ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল চেয়ে গভর্নরকে চিঠি
বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর চিঠি দিয়েছেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যানরা। চিঠিতে তারা জানিয়েছেন, বর্তমান দখলদার পরিচালনা পর্ষদ অনতিবিলম্বে বাতিল করে সেখানে পূর্ববর্তী ২০১৪ সালের ন্যায় সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও সক্ষম পেশাদার ব্যক্তি দিয়ে একটি নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে।
এছাড়াও নামে-বেনামে কেনা ব্যাংকটির ৮২ শতাংশ শেয়ার যেন অন্য কোথাও হস্তান্তর করতে না পারে দ্রুত সে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইসলামী ব্যাংকের সম্পদ লুটপাটের প্রকৃত তথ্য অবিলম্বে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। গতকাল সোমবার (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত চিঠিটি গ্রহণ করে।
চিঠিতে চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আনোয়ার ও অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানান, এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ধীরে ধীরে শেয়ার ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয় ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), দুবাই ইসলামী ব্যাংক, আল-রাজি গ্রুপ, সৌদি কোম্পানি আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিস্ট এজেন্সিসহ বেশিরভাগ উদ্যোক্তা ও সাধারণ শেয়ারধারী প্রতিষ্ঠান। এছাড়া স্থানীয় অনেক প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ছেড়ে দিতে হয়। এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগে বিদেশিদের শেয়ার ছিল ৫২ শতাংশের মতো, যা এখন ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
গভর্নর বরাবর দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি দেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক। দেশের অর্থনীতি ও জাতীয় উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে ইসলামী ব্যাংক ১৯৮৩ সালের ৩০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে এদেশের এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ইসলামী ব্যাংক হিসেবে কাজ শুরু করে।
চিঠিতে বলা হয়, ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের কোনো শেয়ার ছিল না। ২০১৬ সালে সাতটি অস্তিত্বহীন শেল কোম্পানি দিয়ে ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ শেয়ার নেয়, যা বর্তমানে প্রায় ৮২ শতাংশ হস্তগত করেছে।
নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব নির্দিষ্ট পলিসি/সাকুলার, লিখিত পরীক্ষা, ভাইভা ছাড়াই প্রায় ৯ হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এসব কর্মকর্তার বেশিরভাগই সাইফুল আলমের নিজের এলাকা পটিয়া উপজেলার। ২০১৬ সালে ব্যাংকটিতে কর্মকর্তা ছিলেন ১৩ হাজার ৫৬৯ জন, যা ব্যাংকের নিয়ম-নীতি লংঘন করে ২০২৩ সালে ২০ হাজার ৮০৯ জনে তুলে আনা হয়েছে।
পাশাপাশি এস আলম গ্রুপ অস্তীত্বহীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠার/ফার্মের নামে/বেনামে অত্যন্ত অনৈতিকতার ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এবং বিভিন্ন কায়দায় অজস্র বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করেছে। ফলে ব্যাংকের নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের পতন ঘটে।
জনগণের উত্তম আস্থাভাজন এবং সর্বোত্তম পারফর্মার ও সেরা ব্যাংক হিসেবে ইসলামী ব্যাংককে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে গ্রাহকদের আস্থা ও স্বার্থরক্ষা জরুরি বলে গভর্নরকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।