এখন সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর’
সবার জানা, ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীম অনেক পরিশ্রমী। যে কারও চেয়ে বেশি সময় কাটান অনুশীলনে, বাড়তি ঘাম ঝরান। ব্যাটিং শৈলিটাও খুব পরিপাটি। সেই মুশফিক ব্যক্তিজীবনেও অনেক সাজানো গোছানো। নিজের ব্যবহার করা জিনিসপত্র, ক্রিকেট গিয়ার্সসহ অন্যান্য সবকিছুই খুব যত্ন সহকারে রেখে দেন, সংরক্ষণ করেন।
এতদিন অনেক যত্ন করে তার ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির ব্যাট নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। অবশেষে তা নিলামে তুলেছেন। করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেই এ প্রয়াস। শনিবার রাতে শুরু হয়ে গেছে সে নিলাম পর্ব।
এ প্রসঙ্গে নিজর অনুভব, উপলব্ধির কথা জানিয়েছেন, ‘মি. ডিপেন্ডেবল’। নিলাম শুরুর বিষয়ে ফেসবুক লাইভে এসে জাতীয় দলের এ সফল ও নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান জানিয়ে দিলেন, ‘খারাপ লাগার প্রশ্নই ওঠে না। বরং এ ব্যাট নিলাম অন্যরকম ভাললাগার।’
পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে মুশফিকের ব্যাখ্যা, ‘এটা আসলে একটা অনেক বড় সৌভাগ্যের বিষয়। কারণ অনেকেই হয়তো অনেকভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছেন। তবে তারা চাইলেও এমনভাবে এই ব্যাট দিয়ে কন্ট্রিবিউট করতে পারবে না। আল্লাহর অশেষ রহমত তিনি আমাকে সে সুযোগ দিয়েছেন। এ ক্যারিয়ারে যতটুকু কীর্তিই করেছি, তার মধ্যে আমার কাছে এটা স্পেশাল। আমাদের একটু ছোট্ট ত্যাগের মাধ্যমে যদি কিছু মানুষ সুস্থ থাকে, ভাল থাকে, তাদের একটু উপকার হয়- সেটাই অনেক বড় প্রাপ্তি।’
মুশফিক আরও জানিয়েছেন, ক্রিকেটাররা ক্রিকেট খেলে মানুষকে বিনোদন দেন। তাদের মুখে হাসি ফোঁটান। কিন্তু খেলার মাধ্যমে তো আর কারও জীবন বাঁচানোর কাজে শরিক হওয়া যায় না। অসহায়, দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ হয় না। তবে এই ব্যাটের নিলামের মাধ্যমে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ, অর্থকষ্টে ভোগা অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ হবে।
তার ভাষ্য, ‘আমরা সারাজীবন ক্রিকেট খেলি, বিনোদন দেই। চিত্ত পরিতোষ হয় তাতে। কিন্তু মানুষের বেঁচে থাকার ওপরে আর কিছু হতে পারে না। এই একটা সুযোগ এসেছে। আমি দ্বিধা করিনি। যে যে স্মারক নিলামে তুলেছেন, তা যত বেশি দামে বিক্রি হবে, ততই মানুষের উপকারে আসবে। আমাদের কোন ছোট্ট সহযোগিতা যদি মানুষের উপকারে আসে, সেটাও অনেক ভাল লাগার।
করোনা তাকে দীর্ঘ সময় নিজ বাসায় পিতা, মাতা আর স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। সে সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে মুশফিক স্বীকার করেছেন, হ্যাঁ! তার ক্যারিয়ারে এর আগে এত দীর্ঘ সময় বাড়িতে থাকা হয়নি।
তবে মুশফিক এ ছুটি উপভোগ করছেন না। তার উপলব্ধি, ‘হ্যাঁ! এটা সত্যি যে গত ১৫ বছরে এমন ছুটি মানে এত দীর্ঘ দিন বাড়িতে থাকার সুযোগ হয়নি। এত দীর্ঘ ছুটি পাইনি কখনও। তবে এমন ছুটি চাইনি আমি। আমরা হয়তো আল্লাহর রহমতে ভাল আছি। কিন্তু আশপাশের অনেকেই ভাল নেই। শঙ্কায় আছে, কষ্টের ভেতরে দিন যাচ্ছে।’
সেই সব মানুষের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে মুশফিকের আকুতি, ‘দোয়া চাই খুব তাড়াতাড়ি যেন এ সংকট কেটে যায়। আমি শুধু না, আমার পরিবার ও পাড়া প্রতিবেশীরাই নন, সবাই যাতে ভাল থাকে, সুস্থ থাকে সে দোয়াই করি।’