একজন দুলাল আংকেল এবং বঙ্গবন্ধু

মো. ইয়াকুব আলী

মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধাপরাধ নিয়ে আমার তেমন কোনো ধারণা ছিল না মাধ্যমিক পর্যন্ত। বরং উল্টো ধারণা পোষণ করতাম। এই উল্টো ধারণা অবশ্য আমি আমার পরিবারের কাছ থেকে পাইনি। পেয়েছিলাম আমার আশপাশের পরিবেশ থেকে। এমন ধারণা হওয়ার প্রধান কারণ ছিল আমার মায়ের নাম। মায়ের নাম বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নামের সঙ্গে মিল থাকাটাই ছিল আমাদের জন্য কাল। আমাদের এলাকায় একটা ছড়া খুবই প্রচলিত ছিল। সেটা হচ্ছে;

 

`হাসিনা লো হাসিনা

তোমার নাচায় আর নাচি না

তোমার বাপের নাচায় নেচেছিলাম

ঘরবাড়ি ছেড়েছিলাম।‘

 

এমন করে আরও অনেক কাজের বর্ণনা দিয়ে আমাদের দেখলেই ছড়াটাকে সুর করে বলে উঠতো আমাদের পাড়ার ছেলেমেয়েরা। তখনও জানতাম না শেখ মুজিবুর রহমান কে আর কেনইবা তার মেয়ের নাম হাসিনা। আর কেনইবা তাদের কারণে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়েছিল। কিন্তু তাদের ওপর খুব রাগ হতো আমাদের দুই ভাইয়ের।

কিন্তু তাদের হাতের কাছে না পাওয়ার রাগটা মেটাতাম যে ছড়া বলতো তাকে ইচ্ছেমতো ধোলাই দিয়ে। তবুও পরেরবার দেখা হলে আবারো ছড়া বলে কেটে পড়তো। শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আমার শৈশবের স্মৃতি বলতে এটাই। এর বাইরে প্রতি বছর ১৫ আগস্ট আসলে ফকির পাড়ার মান্নান চাচা কাঙালি ভোজের আয়োজন করতেন নিহার বাবুর বাড়ির আঙিনায়।

পাড়ার সব ছেলেমেয়ে দলবেঁধে সেখানে খেতে যেত। কিন্তু আমরা দুই ভাই যেতে চাইতাম না। মা অনেকবার বলতেন কিন্তু আমরা মোটেও রাজি হতাম না। অবশেষে পাশের বাড়ির হানিফ দুলাভাই আমাদের ধরে টেনে নিয়ে যেত। সেখানে সারাক্ষণই মাইকে গান বাজতো।

শুনতে শুনতে বেশ কিছু গান আমাদের মুখস্থও হয়ে গিয়েছিল। গানের ফাঁকে ফাঁকে একজন লোকের বাজখাঁই গলা শোনা যেত ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।‘

এরপর বন্ধু পাভেলের মাধ্যমে পরিচয় হলো একজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে। তার নাম সোহরাব গনি দুলাল। আমরা সবাই দুলাল আংকেল বলি। এই মানুষটা সম্মুখসমরে যুদ্ধ করেছেন এটা আমার জন্য অনেক বড় বিস্ময় ছিল। তবে তার যে জিনিসটা আমাকে মুগ্ধ করে সেটা হলো ব্যবহার। একেবারে শিশুদের মতো আচরণ তার।

তিনি আমাদের নিজের পুত্রসম স্নেহ করেন। আমরা একদল ছেলেমেয়ে তার বাসায় যেকোনো সময় হাজির হয়ে আড্ডা দিতাম। চুলায় যা রান্না হচ্ছে সেটাই খেতাম একেবারে নিজের বাড়ির মতো। আমি জীবনের অনেক সময় এই মানুষটার সংস্পর্শে কাটিয়েছি।

দুলাল আংকেলের সম্পর্কে কিছু ব্যক্তিগত তথ্য এখানে দিয়ে রাখি। নিজে দুই বছর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে সরকারি চাকরি করার সুবাদে জানি যে বাংলাদেশের ঠিকাদার সম্প্রদায় কতটা ক্ষমতাশালী। আর তাদের ক্ষমতার উৎস হচ্ছে তাদের টাকা কিন্তু দুলাল আংকেল একজন ঠিকাদার হয়েও ছিলেন কপর্দক শূন্য।

এই মানুষটার সঙ্গে পরিচয় হয় উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার পর। তার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের কথা আমার এখনও মনে আছে। একটা পুরোনো আমলের আটপৌরে টেবিলে বসে রুটি আর পটল ভাজি দিয়ে নাস্তা করছেন। আমার সঙ্গে পরিচয়ের পর বললেন, ইয়াকুব সংকোচ করো না বসে পড়।

আমি টেবিলে তার পাশে বসতে ইতস্তত বোধ করছি দেখে আমার হাত ধরে টেবিলে বসিয়ে দিলেন। তারপর নিজের হাতে রুটির মধ্যে একটা পটল ভাজি দিয়ে সেটাকে রোল বানিয়ে আমার হাতে তুলে দিলেন যেন যুগ যুগ ধরে আমি তাদের বাড়িতে আসি আর এভাবেই নাস্তা খাই।

এরপর তিনি আমাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন। বুয়েটে সবে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। হাতে টাকা-পয়সাও তেমন নেই। তখন আমার ছোট ভাইটা জিলা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ পেয়ে গেলো। তাকে জিলা স্কুলে ভর্তিও করে দিলাম। মুশকিল হলো জিলা স্কুলে আসা-যাওয়া করবে কীভাবে। আমার যে সাইকেলটা ছিল সেটা অনেক উঁচু তাই ওর পক্ষে চালানো সম্ভব নয়।

একটা ছোট সাইকেল কিনে দিলে তার চালাতে সুবিধা হয়। এই কথাটা দুলাল আংকেলের সঙ্গে আলাপ করতেই তিনি বললেন চল একদিন ডিসি সাহেবের কাছে যাই। তার একটা তহবিল আছে গরিব ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য। বললাম, আংকেল আমি এর আগে রেজিস্ট্রেশনের সময় তার কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নিয়েছি।

তিনি বললেন তাতে কি হয়েছে তুমি তো আর মিথ্যা বলে নিচ্ছ না। বললাম তা ঠিক। তারপর একদিন দুলাল আংকেলের সঙ্গে ডিসি আব্দুস সালাম সাহেবের অফিসে গেলাম। তিনি সাহায্য দেওয়ার সময় আমাকে ডেকে পাঠালেন। গিয়ে দেখি তার সামনের চেয়ারেই দুলাল আংকেল বসে। আমার দিকে তাকিয়ে ডিসি বললেন, তুমি তো জানো আমি একজনকে এক হাজারের বেশি অর্থ সাহায্য দেই না। কিন্তু তার কারণে আমি তোমাকে দুই হাজার টাকা অর্থ সাহায্য দিচ্ছি।

আমি তো মহা খুশি। পরদিনই এক বন্ধুর সঙ্গে গিয়ে বাজার থেকে একটা লাল রঙের হিরো সাইকেল কিনে আনলাম ছোট ভাইটার জন্য। সেই সাইকেলটা আমাদের সবারই খুব পছন্দের ছিল। আমিও পরে কুষ্টিয়া গেলে সেই সাইকেলেই চড়তাম। ঢাকায় চলে আসার পর দুলাল আংকেলের সঙ্গে নিয়মিতই যোগাযোগ ছিল চিঠির মাধ্যমে। আমি যখনই কোনো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যেতাম তখনই আংকেলকে চিঠি লিখতাম।

আংকেল আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে সুন্দর সুন্দর চিঠি লিখতেন। তার নিজেরই তখন নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। ঋণের জালে জড়িয়ে নিজের বসতভিটা বিক্রি করে দিয়েছেন। থাকেন একটা ভাড়া বাড়িতে কিন্তু তার আচরণে আমি কখনওই এমন কোনো কিছু লক্ষ্য করিনি যেটা দেখে মনে হতে পারে তিনি কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন।

তার মুখে সবসময়ই একটা পবিত্র হাসি লেগেই থাকতো। তাই তাকে দেখলেও আমি মনে অনেক জোর অনুভব করতাম। পরে তার মেয়ে রূপার কাছ থেকে জেনেছি দুলাল আংকেল ছিলেন পরিবারের সবচেয়ে বড় সন্তান; তাই অবধারিতভাবেই ভালো ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও পড়াশোনা বেশিদূর এগিয়ে নিতে পারেননি ছোট ভাইবোনদের মানুষ করতে গিয়ে।

তাই যখন আমার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তখন যেন তিনি আমার মধ্যে তাকে খুঁজে পেয়েছিলেন। তাই আমার বন্ধুদের মধ্যে আমাকে সবচেয়ে বেশি স্নেহ করতেন। অবশ্য আমি আন্টি এবং তার মেয়ে রুপা ও নিপার অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়েছি ভাই হিসেবে সে গল্প অন্য কোনোদিন। আর তার ছেলে অমিত ছিল যেন আমারই ছোট ভাই।

তিনি একদিন আমাদের ডেকে একটা ছবি দেখালেন। শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরে একদল মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। দুলাল আংকেল মুজিবুর রহমানের পাশেই দাঁড়িয়ে। দুলাল আংকেল ছবির গল্পটা শোনালেন। যুদ্ধ শেষে দেখা করতে গিয়েছিলেন কুষ্টিয়ার বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা মিলে, তখন তোলা ছবিটা। পরিচয় পর্বে যখন আংকেল তার নাম বললেন, দুলাল তখন না কি শেখ মুজিবুর রহমান তার দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন, আলালের ঘরের দুলাল তাহলে আমার কোলে বসে পড়। তাই পরের ছবিতে দুলাল আংকেলকে কোলে নিয়ে বঙ্গবন্ধু ছবি তুলেছিলেন।

শেখ মুজিবুরের ছবি দেখে আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আমার শৈশবের দিনগুলোর কথা বললাম। আমার গলার স্বরে স্বাভাবিকভাবেই উষ্মা প্রকাশ পাচ্ছিল কারণ এই মানুষটার জন্যই আমরা শৈশবে একটা বিভীষিকাময় সময় পার করেছি। তখন দুলাল আংকেল শান্তভাবে আমার কথাগুলো শুনলেন তারপর ধিরস্থির আমাকে মুক্তিযুদ্ধ এবং তাতে শেখ মুজিবুর রহমানের কি ভূমিকা সেটা বিস্তারিত বুঝিয়ে দিলেন।

তার বলার ভঙ্গিতে যে আত্মবিশ্বাস ছিল সেটার কারণেই হয়তোবা কথাগুলো তৎক্ষণাৎ বিশ্বাস করলাম। আমার মনে তখন একটাই প্রশ্ন খেলা করছিল তাহলে কেন গ্রাম বাংলায় তার ভূমিকার উল্টোটা প্রচার করা হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক যত বই হাতের কাছে পেয়েছি সব পড়ে ফেলেছি এমনকি নিজের পাঠ্যপুস্তক পড়া বাদ দিয়ে হলেও। তখন থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানার কৌতূহল তৈরি হয়েছিল মনে সেটা থাকবে আজীবন।

যখন শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রকাশ পেলো আমি মনে মনে খুবই খুশি হলাম। একদিন আজিজ সুপার মার্কেটের নিচতলায় পাঠক সমাবেশে গিয়ে বইটা খোঁজ করলাম। পেয়েও গেলাম এক কপি কিন্তু দাম দেখে দমে গেলাম এবং মন খারাপ করে ফিরে আসলাম। একটা বইয়ের পেছনে এতগুলো টাকা খরচ করা তখন আমার কাছে নিতান্তই বিলাসিতা ছিল।

বইটার দাম দেখে বিক্রেতাকে বললাম, এই বইটার অন্ততপক্ষে একটা করে কপি বাংলাদেশের প্রত্যেক পরিবারে বিনামূল্যে দেওয়া উচিত তাহলে সবাই সহজেই তার জীবনী জানতে পারবে। আমার কথা শুনে বিক্রেতা আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন আমি এইমাত্র মঙ্গলগ্রহ থেকে টুপ করে খসে পৃথিবীতে পড়েছি।

শেখ মুজিবুর রহমানকে মেরে ফেলার পর যে ধরনের অপপ্রচার হয়েছিল যার শিকার হয়েছিলাম আমি শৈশবে সেটা থেকে বের হতে আমার প্রায় ২০ বছর সময় লেগে গেছে কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই সেই অপপ্রচারগুলো বিশ্বাস করে সেটাকেই আঁকড়ে ধরে বড় হয়েছে এবং দেশ ও জাতির জন্য নিবেদিতপ্রাণ একজন মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের অহেতুক সমালোচনা করে চলেছে।

আমি সহজভাবে একটা জিনিস বুঝি আমরা বড় হওয়ার পর আব্বার অনেক কর্মকাণ্ডই আমাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল ঠিক একইভাবে আমার ছোট ভাইয়েরা বড় হয়ে যাওয়ার পর আমার দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। কিন্তু একটা জিনিস তো আমরা কখনোই অস্বীকার করতে পারবো না সেটা হলো আমাদের আব্বা আমাদের জন্মদাতা পিতা।

দুলাল আংকেলের সঙ্গে পরিচয় না হলে আমিও হয়তো অন্য দশজন মফস্বলের ছেলের মতোই মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং শেখ মুজিবকে নিয়ে একটা ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে বেড়ে উঠতাম। দুলাল আংকেলই আমার প্রথম শিক্ষক যিনি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমার ভ্রান্তিগুলো দূর করে দিয়েছিলেন।

১৫ আগস্ট সামনে রেখে ভাবছিলাম শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কিছু একটা লিখবো। তাই অবধারিতভাবেই দুলাল আংকেলের নাম সেখানে চলে আসলো। আমি তার মেয়ে রূপাকে মেসেঞ্জারে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার ছবিগুলো পাঠাতে বললাম। তখন রূপা বলল, আব্বা গত প্রায় ১০ দিন ধরে কাউকেই চিনতে পারছিলেন না এখন একটু ভালো আছেন।

তাকে নিয়েই দৌড়াদৌড়ির মধ্যে সময় কেটে যায় তাই আর তোকে ছবিগুলো পাঠানোর সময় পাচ্ছি না। অবশেষে রূপা সময় বের করে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দুলাল আংকেলের ছবি দুটো পাঠিয়েছে। আমি সেই ছবি যতবারই দেখি ততবারই চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যায়।

একজন রাষ্ট্রপ্রধান ঠিক কতটা অমায়িক হলে একটা জেলার কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে এমন আন্তরিকভাবে ছবি তুলতে পারেন। আসলে তিনি তো শুধু রাষ্ট্রপ্রধানই ছিলেন না, ছিলেন গণমানুষের নেতা। তিনি সেটা মনেপ্রাণে উপলব্ধিও করতেন আর অন্ধভাবে বিশ্বাস করতেন বাংলাদেশের মানুষকে যার খেসারত দিতে হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।

আমার খারাপ লাগে আমাদের প্রজন্মও অনেক ভাগ্যবান যে আমরা দুলাল আংকেলদের পেয়েছি যাদের কাছ থেকে আমরা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের পাঠ নিতে পেরেছি কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পাবে না। তাই তারা একধরনের দ্বিধায় ভুগতে পারে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। সেক্ষেত্রে যারা সম্মুখযুদ্ধ করেছিলেন তাদের প্রত্যেকের জীবন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা লিপিবদ্ধ করা উচিত ছিল।

দুঃখের বিষয় রাষ্ট্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় এমন কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত আমার চোখে পড়েনি। বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলের ভোট ব্যাংক বাড়ানোর অপচেষ্টা দেখে সত্যিই মুক্তযোদ্ধাদের জন্য খারাপ লাগে। কারণ তারা এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন বুকে নিয়ে যুদ্ধ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *