আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৬২ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টার

দেশে এক বছরের ব্যবধানে আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) ও কার্যক্রম বেড়েছে ৬২ শতাংশের বেশি। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে আট হাজার ৫৭১টি। আর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এ সংখ্যাটি ছিল পাঁচ হাজার ২৮০টি। অর্থাৎ এক বছরে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে তিন হাজার ২৯১টি বা ৬২ দশমিক ৩২ শতাংশ। এছাড়া ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন ও কার্যক্রম ছিল তিন হাজার ৬৭৫টি, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ছিল তিন হাজার ৫৭৩টি।

সোমবার (৩১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে’ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ, বিএফআইইউ পরিচালক রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পরিচালক কামাল হোসাইন প্রমুখ।

বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, লেনদেন সন্দেহজনক হলে আমরা তদন্ত করি, তবে সব সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) অপরাধ নয়। এক্ষেত্রে অপরাধের তথ্য প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনেক গ্রাহক এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বিএফআইইউর ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থবছরে সর্বোচ্চ সাত হাজার ৯৯৯টি সন্দেহজনক লেনদেনের রিপোর্ট পেয়েছি আমরা। আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) ব্যাংকগুলো মোট চার হাজার ৪৯৫টি রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। আলোচিত সময়ে ১০৬টি রিপোর্ট জমা দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো জমা দেয় ৪৫৭টি রিপোর্ট।

অর্থপাচার নিয়ে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, অর্থপাচার হয় দেশ থেকে, তবে সেসব অর্থ ফেরানো সম্ভব হয়ে উঠে না। অর্থপাচারের সিংগভাগ হয়ে থাকে ট্রেড বেসড পন্থায়। কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ ওভার ইনভয়েসিং করে এ অর্থপাচার হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এলসি খোলাতে নানা কড়াকড়ি আরোপ করার ফলে এখন ওভার ইনভেয়েসিং হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমাদের কাজ আন্ডার ইনভয়েসিং কীভাবে হচ্ছে তা খুঁজে বের করা, আমরা সেটাই চেষ্টা করছি। একটা জায়গা খুঁজে পেয়েছি, সেটা হচ্ছে গাড়ির ক্ষেত্রে। গাড়ির ক্ষেত্রে ২০০ শতাংশ ট্যাক্স রয়েছে। তাই আন্ডার ইনভয়েসিং করতে পারলে ট্যাক্সের পরিমাণ কমে যাবে। তাই এর মাধ্যমেই আন্ডার ইনভয়েসিং করার জন্য প্রধান জায়গা হিসেবে এটা বেছে নিয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য জায়গাও আন্ডার ইনভয়েসিং করার সুযোগ রয়েছে। এসব জায়গায় বাংলাদেশ ব্যাংক মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করছে। আশা করছি আগামীতে এটাও কমে আসবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থপাচার হয়েছে এমন কোনো তথ্য নেই। দেশ থেকে টাকা পাচার হয়, কিন্তু যেটা একবার পাচার হয় সেটা ফেরানো সম্ভব হয় না। উন্নয়নশীল প্রতিটি দেশ থেকেই অর্থপাচার হয়। আমরা উন্নয়নশীল দেশ, সেক্ষেত্রে আমাদের এখান থেকেও হয়। অবৈধ অর্থ ছাড়াও বৈধভাবেও নানা কৌশলে দেশ থেকে টাকা চলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং আগে ধরা গেলে সুবিধা হতো কিন্তু সেটা ধরা সম্ভব হয় না। দেশে হুন্ডি হচ্ছে। হুন্ডির ডলার কোথাও না কোথাও ব্যবহার হচ্ছে। আর তা ব্যবহার হচ্ছে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের পেমেন্টে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনিটরিং জোরদার করেছে, আগামীতে ট্রেড বেসড মানি লন্ডারিং কমে আসবে।

সুইচ ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা প্রসঙ্গে বিএফআইইউ প্রধান বলেন, সুইচ ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ বেড়েছে। এটা নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সুইচ ব্যাংকে ব্যক্তি পর্যায় টাকা হলো তিন শতাংশ, বাকিটা ব্যাংক টু ব্যাংক পর্যায়ে। সুইজারল্যান্ড থেকে তথ্য চেয়েছি, তারা আমাদের কিছু তথ্য দিয়েছে। তাদের আইন পরিবর্তন হয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ের তথ্য শেয়ার করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *