এডিপি অগ্রগতি ২৪ শতাংশ, বেহাল স্বাস্থ্য-বাণিজ্য
চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন বেড়েছে। মহামারি করোনার সংকট কমার প্রভাব দেখা দিয়েছে এডিপি বাস্তবায়নে। তবে এডিপি বাস্তবায়নে ওমিক্রনের প্রভাব এখনও পড়েনি। এসময় বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তবে গেল ছয় মাসে ১০ শতাংশ এডিপিও বাস্তবায়ন করতে পারেনি বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসহ ৭ বিভাগ ও মন্ত্রণালয়।
গত ছয় মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছে ৫৬ হাজার ৯৬২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে খরচ হয়েছিল ৫১ হাজার ২৬৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
রোববার (২৩ জানুয়ারি) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
আইএমইডি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ২৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ৫৭ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ৪৯ হাজার ৬৪৪ শতাংশ।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ২৭ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ছিল ৪৪ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মোট প্রকল্পের সংখ্যা এক হাজার ৫৯১টি। এরমধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প এক হাজার ৩৭২টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১২০টি, উন্নয়ন সহায়তা থোক থেকে ৯টি এবং নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ৯০টি।
এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। ছয় মাসে মাত্র ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। ছয় মাসে বিভাগটি ২২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা খরচ করেছে। অথচ তাদের মোট বরাদ্দ এক হাজার ৪২১ কোটি টাকা।
করোনা সংকটেও এডিপি বাস্তবায়ন সন্তোষজনক না স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে। সেখানে অগ্রগতি ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। স্বাস্থ্যসেবায় মোট এডিপি বরাদ্দ রয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। অথচ ছয় মাসে তাদের খরচ হয়েছে মাত্র এক হাজার ২৭৮ কোটি টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও এডিপি বাস্তবায়ন হারে ধীরগতি দেখা গেছে। এ মন্ত্রণালয়ে অগ্রগতি মাত্র ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। এ মন্ত্রণালয়ে মোট বরাদ্দ ৪১৯ কোটি টাকা। অথচ খরচ হয়েছে মাত্র ২২ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
আইএমইডি সূত্র জানায়, বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এডিপি বাস্তবায়নে ছয় মাসে ১০ শতাংশ স্পর্শ করতে পারেনি। ছয় মাসে আর্থিকপ্রতিষ্ঠান বিভাগের অগ্রগতি মাত্র ৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। খরচ হয়েছে মাত্র ১২ কোটি ৫৭ লাখ। অথচ এ বিভাগে মোট বরাদ্দ ১৩৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতি মাত্র ৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ১০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। পররাষ্ট্রে মোট বরাদ্দ ১২৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের অগ্রগতি ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ, টাকার অঙ্কে দুই কোটি ৮৯ লাখ টাকা। কর্মকমিশনে মোট বরাদ্দ ৩৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন মাত্র ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ৫৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এ বিভাগের মোট বরাদ্দ এক হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ২৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ১১ দশমিক ৫২, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ২২ দশমিক ১৯, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণে ২২ দশমিক ১১, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ১৫ দশমিক ৫২, জননিরাপত্তা বিভাগে ২০ দশমিক ৮৫, ভূমি মন্ত্রণালয়ে ১৭ দশমিক ৫৮, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ১৯ দশমিক শূন্য ৯, অর্থ বিভাগে ১৭ দশমিক শূন্য ১ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।
এছাড়া পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৯, আইন ও বিচার বিভাগে ৩ দশমিক ১০, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ২ দশমিক ৫৩, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে ৮ দশমিক ৪৮, আর্থিকপ্রতিষ্ঠান বিভাগে ৫, পররাষ্ট্রে ৪ দশমিক ৯৯ ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের এডিপি বাস্তবায়ন হার মাত্র শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, ৯১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া জাতীয় সংসদবিষয়ক বিভাগের মোট এডিপি বাস্তবায়ন হার ৮০ শতাংশ।
এডিপিতে ১০টি বৃহৎ প্রকল্পে মোট ৫৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা পেয়েছে। এরপর মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ছয় হাজার ১৬২ কোটি, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে (পিইডিপি–৪) পাঁচ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে মেট্রোরেলে চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে তিন হাজার ৮২৩ কোটি ও পদ্মা সেতুতে তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।