আ.লীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই: প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি সরকারের পতন ঘটাবে, নানা রকম আন্দোলনের হুমকি দেয়। আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের হুমকি ও ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত মহাসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এর আয়োজন করে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।

এর আগে এদিন বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে পতেঙ্গা প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে টানেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন শেষে টানেল পাড়ি দিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে টোল প্লাজায় যান তিনি। প্রধানমন্ত্রীই প্রথম ব্যক্তি, যিনি টোল দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল পার হন। আজ ভোর ৬টা থেকে টানেল দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে যান চলাচল শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। এদিন টানেল ছাড়াও চট্টগ্রামের আরো ১৯টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই—জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছে। বরং খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে ভোট চুরি করেছিল বলেই বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন করে তাদের ক্ষমতা থেকে হটিয়েছিল। এটা তাদের মনে রাখা উচিত। ওরা ভোট চোর, জনগণের অর্থ চোর, বিএনপি-জামায়াত মানেই হচ্ছে খুনি, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়নে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ এই বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না, এটাই হলো বাস্তবতা। চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী, এখানকার মানুষ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে বলেই বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে।’

বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘‌দইজ্জার তল দি গাড়ি চলের (নদীর নিচে দিয়ে গাড়ি চলে)। টানেল চট্টগ্রামবাসীর জন্য সরকারের বিশেষ উপহার। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে অর্থনীতিসহ যেকোনো সংকটময় সময়ে চট্টগ্রাম সবার আগে ভূমিকা পালন করেছে। চট্টগ্রামের উন্নয়নের মাধ্যমে সারা দেশকে উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় অগ্রগতিতে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতে ক্ষমতায় এলে উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’

তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় পুনরায় ভোট প্রত্যাশা করে বলেন, ‘আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে কর্ণফুলী টানেল, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নয়ন পেয়েছেন। কাজেই আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা আমাদের আবারো সেবা করার সুযোগ দেবেন কিনা হাত তুলে ওয়াদা করুন।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের উন্নয়নের বিপরীতে বিএনপি-জামায়াত ধ্বংস করে। ওরা আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত। দুর্নীতি-লুটপাট বিএনপির প্রধান কাজ। একসময় চট্টগ্রাম ছিল সন্ত্রাসের রাজত্ব। আওয়ামী লীগ চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক হাব ও দেশের অর্থনৈতিক মূল কেন্দ্রে রূপান্তর করেছে। বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামকে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না। জনগণের উন্নয়নের অংশীদার হয়ে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কভিড মহামারীর মতো সংকট মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ সরকার সফল হয়েছে। কভিডের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশও কিছুটা সংকটের মধ্যে পড়েছে। এর মধ্যে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে বৈশ্বিক অর্থনীতি আবারো সংকটের দিকে। এর পরও দেশের জনগণের কথা ভেবে আমরা এক কোটি মানুষকে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করেছি, যা দেশের জনগণকে সংকট থেকে পরিত্রাণ দিয়েছে।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুপথ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ স্থানীয় নেতারা। অনুষ্ঠানে সেতু সচিব মনজুর হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী, সেতু কর্তৃপক্ষ ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশস্থলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে টানেলের রেপ্লিকা উপহার দেয়া হয়। উদ্বোধন উপলক্ষে থিম সং ও নৃত্য পরিবেশনা উপভোগ করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *