ইস্পাত উৎপাদনে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে চীন

সরকারের দেয়া প্রণোদনার সুবাদে চীনের অবকাঠামো খাত আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। পুনরায় আস্থা ফিরে পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা এ খাতের বড় বড় নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় করছেন। এর ফলে চীনে ইস্পাতের চাহিদা বাড়ছে।

আর তাতে পাল্লা দিয়ে রেকর্ড গতিতে ইস্পাত উৎপাদনও বেড়ে চলেছে। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) নতুন রেকর্ড গড়েছে চীনের ইস্পাত উৎপাদকরা। প্রথম প্রান্তিকের আগের সব রেকর্ড ভেঙে এ সময় দেশটিতে মোট ২৩ কোটি ১০ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদিত হয়েছে। খবর ব্লুমবার্গ।

চীনের পরিসংখ্যান দপ্তরের দেয়া তথ্যে বলা হয়েছে, মার্চে ইস্পাত উৎপাদন ১০ শতাংশ বেড়ে ৮ কোটি ৩ লাখ টনে পৌঁছেছে। মূলত সরকারের প্রবৃদ্ধিবান্ধব পদক্ষেপের ফলে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠায় ইস্পাতের দাম ও উৎপাদন বাড়ছে। অর্থনীতিতে শ্লথগতির কারণে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে কাঁচামালের চাহিদা পড়তির দিকে ছিল।

কিন্তু নির্মাণ কার্যক্রম বৃদ্ধির সুবাদে এসব কাঁচামালের চাহিদার পাশাপাশি দামও বাড়ছে। চলতি সপ্তাহে ইস্পাতের তৈরি রডের বিক্রয়মূল্য নভেম্বরের পর সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। এর সুবাদে উৎপাদকদের আয় বেড়ে গেছে এবং উৎপাদনও বেড়েছে।

এ অবস্থায় চীনে ইস্পাত উৎপাদনের রেকর্ড নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। সাংহাই স্টিলহোম ইনফরমেশন টেকনোলজির তথ্যানুযায়ী, গত বছর চীনে ১০০ কোটি টন ইস্পাত উৎপাদিত হয়েছিল, যা চলতি বছর রেকর্ড ১ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়বে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কালানিশ কমোডিটিস লিমিটেডের বিশ্লেষক টমাস গুইতেরেজ প্রথম প্রান্তিকে ইস্পাত উৎপাদন প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইস্পাত উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি খুবই শক্তিশালী একটি সংখ্যা। সবার মধ্যে একটি প্রত্যাশা রয়েছে যে, স্থানীয় উৎপাদকরা নতুন নতুন প্রকল্পে আরো অর্থ ব্যয় করবেন এবং এর ফলে ইস্পাতের চাহিদাও বেড়ে যাবে। তবে প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা দিতে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমে বাড়ছে।’

ধাতব পণ্যগুলোর চাহিদার পরিস্থিতিও ক্রমে উন্নত হচ্ছে উল্লেখ করে চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে সিটিগ্রুপ ইনকরপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন ঋণ এবং ম্যানুফ্যাকচারিং কার্যক্রমের সূচকগুলো চীনের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আস্থা ও কার্যক্রম ‘নাটকীয় পরিবর্তনের’ আভাস দিচ্ছে।

তবে ইস্পাত উৎপাদনের অবস্থার অবনমন ঘটতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। বছরের শুরুর দিকে যে হারে ইস্পাত ক্রয়ে গতি দেখা গেছে, তা কিছুটা স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে এসেছে। স্প্রিং ফেস্টিভ্যালের কারণে তা সম্ভবত গত বছরের তুলনায় কমই হবে। ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের দ্বিবার্ষিক আউটলুক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আগামী বছর থেকে সংকুচিত হওয়ার আগে চলতি বছর চীনে ইস্পাতের ব্যবহার বাড়বে ১ শতাংশ, যেখানে তা অপরিবর্তিত থাকার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।

ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু কসগ্রোভ জানান, ‘রেলওয়ে, সাবওয়ে এবং শহর অঞ্চলে পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থায় বিনিয়োগ বেড়েছে, যা চলতি বছরের ইস্পাত চাহিদায় মূল চালক হয়ে থাকবে। সার্বিকভাবে ইস্পাতের যে চাহিদা থাকবে, তা বছরের শুরুর তুলনায় দাম কিছুটা বাড়তির দিকে থাকবে।’

এদিকে আকরিক লোহার কম সরবরাহ চলতি বছর ইস্পাতের দাম বাড়ার পেছনে অনেকটাই ভূমিকা রেখেছে। চীনের ইস্পাত কারখানাগুলোর ব্যস্ততার পাশাপাশি বাজারে আকরিক লোহার সরবরাহে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটার কারণে এ বছর ইস্পাতের স্পট প্রাইজ ৩০ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়।

তবে ভ্যালে এসএ বলছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি খনি শিগগিরই খুলে দেয়া হবে। অবশ্য চলতি বছর বিক্রি কম হওয়ার যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, তার কোনো পরিবর্তন ঘটবে না বলে জানিয়েছে খনিজ পণ্য উত্তোলনকারী কোম্পানিটি। এর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএইচপি বিলিটন গ্রুপ এবং রিও টিন্টো গ্রুপ প্রতিকূল আবহাওয়া ও পরিচালনগত ইস্যুর কারণে বার্ষিক উৎপাদন পূর্বাভাস কমিয়েছে।

অবশ্য ভ্যালের খনিতে দুর্ঘটনার আগে থেকেই আকরিক লোহার বাজার পরিস্থিতি কঠোর হয়ে পড়েছিল। ব্যবহারিক ধাতুটির সরবরাহ সংকুচিত হয়ে পড়ার পাশাপাশি অব্যাহতভাবে ইস্পাত উৎপাদন বৃদ্ধির ফলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে জানিয়েছেন অ্যাংলো আমেরিকান পিএলসির ইস্পাত ও আকরিক লোহা বিভাগের গবেষণা ব্যবস্থাপক সিদ্ধার্থ আগরওয়াল। তিনি মনে করেন, ইস্পাত উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা চলতি বছরও অব্যাহত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *