ই-কমার্স খাতে শতভাগ মালিকানায় ব্যবসার সুযোগ বিদেশিদের

এতদিন ই-কমার্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শতভাগ মালিকানায় ব্যবসা করতে পারতেন না। দেশীয় ডিজিটাল কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যৌথভাবে বিদেশিদের বিনিয়োগ করতে হত। এক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারতেন। কিন্তু এখন থেকে ই-কমার্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শতভাগ মালিকানায় ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হলো।

এজন্য ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা-২০১৮’ সংশোধন করা হয়েছে। ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স (সংশোধিত) নীতিমালা-২০২০’ সোমবার (২২ জুন) প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল। মূলত এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এ নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। এতে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি ই-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে বলে আশা করছে সরকার। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কারণে যদি দেশীয় উদ্যোক্তার ক্ষতিতে পড়ে তাহলে নতুন বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারবে সরকার।

সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘ডিজিটাল কমার্স খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধি-বিধান প্রতিপালন করতে হবে। তবে বিদেশি ডিজিটাল কমার্স ইন্ডাস্ট্রি দেশীয় কোনো ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ ব্যতীত এককভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না এবং দেশীয় ডিজিটাল কমার্স ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হবে।

এখন থেকে এটি পরিবর্তন করে বলা হয়, ‘ডিজিটাল কমার্স খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু বিদ্যমান বিধি-বিধান প্রতিপালন করলেই হবে। অর্থাৎ এখন থেকে এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শতভাগ মালিকানায় ব্যবসা করতে পারবেন।’ সংশোধিত নীতিমালায় দেশীয় ডিজিটাল কমার্স ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (যুগ্ম-সচিব) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এতদিন ই-কমার্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারী এককভাবে বিনিয়োগ করতে পারতেন না। তাদের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগ করতে হত। এক্ষেত্রে বিদেশিদের বিনিয়োগ রাখতে হত সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ থাকত কমপক্ষে ৫১ শতাংশ। এই বিধি-নিষেধ উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে বিদেশিরা চাইলে এ খাতে শতভাগ বিনিয়োগ করতে পারবেন।’

তবে দেশে তাদের বিনিয়োগের জন্য বিদ্যমান বিধি-বিধান প্রতিপালন করতে হবে বলে জানান হাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘এসব বিধি-বিধানের মধ্যে ইনভেস্টমেন্ট ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি রয়েছে। বিনিয়োগের কিছু বিধান রয়েছে, বিডার কিছু বিনিয়োগ পলিসি রয়েছে, বেজা ও বেপজার পলিসি রয়েছে। এসব নীতিমালা মেনেই বিদেশিদের বিনিয়োগ করতে হবে। এখন ই-কমার্স খাতের জন্য আলাদা কোনো লিমিটেশন থাকলো না।’

এতে করে দেশীয় ডিজিটাল উদ্যোক্তারা কী ক্ষতিতে পড়বে এমন প্রশ্নে মহাপরিচালক বলেন, ‘এক্ষেত্রে একটু চ্যালেঞ্জ তো থাকেই। যদি বড় কোনো কোম্পানি যেমন- আলিবাবা বা অ্যামাজন চলে আসে তাহলে ছোট কোম্পানিগুলো সমস্যায় পড়বে। এক্ষেত্রে স্থানীয় ছোট কোম্পানিগুলোকে হয় তাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে, না হয় ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে’।

এক্ষেত্রে সরকার তাদের জন্যও প্রচলিত আইনেই বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে কোনো কোম্পানিকে সরকার বলতে পারবে-এত টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে না বা স্থানীয়দের সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগ করতে হবে ইত্যাদি। সেজন্যই বলা হয়েছে, প্রচলিত নীতিমালায় বিনিয়োগ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রচলিত নীতি অনুযায়ী এখনও ফার্মাসিউটিক্যাল ও গার্মেন্টে সবাই বিনিয়োগ করতে পারে না। সুতরাং দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা দিতে সরকারের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ রয়েছে।

তবে আপাতত এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগকে আকর্ষণ করার জন্যই নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিদেশিরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৪৯ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করে বসে আছে। দারাজ, উবার, চালডাল, পাঠাও এদের ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিযোগ ৪৯ শতাংশ অনেক বেশি। নীতিমালা সংশোধন না করা হলে এদের সবার কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হত।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মোবাইল অ্যাপসহ ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসার দ্রুত বিকাশ ঘটছে। এমন প্রেক্ষাপটে দেশের ডিজিটাল খাতের সুষম উন্নয়ন, নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থাপনা, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ এবং আস্থাশীল পরিবেশ তৈরিতে ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা-২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়। সরকার এই নীতিমালাকে আরও বৈদেশিক বিনিয়োগবান্ধব করতে সংশোধনী এনেছে।

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ই-বাণিজ্য হচ্ছে। সেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, গত বছর বাংলাদেশে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৮০০ কোটি টাকা।

অবশেষে গোলের দেখা পেলেন রোনালদো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *