ইউক্রেনীয় বাহিনীর আক্রমণে বহু সৈন্যের প্রাণহানি

স্টাফ রিপোর্টার

রুশ অধিকৃত দনেৎস্কে ইউক্রেনীয় বাহিনীর এক ভয়াবহ হামলায় বিপুলসংখ্যক সৈন্য নিহত হওয়ার তথ্য স্বীকার করেছে রাশিয়া। রোববার (১ জানুয়ারি) নববর্ষের দিন মধ্যরাতে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ওই সৈন্যদের প্রাণহানি ঘটে।

কিয়েভের দাবি, অধিকৃত দনেৎস্ক অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে অন্তত ৪০০ রুশ সৈন্যকে হত্যা করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। এদিকে, লড়াইরত সৈন্যদের প্রাণহানির এ ঘটনায় রাশিয়াজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

সোমবার (২ জানুয়ারি) রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, দনেৎস্কের আঞ্চলিক রাজধানী মাকিভকা শহরের একটি পরিত্যক্ত কারিগরি কলেজের অস্থায়ী ব্যারাকে হামলা চালানো হয়।

কলেজটি রুশ সৈন্যদের আবাস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। রোববার গভীর রাতে ইউক্রেনের রকেট হামলায় ওই ব্যারাকের ৬৩ জন সৈন্য মারা যান।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও বলে, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হিমারস লঞ্চার থেকে ছোড়া চারটি রকেট ওই অস্থায়ী ব্যারাকে আঘাত হানে। তাছাড়া আরও দুটি রকেট গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করা হয়েছে।

মাকিভকা শহরে রুশ ব্যারাকে ইউক্রেনের রকেট হামলার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিশাল একটি ভবন ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে। হামলায় ভবনটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

কিয়েভের দাবি, দনেৎস্কে রাশিয়ার কয়েকশ সৈন্য মারা গেছেন। যদিও রাশিয়াপন্থী কর্মকর্তারা এ সংখ্যাকে ‘অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলে, সোমবার টানা তৃতীয় রাতের মতো কিয়েভ ও অন্যান্য শহরে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে নজিরবিহীন বিমান হামলা  চালিয়েছে রাশিয়া। এ সময় রাশিয়ার ছোড়া অন্তত ৩৯টি ড্রোন গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করা হয়।

রাশিয়ার সামরিক ব্লগাররা বলেছেন, অস্থায়ী ব্যারাকের মতো ভবনে সৈন্যদের অবস্থানের পাশাপাশি গোলাবারুদের মজুত ছিল। ফলে রকেট হামলায় সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে, ব্যারাকটি ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্রের টার্গেট রেঞ্জের মধ্যে থাকার পরও, রুশ সৈন্যরা কেন সেখানে অবস্থান করছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সামরিক ব্লগাররা।

পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থী সৈন্যদের সাবেক কমান্ডার ও রাশিয়ার জাতীয়তাবাদী সামরিক ব্লগার হিসেবে পরিচিত ইগর গিরকিন টেলিগ্রামের মাধ্যমে বলেন, দনেৎস্ক হামলায় নিহতের সংখ্যা শত শত। আহতের সংখ্যাও কম না।

তিনি জানান, অস্থায়ী ওই ব্যারাকে গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম খোলামেলাভাবে রাখা ছিল।

দেশটির আরেকজন জাতীয়তাবাদী ব্লগার রিবার বলেন, ইউক্রেনের হামলায় অন্তত ৭০ জন সৈন্য নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।

রাশিয়ার জনপ্রিয় সামরিক ব্লগার আরচ্যাঞ্জেল স্পেৎজনাজ জেড লিখেছেন, মাকিভকা শহরে যা ঘটেছে তা একেবারে ভয়ানক। আমার প্রশ্ন হলো, এক ভবনে বিপুলসংখ্যক সৈন্যকে রাখার ধারণাটা কে দিয়েছিল?

‘একজন বোকা লোকও বোঝেন যে, গোলাবারুদের আঘাতে অনেক সৈন্য আহত অথবা নিহত হবেন। যুদ্ধক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল অবস্থায় মজুত রাখা গোলাবারুদের বিষয়ে কমান্ডাররা উদাসীন থাকতে পারেন না।’

এর আগেও রাশিয়া শুধু একটি হামলায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সৈন্যের মৃত্যুর তথ্য স্বীকার করেনি। এমনকি, যুদ্ধে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার কতজন সৈন্য নিহত হয়েছেন, সে বিষয়েও সঠিক কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ দেয়নি ক্রেমলিন।

নতুন বছরে কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে নৈশকালীন আক্রমণ চালিয়ে আসছে রাশিয়া। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাতের বেলা এ ধরনের হামলা রাশিয়ার যুদ্ধকৌশল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *