এলএনজির শীর্ষ রফতানিকারক হবে যুক্তরাষ্ট্র

বিশ্ব অর্থনীতি যত বিস্তৃত হচ্ছে, এগিয়ে থাকা অর্থনীতির দেশগুলোয় তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার ততই বাড়ছে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ছাড়াও ইউরোপের দেশগুলো গ্যাসভিত্তিক অর্থনীতির দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। বিশেষত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ব্যবহার বাড়িয়েছে এসব দেশ। বিশ্লেষকদের মতে, দাম তুলনামূলক সস্তা হওয়া ও পরিবেশ দূষণে প্রভাব কম রাখার কারণে দেশে দেশে জ্বালানি পণ্যটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর এ সুযোগটিই কাজে লাগাতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এলএনজি বাণিজ্যে রফতানিকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তা-ই নয়, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এলএনজির শীর্ষ রফতানিকারক দেশ হিসেবে জ্বালানি বাজারে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করবে। আর এ সময়ের মধ্যে শীর্ষ আমদানিকারক দেশ হিসেবে এলএনজির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অবস্থান জোরদার করবে চীন। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) পর্যবেক্ষণে এ সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।

প্যারিসভিত্তিক আইইএর প্রাকৃতিক গ্যাসবিষয়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জেয়ান-ব্যাপ্টিস্ট ডাবরিউল বলেন, বৈশ্বিক এলএনজি বাজারে রফতানিকারক দেশ হিসেবে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে কাতার। শীর্ষ অবস্থানের দখল নিতে দেশটির সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা করছে অস্ট্রেলিয়া। তবে এলএনজির বাজারে কাতার ও অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সাল নাগাদ শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় দেশটি থেকে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি ১০ হাজার কোটি ঘনমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা কাতার ও অস্ট্রেলিয়া থেকে রফতানি হওয়া এলএনজির তুলনায় বেশি।

তবে এলএনজির রফতানি বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থানের ইতিহাস খুব একটা পুরনো নয়। প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনকারী দেশগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পর প্রতি বছর দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি হয়। জ্বালানি পণ্যটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় দেশটি সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন ও রফতানিতে এগিয়ে থাকলেও এলএনজির বাজারে বেশ পিছিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা বাড়তে থাকায় এলএনজি রফতানিতে অবস্থান পোক্ত করার উদ্যোগ নেয় ওয়াশিংটন।

এ ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এলএনজি রফতানিকারকদের তালিকায় নাম লেখায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদিন গড়ে ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি রফতানি হয়েছিল। বছরান্তে এলএনজি রফতানি প্রায় চার গুণ বাড়িয়ে দেয় ওয়াশিংটন। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদিন গড়ে ১৯৪ কোটি ঘনফুট এলএনজি রফতানি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইআইএ। গত বছর দেশটি থেকে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি আরো বেড়ে দৈনিক ২০০ কোটি ঘনফুট ছাড়িয়ে গেছে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডা, মেক্সিকোসহ ১৫টির বেশি দেশে এলএনজি রফতানি হয়েছে।

চলতি শতকের প্রথম দশকে এলএনজি উৎপাদন ও জ্বালানি পণ্যটির রফতানিতে মনোযোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় টেক্সাস ও লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের সীমানায় এক হাজার একরের বেশি জায়গাজুড়ে দেশের সবচেয়ে বড় স্যাবাইন পাস এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে ১ হাজার ৭০০ কোটি ঘনফুট ধারণক্ষমতার পাঁচটি ট্যাংক রয়েছে। এলএনজি রফতানির জন্য মেক্সিকো উপসাগর ঘেঁষে রয়েছে দুটি বিশেষ ডক ও রেলপথ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে রফতানি হওয়া অর্ধেকের বেশি এলএনজি এ টার্মিনাল থেকে গন্তব্যে যাত্রা করে।

এদিকে এলএনজি আমদানিকারক দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় জাপানের পর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। তবে ২০২৪ সাল নাগাদ দেশটি শীর্ষ এলএনজি আমদানিকারক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে বলে জানিয়েছে আইইএ। প্রতিষ্ঠানটির জ্যৈষ্ঠ বিশ্লেষক জেয়ান-ব্যাপ্টিস্ট ডাবরিউল বলেন, আগামী পাঁচ বছরে চীনের বাজারে এলএনজি আমদানি ১০ হাজার কোটি ঘনমিটার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটি জ্বালানি পণ্যটির আমদানিকারকদের তালিকায় জাপানকে টপকে শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছে যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *