এফবিসিসিআই’র মুজিব কর্নার ও ডিরেক্টরস লাউঞ্জ’র উদ্বোধন এবং ২০৩১ সালের আগেই উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হবে বাংলাদেশ: তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার

২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হবার লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বে দুই বছর আগেই বাংলাদেশ কাক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছেছে। একই ধারাবাহিকতায় ২০৩১ সালের আগেই উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হবে বাংলাদেশ। সেজন্য বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে। শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২) রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে মুজিব কর্নার ও ডিরেক্টরস লাউঞ্জ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এ মন্তব্য করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্নাঢ্য জীবন, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের নানামুখী কর্মকান্ডের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা বেশকিছু দুর্লভ আলোকচিত্র ও তাঁর জীবন আদর্শের ওপর রচিত কিছু বইয়ের একটি লাইব্রেরী দিয়ে এফবিসিসিআই’র দৃষ্টিনন্দন মুজিব কর্নার সাজানো হয়েছে। মুজিব কর্নারের পাশেই এফবিসিসিআই পরিচালকদের জন্য লাউঞ্জ স্থাপন করা হয়েছে । উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পী হায়দার হোসেনের উপস্থিতিতে কোভিড সচেতনতামূলক সঙ্গীতও প্রকাশ করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনায় মুজিব কর্নার স্থাপনের জন্য এফবিসিসিআই’র নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বেসরকারি খাত তথা দেশের ব্যবসায়ীদের অসামান্য অবদান রয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে ধারণ করে এ দেশের ব্যবসায়ী সমাজ দেশ বিনির্মাণে আরো বেশি অবদান রাখবেন বলে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেন, বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন অনেকেই এ দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যা দিয়েছিলো। এ দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১ ডলার হতে অন্তত ১’শ বছর লাগবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন অনেক বিখ্যাত অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু সব ভবিষ্যদ্বানী মিথ্যা প্রমাণ করে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো একটি দেশ। এখন এ দেশের মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলারের ওপর। আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বের ৯২তম অবস্থানে থাকা এ দেশ এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্রয়ক্ষমতার দিক দিয়ে ২৯তম এবং জিডিপির হিসাবে ৩১তম শীর্ষ অর্থনীতির দেশ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাস অনুযায়ী শিগগির বিশ্বের ২৪তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে কম মাথাপিছু জমির দেশ হবার পরেও, বাংলাদেশ ধান, মাছ, সবজি, আলুসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ।

প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেত্বত্বে এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, কোভিড মহামারিতে দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই অন্যান্য দেশের তূলনায় বাংলাদেশে ভালো অবস্থানে আছে।

এসময় মন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ভবিষ্যতেও বহাল থাকলে, নির্ধারিত ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশ ও উন্নয়ন বিরোধী সমালোচনা না করার আহ্বান জানান ড. হাছান মাহমুদ।

এর আগে সভাপতির বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। এ সময় তিনি শিল্পখাতে দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি মোকাবিলায় শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকশিল্পসহ অনেক খাতে দক্ষ মানুষের অভাব রয়েছে। শিক্ষিত লোকবল থাকলেও, শিল্পের চাহিদা মাফিক জনবল পাওয়া যাচ্ছেনা।

নিম্নআয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, এই অগ্রযাত্রায় বেসরকারি খাত সবসময়েই সরকারের সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রী জাতির সামনে যেসব উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন, তা অর্জনে ব্যবসায়ীরা সবসময়েই সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।

দেশ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর দুরদর্শীতার কারণেই করোনা মহামারীর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মোঃ জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক এই মহামারির ধাক্কা সামলাতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের পক্ষে এফবিসিসিআই দেশব্যাপী মাস্ক, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, সিলিন্ডারসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম বিতরণ করেছে।

এসময় সভাপতি জানান, অমিক্রনের সংক্রমণ প্রতিরোধে ২য় দফায় আবারও দেশব্যাপী মাস্ক বিতরণ কর্মসূচি বিতরণ শুরু করেছে এফবিসিসিআই।

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে এফবিসিসিআই’র সিনিয়র ভাইস প্রসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩ বছর ৭ মাসের দেশ পরিচালনায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে ব্যক্তিখাত সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব রাখছে। কিন্তু তারপরও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণে ব্যবসায়ীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়না। গত ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অব চেম্বার্স প্রেসিডেন্টস’র বৈঠকে ব্যবসায়ীদের করা দাবি তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এফবিসিসিআই সভাপতিকে প্রতিমন্ত্রীর সম-মর্যাদা প্রদান করার আহ্বান জানান মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মোঃ হাবীব উল্লাহ ডন বলেন, এফবিসিসিআইতে দীর্ঘদিন পরিচালকদের জন্য কোন বসার স্থান ছিল না। বর্তমান পর্ষদ পরিচালকদের জন্য আলাদা লাউঞ্জ স্থাপন করেছে। এসময় তিনি দেশ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

আরো বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু আলম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মোঃ আমিন হেলালী ও এম.এ রাজ্জাক খান রাজ ও অন্যান্য পরিচালকরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআই’র মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *