উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সচেতনতা বাড়াতে হবে

ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো দেশ উন্নয়নের চূড়ায় যেতে পারে না। জাতিসংঘ ঘোষিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। সম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারীর আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সেজন্য নারী উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে বাধা দূর ও সচেতনতা তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। জাতিসংঘ দিবস উপলক্ষে ‘বাণিজ্যে নারীর সম অধিকার’-শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ পরামর্শ দেন।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে উইমেন এন্ট্রাপ্রিনিওয়ার্স নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (ওয়েন্ড)। নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের উন্নয়নে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবারের মতো ব্যবসায় নারীর সম অধিকার প্রতিষ্ঠায় এমন ব্যতিক্রমী সভার আয়োজন করে।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম, ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর জনাব সুদীপ্ত মুখার্জী। সভাপতিত্ব করেন, ওয়েন্ড এর প্রেসিডেন্ট ড. নাদিয়া বিনতে আমিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অর্ধেক জনসংখ্যা নারীকে পেছনে রাখার সুযোগ নেই। নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর উন্নয়নে বর্তমান সরকারের অনেক অবদান রয়েছে। জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সফলভাবে এসডিজি অর্জন করবে। এর আগে বাংলাদেশ সফলভাবে এমডিজি অর্জন করে পুরস্কৃত হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্ববাসীর কাছে রোল মডেল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ শুধু উন্নয়ন নয় সম অধিকার প্রতিষ্ঠায়ও রোল মডেল। সকল ক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি করে দেওয়ায় ছোট থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায় নারীরা এগিয়ে আসছে, সাফল্য আসছে। নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও যেকোন প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সরকার সব সময় আন্তরিক।

সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করছে। সেজন্য নারী আজ চাকরি, ব্যবসাসহ সব খাতে সমান অবদান রাখছেন। নারীর এ অগ্রযাত্রা রোধ সম্ভব নয়।

সুদীপ্ত মুখার্জী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতি যেকোন দেশের চেয়ে অনেক ভালো। সরকার যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৮ শতাংশ নির্ধারণ করেছে তা অর্জন করতে হলে নারী পুরুষের সমতা প্রয়োজন।

ড. নাদিয়া বিনতে আমিন বলেন, আমরা চাই এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাংলাদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে নারীর সম অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক। নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন ওয়েন্ড সে লক্ষ্যে কাজ করছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যবসায় নারীর সম অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলের কাজ করা উচিত। নারী পুরুষের অর্থনেতিক কর্মকান্ড, অর্থনৈতিক দূরত্ব, চাকরি ও উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে দূরত্ব কমানো এবং সকল খাতে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমাতে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন জরুরি। নারীদের ব্যবসার ক্ষেত্রে মুলধারায় নিয়ে আসতে সরকারসহ সকল মহল এগিয়ে আসলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে।

উল্লেখ্য, নারীকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি, উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী, প্রকৃত শ্রমজীবী নারীদের সহায়তা ও আর্থিকভাবে সক্ষম এবং নারীর ক্ষমতায়নে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কাজ করে ওয়েন্ড। প্রতিষ্ঠানটি কর্মক্ষেত্রে নারীর মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে।

এছাড়া প্রথমবারের মতো বাণিজ্যে নারীর সম অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেতনতা তৈরিতে কাজ শুরু করেছে। এর আগে বিশ্ব নারী দিবসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ৬ জন নারীকে সম্মাননা প্রদান করে ওয়েন্ড। নারীদের উন্নয়নের কাজ করার ক্ষেত্রে ওয়েন্ড সরকার থেকে ট্রেড বডি হিসেবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত। নারী উদ্যোক্তাদের সার্পোট ও প্রমোট করার উদ্দেশ্য নিয়ে এ সংগঠনের যাত্রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *