আগামী বছর থেকে কমবে পাম অয়েলের দাম
আন্তর্জাতিক বাজারে এক দশকের সর্বোচ্চে অবস্থান করছে খাদ্যপণ্যের দাম। আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে পাম অয়েল। তবে আগামী বছর পণ্যটির বাজারদর ধারাবাহিকভাবে কমতে পারে। এমনটি জানিয়েছে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফিচ রেটিংস।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে পাম অয়েলের বাজার বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে। করোনা মহামারী শুরুর পরই শ্রমিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। গত বছরও এ সংকট কাটাতে পারেনি পাম অয়েল খাত। এছাড়া উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। পাম অয়েল সরবরাহেও দেখা দেয় নানা প্রতিবন্ধকতা। এর মধ্যে রয়েছে জাহাজে জায়গা সংকট, অতিরিক্ত জাহাজ ভাড়া, কনটেইনারের তীব্র অভাব ও ঊর্ধ্বমুখী পরিবহন ব্যয়।
চলতি বছর যখন এসব সংকট নিরসনের সম্ভাবনা দেখছিলেন বাজারসংশ্লিষ্টরা, ঠিক তখনই নতুন বাধা হয়ে দাঁড়ায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে বিশ্ববাজারে নতুন অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উৎপাদন উপকরণের দাম। তাছাড়া ইউক্রেন সূর্যমুখী তেলের সবচেয়ে বড় উৎপাদক দেশ হওয়ায় বিশ্ববাজারে এ তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে চাহিদা বাড়ছে পাম অয়েলের। এ কারণে পণ্যটির দাম বাড়তির দিকে।
তবে ফিচ রেটিংসের প্রত্যাশা, আগামী বছর ধাপে ধাপে পাম অয়েলের দাম কমবে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রাখবে ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন। বিশেষ করে বিশ্বের শীর্ষ সরবরাহকারী দেশ ইন্দোনেশিয়ায় পণ্যটির উৎপাদন রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছার সম্ভাবনা দেখছে সংস্থাটি।
ফিচ রেটিংস জানায়, চলতি মাসে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত পাম অয়েলের দাম রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। বর্তমানে প্রতি টনের মূল্য ১ হাজার ৯০০ ডলারে অবস্থান করছে।
ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে সূর্যমুখী তেলের সরবরাহ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ায় দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোয় ভয়াবহ খরা সয়াবিন তেল উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত করেছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া অপরিশোধিত পাম অয়েল রফতানির কমিয়ে আনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এসব বিষয় পাম অয়েলের বাজারকে আরো অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ায় ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন আশার আলো দেখাতে শুরু করেছে। ফিচ রেটিংস বলছে, দেশটিতে উৎপাদন বাড়ায় চলতি বছরই টনপ্রতি ১ হাজার ডলারে নামতে পারে পাম অয়েলের দাম। অন্যদিকে আগামী বছর তা ৭০০ ডলার ও তার পরের বছর ৬০০ ডলারে নামার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বাজারে ঝুঁকি বেড়ে যাবে। তখন এ পূর্বাভাসে পরিবর্তন আসতে পারে।
চলতি বছর ইন্দোনেশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদন বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির পাম অয়েল অ্যাসোসিয়েশনও (গাপকি)। মূলত অনুকূল আবহাওয়া ও প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানগুলোয় ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা এতে সহায়তা করছে।
প্রতিবেদনে গাপকি জানায়, এ বছর ইন্দোনেশিয়ায় ৪ কোটি ৮০ হাজার টন পাম অয়েল উৎপাদন হতে পারে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৪ কোটি ৬৯ লাখ টন। সে হিসাবে উৎপাদন ১১ লাখ টন বাড়বে। আগামী বছর উৎপাদন আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।