ইউরোজোনের অর্থনীতিতে নতুন উদ্বেগ মূল্যস্ফীতি

স্টাফ রিপোর্টার

কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে ধীর পুনরুদ্ধারের মুখোমুখি হয়েছে ইউরো অঞ্চল। বারবার সংক্রমণের ধাক্কা, জ্বালানি সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি অঞ্চলটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর করে দিয়েছে। কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবও এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় অর্থনীতির মন্দা মোকাবেলায় প্রণোদনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীরা। ফলে অঞ্চলটির মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা। খবর এপি।

কভিডজনিত মারাত্মক মন্দা থেকে ২০২১ সালে মাঝারি আকারের পুনরুদ্ধার হয়েছে ইউরো অর্থনীতি। তবে চলতি বছর আবারো মন্দায় পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বরে রেকর্ড ৫ শতাংশে পৌঁছেছিল। এ অবস্থা নীতিনির্ধারক ও নাগরিক উভয়ের জন্যই কঠিন চাপ সৃষ্টি করেছে।

ডাচ অর্থমন্ত্রী সিগ্রিড কাগও মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যদি প্রশ্ন করেন মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমি চিন্তিত কিনা। তবে উত্তরটা অবশ্যই হ্যাঁ। এ অবস্থা নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতাকে আরো প্রভাবিত করবে।

গ্রিসের পূর্ব উপকূলে জলপাই ও ডালিমের চাষ করা ইওনা অরফানু বলেন, সার ও কীটনাশকের দাম গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ প্রবণতা খুবই উদ্বেগজনক। ছোট কৃষকদের জন্য ফসল উৎপাদন করা কঠিন হয়ে উঠেছে। কারণ আমাদের এ উচ্চ ব্যয় ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ কম।

এ অবস্থায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়িয়ে তুলতে প্রণোদনা সরবরাহে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইসিবি) নীতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।  ফ্রাংকফুর্টভিত্তিক ইসিবি দুটি প্রধান উপায়ে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। সুদের হার শূন্য বা স্বল্প রাখা এবং আর্থিক বাজারে শত শত কোটি ইউরোর সম্পদ কিনে অন্যান্য বাজারেও ঋণের সুদ কম রাখতে সহায়তা করা।

ব্রাসেলসের সিইপিএস থিংক ট্যাংকের বোর্ড সদস্য ড্যানিয়েল গ্রোস বলেন, বর্তমানে ইসিবির রেকর্ড নিম্ন সুদের হার বজায় রাখা উচিত। পাশাপাশি মহামারী প্ররোচিত সম্পদ ক্রয় বন্ধ করে একটি সূক্ষ্ম উপায়ে কাজ করা প্রয়োজন। কারণ কভিডজনিত অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা শেষ হয়ে গেছে। তবে মূল্যস্ফীতির একটি বিপদ রয়েছে। এটি ইউরো অঞ্চলে দীর্ঘ সময় অব্যাহত থাকবে বলেও মনে করেন তিনি।

২০২০ সালে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ সংকোচনের পর গত বছর ইউরো অর্থনীতি আনুমানিক ৫ শতাংশ বেড়েছিল। চলতি বছর এ অঞ্চলের জিডিপি ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। এ পূর্বাভাস যুক্তরাষ্ট্রের ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। যদিও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতির অর্থনৈতিক হুমকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে এবং মুদ্রানীতি কঠোর করার ইঙ্গিত দিয়েছে।

বিপরীতে প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দেসহ ইসিবি কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, সুদের হার বাড়াতে তারা তাড়াহুড়ো করছেন না। তাদের যুক্তি, ইউরো অঞ্চলের মূল্যস্ফীতি যথাসময়ে লক্ষ্যমাত্রার ২ শতাংশে ফিরে আসবে। ইউরোপীয় কমিশন ২০২৩ সালে এ অঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৪ শতাংশের পূর্বাভাস দিয়েছে।

ইউরোজোনের অর্থমন্ত্রী গ্রুপের সভাপতিত্ব করা আইরিশ অর্থমন্ত্রী পাসকেল ডোনোহো বলেন, আমরা আগামীর ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে খুবই সচেতন। প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দুর্বল হলেও ইউরোপের সরকারগুলো কভিডজনিত মন্দা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করার জন্য শত শত কোটি ইউরো ব্যয় করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে।

এ প্রেক্ষাপটে আগামী মাসগুলোয় ইউরোপে কর্মসংস্থানের প্রবণতা নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ কঠোর শ্রমবাজার মজুরি বাড়িয়ে তুলতে পারে। ফলে বেড়ে যাবে মূল্যস্ফীতিও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *