আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম নিম্নমুখী

আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব পণ্যের দামই নিম্নমুখী। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় ডিসেম্বরে কমেছে। এর মধ্যে চাল, চিনি, ভোজ্যতেলের মতো খাদ্যপণ্য যেমন রয়েছে, একইভাবে আছে জ্বালানি তেল, কয়লা, তুলার মতো খাদ্যবহির্ভূত পণ্যও। আকরিক লোহা, কপার, অ্যালুমিনিয়ামের মতো শিল্প ধাতু এবং স্বর্ণের মতো মূল্যবান ধাতুর দামও কমেছে এ সময়।

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্যের হালনাগাদ প্রতিবেদন নিয়মিত প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির তথ্য বিশ্লেষণ করে পণ্যমূল্যের গতিপ্রকৃতির এ চিত্র পাওয়া গেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে ভোজ্যতেলের দাম। গত বছরের জানুয়ারিতে প্রতি টন পাম অয়েলের দাম ছিল ৭০৩ ডলার ৪৫ সেন্ট। একই পণ্যের দাম বছর শেষে নেমে এসেছে ৫৩৫ ডলার ২ সেন্টে। একইভাবে কমেছে সয়াবিন তেলের দামও। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রতি টন সয়াবিন তেল ৮৭০ ডলার ৫০ সেন্টে বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়ায় ৭২৭ ডলার ৮৮ সেন্টে।

সংস্থাটির প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের (ক্রুড) গড় দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৬৬ ডলার ২৩ সেন্ট। বছর শেষে এ দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৫৩ ডলার ৯৬ সেন্টে। একইভাবে আরেক জ্বালানি পণ্য কয়লার দামও কমেছে।

গত বছরের প্রথম মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন কয়লা (অস্ট্রেলিয়ান) বিক্রি হয়েছিল ১০৬ ডলার ৪৫ সেন্টে। একই পণ্যের দাম গত ডিসেম্বরে নেমে আসে প্রতি টন ১০১ ডলার ৩৭ সেন্টে।

গত বছরের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম চড়া থাকলেও আস্তে আস্তে তা কমতে থাকে। থাইল্যান্ডের চাল (৫ শতাংশ ভাঙা) গত বছরের জানুয়ারিতে বিক্রি হয়েছিল প্রতি টন ৪৪২ ডলারে। একই বছরের ডিসেম্বরে এ চালের দাম নেমে আসে টনপ্রতি ৪০৪ ডলারে। অর্থাৎ ২০১৮ সালের প্রথম মাসের তুলনায় শেষ মাসে খাদ্যপণ্যটির দাম কমেছে টনে ৩৮ ডলার।

গত বছরের শুরু আর শেষের দামে ব্যবধান দেখা গেছে খাদ্যপণ্য চিনিরও। গত বছরের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম ছিল প্রতি কেজি ৩১ সেন্ট। ডিসেম্বরে তা নেমে আসে ২৮ সেন্টে।

প্রধান প্রধান শিল্প ধাতুর দামও গত এক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এর মধ্যে অ্যালুমিনিয়ামের দাম কমেছে টনপ্রতি প্রায় ২৯০ ডলার। গত বছরের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অ্যালুমিনিয়াম বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ২০৯ ডলার ৭৩ সেন্টে।

বস্ত্র খাতের কাঁচামাল তুলার মূল্য গত এক বছরে কেজিপ্রতি ১১ সেন্ট কমেছে। গত বছরের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি তুলা বিক্রি হয়েছিল ২ ডলার ১ সেন্টে। ডিসেম্বরে পণ্যটির দাম নেমে আসে প্রতি কেজি ১ ডলার ৯০ সেন্টে।

ওই বছরের ডিসেম্বরে এ দাম কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯২০ ডলার ৩৮ সেন্টে। আর বছর শেষে প্রতি টন আকরিক লোহা বিক্রি হয়েছে ৬৯ ডলার ১৫ সেন্টে। গত জানুয়ারিতে সমপরিমাণ একই পণ্য বিক্রি হয়েছিল ৭৬ ডলার ৩৪ সেন্টে।

স্বর্ণ ও রৌপ্যের দামও গত বছর পড়তির দিকেই ছিল। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৩৩১ ডলার ৩০ সেন্ট। ডিসেম্বরে এ দাম নেমে আসে ১ হাজার ২৫০ ডলার ৪০ সেন্টে। রুপার দাম এক বছরে আউন্সপ্রতি আড়াই ডলার কমেছে। গত বছরের শুরুতে প্রতি আউন্স রুপা বিক্রি হয়েছিল ১৭ ডলার ১৩ সেন্টে, বছরের শেষ মাসে যা নেমে আসে ১৪ ডলার ৭৭ সেন্টে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাও (এফএও) বলছে, ২০১৮ সাল শেষে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক আগের বছরের তুলনায় কম ছিল। বছরজুড়ে চিনি, ভোজ্যতেল ও দুগ্ধপণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হ্রাস পাওয়ায় খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক কমে যায়।

সম্প্রতি এফএও প্রকাশিত ফুড প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী, টানা পাঁচ বছরের নিম্নমুখী প্রবণতা কাটিয়ে ২০১৭ সালে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ঘুরে দাঁড়ায়। ওই বছর সূচক মান আগের বছরের তুলনায় বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৪ দশমিক ৬ পয়েন্টে।

তবে বছর ঘুরতেই আবার খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচকে নিম্নমুখী প্রবণতা ফিরে আসে। ২০১৮ সাল শেষে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ১৬৮ দশমিক ৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের বছরের চেয়ে যা ৬ দশমিক ২ পয়েন্ট কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *