ঊর্ধ্বমুখী ভোগ্যপণ্যের দাম

স্টাফ রিপোর্টার

ফেনী, কুমিল্লাসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে তলিয়ে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একটি অংশ। এতে উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চট্টগ্রাম বিভাগে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে ভোগ্যপণের দাম। গত কয়েক দিনে পেঁয়াজ, আলু, চাল, সবজিসহ বেশকিছু নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার থেকে অঞ্চলটিতে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বন্ধ আছে। পাশাপাশি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় খাতুনগঞ্জ, রিয়াজউদ্দিন বাজার, পাহাড়তলীসহ বৃহৎ পাইকারি বাজারের আড়তগুলোয় পেঁয়াজের মজুদ কমেছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে সেগুলো বাড়তি দামে বিক্রি করতে চাইছেন ব্যবসায়ীরা।

পাইকারি মোকামের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, শুধু দুইদিনের ব্যবধানে পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। বুধবার পাইকারিতে প্রতি কেজি পাকিস্তানি পেঁয়াজের দাম ছিল ৭৫-৭৬ টাকা। শুক্রবার সকালে একই মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৯২-৯৩ টাকায়।

এছাড়া বুধবার মিসর থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ বেচাকেনা হয় কেজিপ্রতি ৬৫ টাকায়। শুক্রবার সকালে তা বেড়ে কেজিপ্রতি ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে বুধবার প্রতি কেজি দেশী ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ছিল ৯৭-৯৮ টাকা। শুক্রবার তা বেড়ে ১০৫-১০৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় খুচরায় পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক দিন আগেও খুচরায় প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ৫২ টাকা। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার তা বেড়ে ৫৫-৫৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

আরো জানা যায়, এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ৩-৪ টাকা কমলেও বর্তমানে সেটি আগের দামে বেচাকেনা হচ্ছে। গতকাল প্রতি কেজি আমদানীকৃত মসুর ডাল মানভেদে বেচাকেনা হয়েছে ১০৫-১২৮ টাকায়। এছাড়া দেশী মসুর ডালের দামও কেজিপ্রতি ৫-৭ টাকা বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বন্যা পরিস্থিতির কারণে ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা ডালের দাম বাড়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

এদিকে কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মোটা সেদ্ধ ও আতপ চালের দাম বেড়েছে ৫০-৭০ টাকা। কয়েক সপ্তাহ আগেই চালের বাজার এক দফা বাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির এ সময় দাম উল্লেখযোগ্য বাড়েনি। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হলে মোটা চালের দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও চাল ব্যবসায়ী শান্ত দাশগুপ্ত বলেন, ‘চট্টগ্রামের চালের বাজার নির্ভর করে উত্তরবঙ্গের ওপর। কয়েক দিন ধরে চালের সরবরাহ নেই। তবে চাল পচনশীল না হওয়ায় এখনো পর্যন্ত পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কিন্তু সরবরাহ না থাকার কারণে কেউ কেউ সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে চাল বিক্রির চেষ্টা করছে। যদিও এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কয়েক দিনের মধ্যে সরবরাহ না বাড়লে চালের দামও বাড়তে পারে।’

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে পাইকারি বাজারে বেচাকেনা কমেছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ, আলু, চাল, চিড়া, ডালসহ নিত্যপণ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বন্যার কারণে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাইকারি পর্যায়ে চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই এসব পণ্যের দাম বেশি।

প্রসঙ্গত, আলু, চাল, পেঁয়াজ, সবজি, ডালসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সরবরাহ হলেই দাম স্থিতিশীল থাকে। বুধ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে এসব নিত্যপণ্যের সরবরাহ ৮০-৯০ শতাংশ কমে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *