ইলিশের দাম সাধারন মানুষের নাগালের বাহিরে
ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। বিশেষ করে গত সপ্তাহ থেকে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। ফলে মাসখানেক আগেও সুনসান আড়তগুলো এখন রাত-দিন সরগরম।
তবে অর্থনীতির নিয়ম মানছে না ইলিশের বাজার। ভোলায় এখনো দাম বেশ চড়া। দাম শুনে বাজার থেকে ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই। অবশ্য আড়তদার-ব্যবসায়ীরা বলছেন, এত দিন ইলিশের খরা গেছে। ফলে জেলে, মহাজন, ব্যবসায়ী সবাই দেনায় পড়েছেন। এখন সেটা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন তারা।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মার্চ-এপ্রিল নিষেধাজ্ঞার দুই মাস শেষ হওয়ার পর নদীতে ইলিশ মিলছিল না। দিন-রাত নদীতে থেকেও দু-একটি ইলিশ জুটত না। অনেক জেলেই শূন্যহাতে ফিরে এসেছেন। ফলে টানা দুই-আড়াই মাস জেলেপল্লীতে ছিল হাহাকার। অবশেষে মেঘনা, তেঁতুলিয়ায় ইলিশ দেখা দিয়েছে। রাত-দিন শুমার করে ইলিশ ধরছেন তারা। ঘাটগুলোও জমজমাট। গত সপ্তাহের চেয়ে এখন আরো বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে।
সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের কাঠির মাথা এলাকার সিডু মাঝি বলেন, এখন নদীতে গিয়ে লোকসান হয় না। দু-তিন ঘণ্টা জাল ফেললেই খরচের টাকা উঠে আসে। শুক্কুর মাঝি বলেন, কোরবানি ঈদের আগেও সারা দিনে দু-তিন হালির বেশি ইলিশ পাওয়া যায়নি। এখন কয়েক ঘণ্টায় সাত-আট হালি নিয়ে ঘাটে ফেরা যায়।
সম্প্রতি ইলিশের ঘাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশভর্তি ট্রলারগুলো ফিরছে। আড়তগুলোতে বেচা-বিক্রি ব্যাপক। সামনের দিনগুলোতে নদীতে ইলিশ আরো বেড়ে যাবে বলে জানান সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মত্স্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, দিন দিন নাব্য সংকট দেখা দেয়ায় ইলিশ চলে যাচ্ছে সাগরে। এখন আবার প্রজননের সময় এসেছে, তাই সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নদীতে আসতে শুরু করেছে। ফলে আগের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে।
তবে সে তুলনায় ইলিশের দাম কমেনি মোটেই। শহরের প্রতিটি হাটবাজারে বিপুল পরিমাণ ইলিশের সরবরাহ দেখা গেলেও দাম নিয়ে হতাশ ক্রেতারা। এক কেজির উপরে এমন ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকায়, সাতশ থেকে আটশ গ্রামের ইলিশের মণ ৩০ থেকে ৩৩ হাজার টাকা, চারশ থেকে পাঁচশ গ্রামের ইলিশের মণ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। ইলিশের বাজার সম্পূর্ণরূপে মৌসুমের ওপর নির্ভর করে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা আগের লোকসান এই সময়ের মধ্যে পুষিয়ে নিতে চাইছেন।
এ ব্যাপারে তুলাতুলি মাছঘাটের ব্যবসায়ী জামাল মহাজন বলেন, মোটা অংকের দাদনের টাকা দেনা আছে। এত দিন মাছ না পাওয়ায় সুুদে-আসলে দেনার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এখন একটু ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, এ দিয়ে কিছু দেনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে। ভোলার খাল এলাকার মত্স্য ব্যবসায়ী সেলিম ও হারুন বলেন, বহুদিন পর মোকামে দু-তিন ঝুড়ি করে ইলিশ পাঠাতে পেরে একটু ভালো লাগছে। এত দিন দুই-তিন ব্যবসায়ী মিলে কয়েক দিন অন্তর এক-দুই ঝুড়ি মোকামে পাঠানো যেত। ফলে এখন কিছুটা পুষিয়ে তো নিতেই হবে।
এত দিন নদীতে ইলিশের পরিমাণ কম ছিল বলে দামও বেড়ে গেছে কয়েক গুণ— এমনটাই মনে করছেন জেলা মত্স্য কর্মকর্তা আহসান হাসিব খান। তিনি বলেন, সামনে ইলিশ আরো বেশি ধরা পড়বে। তখন দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালে চলে আসবে বলে আশা করা যায়।