজির প্রধান ক্রেতা হিসেবে আভির্ভূত হয়।
ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার ওপর কয়েক ধাপে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সবশেষ ৫ ডিসেম্বর রুশ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। আগামী মাসে পরিশোধিত জ্বালানি পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
২০২১ সালে এলএনজি রফতানিতে বিশ্বের শীর্ষ তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু গত বছরের শুরুর দিকে নতুন একটি প্লান্ট স্থাপন দেশটির রফতানিতে বড় প্রবৃদ্ধি এনেছে।