আলোড়ন তুলেছে চীনা এআই মডেল ডিপসিক আর১
উন্মোচনের পর পরই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মার্কেটে আলোড়ন তুলেছে চীনা কোম্পানি ডিপসিকের এআই মডেল আর১। জানা গেছে, তথ্য বিশ্লেষণ ও সমাধান দেয়ার কোনো কোনো মানদণ্ডে বহুল ব্যবহৃত চ্যাটজিপিটিকেও ছাড়িয়ে গেছে চ্যাটবটটি। গত রোববার বিকাল পর্যন্ত এটি অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে সেরা ফ্রি অ্যাপ হিসেবে শীর্ষে উঠে এসেছে। মডেলটি নিয়ে উচ্ছ্ব্সিত মন্তব্য করেছেন প্রখ্যাত প্রযুক্তিবিদ ও বিনিয়োগকারীরা। খবর টেকক্র্যাঞ্চ।
ডিপসিক চলতি সপ্তাহের শুরুতে আর১-এর একটি উন্মুক্ত সংস্করণ বাজারে আনে। এআই চ্যাটবটটির কাজ চ্যাটজিপিটির মতো হলেও এর কার্যপদ্ধতি ভিন্ন। ডিপসিক আর১ মূলত ওপেন সোর্স পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করে। এর কোডিংসহ অন্যান্য তথ্য উন্মুক্ত, যা চ্যাটজিপিটি প্রকাশ করে না।
এর সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো প্রশিক্ষণের খরচ। ডিপসিকের দাবি অনুযায়ী, আর১-কে প্রশিক্ষণ দিতে মাত্র ৫৬ লাখ ডলার ব্যয় হয়েছে, যেখানে অন্য মার্কিন এআই কোম্পানিগুলো এক্ষেত্রে কয়েক কোটি ডলার পর্যন্ত ব্যয় করে।
ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট মার্ক আন্দ্রিসেন ডিপসিককে ‘এখন পর্যন্ত দেখা সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ও চিত্তাকর্ষক উদ্ভাবনগুলোর একটি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
উন্নত মানের চিপে চীনের প্রবেশাধিকার ঠেকাতে দেশটির ওপর রফতানি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও চীনের এমন সাফল্যে রীতিমতো ঝাঁকুনি খেয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি খাত। এআই খাতে শত শত কোটি ডলারের বিনিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ লিখেছে, এ সাফল্য দেখায় কীভাবে নিষেধাজ্ঞার কারণে স্টার্টআপগুলোকে দক্ষতা, রিসোর্স ভাগাভাগি ও সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভাবনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং সম্প্রতি চীনের প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, মার্কিন রফতানি নিষেধাজ্ঞা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এদিকে ডিপসিক নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়েছেন স্বাস্থ্য-প্রযুক্তি কোম্পানি কুরাইর সিইও নীল খোসলা। তার দাবি, ডিপসিক চীনের একটি প্রপাগান্ডা, যা খরচ কম দেখিয়ে দাম কমিয়ে মার্কিন এআই শিল্পের ক্ষতি করতে চায়। তবে তার দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, তার বাবা ভিনোদ খোসলা ওপেনএআইর বিনিয়োগকারী।
ওয়াই কম্বিনেটরের সিইও গ্যারি ট্যান বলেন, ‘ডিপসিকের সাফল্য মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য ইতিবাচক হতে পারে।’ তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দেয়া যদি দ্রুত, সস্তা ও সহজ হয়, তাহলে এআইর বাস্তব ব্যবহার দ্রুত বাড়বে। এতে কম্পিউটিংয়ের চাহিদাও বাড়বে।’
মেটার প্রধান এআই বিজ্ঞানী ইয়ান লেকুন ডিপসিকের সাফল্যকে চীন বনাম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে দেখার বিপক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার আসল শিক্ষা হলো, ওপেন সোর্স মডেল প্রোপ্রাইটারি মডেলগুলোকে (চ্যাটজিপিটি) ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’
তিনি লিংকডইনে বলেন, ‘ডিপসিক ওপেন রিসার্চ ও ওপেন সোর্স (যেমন পাইটর্চ ও মেটার লামা) থেকে উপকৃত হয়েছে। তারা নতুন ধারণা নিয়ে এসেছে এবং সেগুলো অন্যদের কাজের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করেছে। তাদের কাজ উন্মুক্ত ও ওপেন সোর্স। সবাই এর থেকে উপকৃত হতে পারে।’