ইইউর নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে যাচ্ছে রুশ জ্বালানি তেল

স্টাফ রিপোর্টার

রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে একটি প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী শাখা। আয়ারল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া ও নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ কথা জানিয়েছেন। যদিও রাশিয়ান জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে এখনো কোনো চুক্তি হয়নি।

সম্প্রতি লুক্সেমবার্গে ব্লকটির মন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অনেক মন্ত্রীই রাশিয়ান জ্বালানি তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞার ওপর সমর্থন জানিয়েছেন। ইইউর ঊর্ধ্বতন কূটনৈতিক জোসেপ বোরেল বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা অন্যান্য দেশের অর্থনীতিকে বড় ধরনের ধাক্কার মুখে ফেলতে পারে।

আইরিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সায়মন কভেনি ইউরোপিয়ান কমিশনে জানান, তারা এখন আগামী নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজে জ্বালানি তেলকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে কাজ করছে।

তথ্য বলছে, ইইউ প্রতি বছর যে পরিমাণ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে, তার এক-চতুর্থাংশই আসে রাশিয়া থেকে। কিন্তু ইউক্রেনে আক্রমণ ও দেশটির বিভিন্ন শহরে একের পর এক বোমা নিক্ষেপের কারণে রাশিয়াকে চাপের মুখে ফেলতে চাইছে ইইউ। এ কারণেই দেশটির জ্বালানি তেলকে পরবর্তী নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ইউক্রেন বলছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণ শুরুর পর থেকেই রুশ সেনারা বেসামরিক মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। এমন দাবির পর আরো এক ধাপ নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয় রাশিয়াকে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে পঞ্চম ধাপে দেশটির কয়লা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ।

তবে রাশিয়া ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে। মস্কোর দাবি, দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিবেশী দেশটিকে নািস প্রভাবমুক্ত করতে সেখানে একটি অভিযান চালানো হচ্ছে।

বোরেল বলেন, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ অনেক বিষয় নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এর আগে তিনি বলেছিলেন, আগে অথবা পরে—একসময় অবশ্যই রাশিয়ার জ্বালানি খাতকে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে। গত সপ্তাহে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নিষেধাজ্ঞার জন্য ভোট দেয়। তবে এখনো এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসালা ভন ডের লিয়েন জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সরকার একটি প্রস্তাব দিয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে তিনি জ্বালানি তেল আমদানিসহ অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিবেচনা করছেন। এছাড়া রাশিয়ান তেলের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ও তেলজাত পণ্য নিষিদ্ধ করার বিষয়েও ভেবে দেখা হচ্ছে। এর বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো রুশ জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন এরই মধ্যে রাশিয়ান জ্বালানি তেল আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর মধ্য দিয়ে মস্কোর বড় অংকের আয় কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা জানান, জ্বালানি তেল রফতানি আয়ের মাধ্যমে যুদ্ধের খরচ জোগাচ্ছে মস্কো।

 

এদিকে রাশিয়ান জ্বালানি তেলের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হওয়ায় নিষেধাজ্ঞার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া ব্লকটির জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার জ্বালানি খাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম আরো বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *