ইভিসহ একাধিক চীনা পণ্যে শুল্ক বাধা বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
চীনা পণ্যের ওপর আবারো বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে জো বাইডেন প্রশাসন। এ তালিকায় থাকছে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি (ইভি), সেমিকন্ডাক্টর, সৌর সরঞ্জাম ও চিকিৎসাসামগ্রী। চলতি সপ্তাহেই এ-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করা হতে পারে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই মার্কিন কর্মকর্তা। খবর এপি।
সূত্রটি জানিয়েছে, চীনা ইভির ওপর শুল্ক চার গুণ হতে পারে। এতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্ক বেড়ে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসায় এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করেননি তারা।
মার্কিন কর্মকর্তারা চীনের ইভি ও অন্যান্য পণ্যের অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন। তাদের দাবি, চীনের কম দামি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজারকে প্রভাবিত করছে। একই সঙ্গে তাদের প্রযুক্তি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রসহ শিল্পোন্নত দেশগুলোর আশঙ্কা, কম দামি চীনা পণ্য রফতানি ঢেউ তাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে প্রভাবিত করবে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগটি আরো প্রকট। কারণ চীনের গ্রিন এনার্জি থেকে উৎপাদিত পণ্যগুলো ডেমোক্র্যাটদের মূল্যস্ফীতি হ্রাস আইনের মাধ্যমে করা জলবায়ুবান্ধব বিনিয়োগগুলোকে দুর্বল করবে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২২ সালের আগস্টে এ-সংক্রান্ত আইনে স্বাক্ষর করেছিলেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের বিষয়টি নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয়ই ভোটারদের বলেছেন, তারা চীনের প্রতি কঠোর হবেন।
জো বাইডেন তার নীতিকে ‘চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, সংঘাত নয়’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এছাড়া একটি শিল্প কৌশল গ্রহণ করেছেন তিনি, যা চীনে কম্পিউটার চিপ ও অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রি সীমিত করবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পও চীনের সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা জানিয়েছেন। তিনি বারবার অভিযোগ করেছেন, ইভির জন্য জো বাইডেনের সমর্থন শেষ পর্যন্ত আমেরিকার বদলে চীনের কারখানায় কর্মসংস্থান বাড়াচ্ছে।
এদিকে নতুন শুল্ক নীতি বাস্তবায়ন করলে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এ নীতি দেশ দুটিকে বৃহত্তর বাণিজ্য সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এরই মধ্যে এমন কিছুর ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে। সামনে ইভি, সেলফোন ও অন্যান্য ভোক্তা ইলেকট্রনিকসে ব্যবহৃত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির উৎপাদনকে কিছুটা কমাতে পারে চীন। কারণ এটি পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে। গত সপ্তাহে চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ‘লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি শিল্পের ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী ও এ খাতে উচ্চ মানের প্রবৃদ্ধি অর্জনের’ লক্ষ্যে একটি খসড়া নিয়ম জারি করেছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে মার্কিন বাজারে চীনা ইভির উপস্থিতি খুবই কম। তা সত্ত্বেও মার্কিন কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন রয়েছেন। কারণ কম দামের মডেলগুলো শিগগিরই মার্কিন বাজারে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ শুল্কও বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
চীনা অটোমেকার বিওয়াইডি গত বছর এমন একটি গাড়ির মডেল স্থানীয় বাজারে ছাড়ে, যার মূল্য মাত্র প্রায় ১২ হাজার ডলার। অথচ গাড়িটির মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বী মডেলগুলোর দাম তিন-চার গুণ বেশি। এর পর থেকেই মার্কিন গাড়ি শিল্পে নতুন করে ভীতি ছড়িয়েছে চীনা ইভি।