ইস্পাত উৎপাদনে চাঙ্গাভাব অব্যাহত
কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় গত বছর বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ বেড়েছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে চলতি বছরের শুরুতেও।
গত জানুয়ারিতে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ বেড়ে সাড়ে ১৪ কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে। এ সময় চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিলসহ বেশির ভাগ দেশে ইস্পাত উৎপাদন বাড়লেও কমেছে ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্কে। ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএসএ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর রয়টার্স ও মেটাল বুলেটিন।
ডব্লিউএসএর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাপী মোট ১৪ কোটি ৬৭ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি। এ সময় বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ চীনে পণ্যটির মোট উৎপাদন ৭ কোটি ৫০ লাখ টনে পৌঁছেছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারির তুলনায় এ সময় দেশটিতে ইস্পাত উৎপাদনে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
২০১৮ সালে ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় জাপানকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ভারত। তবে মন্দাভাবের মধ্য দিয়ে ২০১৯ সাল শুরু করেছে ভারতের ইস্পাত উৎপাদন খাত। ডব্লিউএসএর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতে ৮১ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৯ শতাংশ কম।
একই চিত্র দেখা গেছে জাপানের ইস্পাত শিল্পেও। গত জানুয়ারিতে দেশটিতে পণ্যটির সম্মিলিত উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেকর্ড ৯ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। এ সময় জাপানে মোট ৮১ লাখ টনের সামান্য কম ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার কারখানাগুলোয় পণ্যটির সম্মিলিত উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার টনে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ কম। বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে গত জানুয়ারিতে ৭৬ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের জানুয়ারির তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইউক্রেনে সব মিলিয়ে ১৯ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৯ শতাংশ কম। একই সময় তুরস্কে পণ্যটির উৎপাদন আগের বছরের জানুয়ারির তুলনায় ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ২৬ লাখ টনে নেমে এসেছে। তবে গত জানুয়ারিতে ব্রাজিলে ইস্পাত উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় দেশটির কারখানাগুলোয় মোট ২৯ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর মধ্যে গত জানুয়ারিতে স্পেনে ইস্পাত উৎপাদন বাড়লেও কমেছে ইতালি ও ফ্রান্সে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্পেনে মোট ১২ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।
একই সময় ইতালিতে পণ্যটির উৎপাদন ৩ দশমিক ৬ শতাংশ কমে ২০ লাখ টনে নেমে এসেছে। অন্যদিকে গত জানুয়ারিতে ফ্রান্সে মোট ১২ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৭ শতাংশ কম।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী মোট ১৮০ কোটি ৮৬ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ডব্লিউএসএ, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১৭২ কোটি ৯৮ লাখ টন। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন বেড়েছে ৭ কোটি ৮৮ লাখ টন।