এলএনজি ব্যবসায় ধস

তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবে দেশে দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক বাণিজ্যও। শীর্ষ ভোক্তা দেশ হিসেবে চীনেও এলএনজির ব্যবহার বাড়তে শুরু করেছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার সিংহভাগ আমদানি করা এলএনজি দিয়ে পূরণ করে চীন। এ কারণে চীনের বাজার এলএনজি রফতানিকারকদের জন্য ব্যবসার বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। তবে বিদায়ী বছরে এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি মার্কিন এলএনজি রফতানিকারকরা। এর জন্য চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধকে দায়ী করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৮ সালে চীন-মার্কিন এলএনজি ব্যবসায় রীতিমতো ধস নেমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের উপকূল থেকে চীন অভিমুখে এলএনজিবাহী কার্গো ছেড়ে যাওয়ার পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় এক-পঞ্চমাংশ কমেছে। খবর ফোর্বস, রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।

২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর পাল্টাপাল্টি আমদানি শুল্ক আরোপ করে দুই দেশ। ধীরে ধীরে বাড়তি আমদানি শুল্ক যুক্ত পণ্যের তালিকায় আরো বিভিন্ন পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা এলএনজির ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করে বেইজিং। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যকার এলএনজি বাণিজ্যে ধস নামতে শুরু করে। এমনকি শীত মৌসুমে চীনের বাজারে জ্বালানি পণ্যটির রেকর্ড চাহিদাও চীন-মার্কিন এলএনজি বাণিজ্যকে চাঙ্গা করতে পারেনি।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের উপকূল থেকে চীন অভিমুখে সাকল্যে ছয়টি এলএনজিবাহী কার্গো ছেড়ে গেছে। আগের বছরের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের উদ্দেশে ২৫টি এলএনজিবাগী কার্গো ছেড়ে গিয়েছিল। সামগ্রিক হিসাবে, গত বছর মার্কিন রফতানিকারকরা চীনে সব মিলিয়ে ২৪ কার্গো এলএনজি রফতানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কম। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের বাজারে মোট ৩০ কার্গো এলএনজি রফতানি হয়েছিল। সেই হিসাবে, চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন অভিমুখে এলএনজিবাহী কার্গো গমন কমেছে এক-পঞ্চমাংশ।

২৪টির মধ্যে ১৮টি কার্গো চীনের উদ্দেশে মার্কিন উপকূল ছেড়ে গেছে বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন), বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর আগে। ২০১৭ সালে চীনে মোট ১ লাখ ৩ হাজার ৪০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি রফতানি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর এর পরিমাণ ৯০ হাজার কোটির ঘনফুটের নিচে নেমে এসেছে।

এলএনজির শীর্ষ ভোক্তা ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানিকারক দেশ হিসেবে চীনের ক্রমবর্ধমান বাজার জ্বালানি পণ্যটির রফতানিকারকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাড়তি চাহিদার জের ধরে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির আমদানিও উত্তরোত্তর বাড়ছে। চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের প্রথম ১১ মাসে (জানুয়ারি-নভেম্বর) আন্তর্জাতিক বাজার থেকে দেশটিতে সব মিলিয়ে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টন এলএনজি আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে নভেম্বরে চীনের বাজারে জ্বালানি পণ্যটির আমদানি রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছায়। এ সময় দেশটিতে মোট ৫৯ লাখ ৯০ হাজার টন এলএনজি আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। গত বছরই এলএনজি আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় দক্ষিণ কোরিয়াকে টপকে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে চীন।

চাহিদা ক্রমেই বাড়তে থাকায় চীনা এলএনজি বাজারে অবস্থান পোক্ত করা নিয়ে কাতার, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ক্রমবিকাশমান এ বাজারকে সামনে রেখেই ২০১৯ সাল শেষে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে ওয়াশিংটন। এমন পরিস্থিতিতে চীনের বাজারে মার্কিন এলএনজি রফতানি কমার খবর জ্বালানি পণ্যটির তৃতীয় শীর্ষ রফতানিকারক হওয়ার প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রকে পিছিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এর ফলে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে মার্কিন এলএনজি রফতানি খাত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *