আইফোন উৎপাদন বাড়িয়েছে অ্যাপল

বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে হুয়াওয়ের সাফল্যে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে অ্যাপল। যে কারণে চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির ওপর মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং কালো তালিকাভুক্তির বিষয়টিকে আইফোন ব্যবসা বিভাগের মন্দাভাব কাটিয়ে ওঠার সুযোগ হিসেবে নিয়েছে অ্যাপল। এরই অংশ হিসেবে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) জন্য আইফোন সংযোজন ও সরবরাহ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে চার কোটি ইউনিট পুনর্নির্ধারণ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। অথচ এর আগে দ্বিতীয় প্রান্তিকের জন্য চুক্তিভিত্তিক পণ্য নির্মাতাদের ৩ কোটি ৯০ লাখ ইউনিট আইফোন সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। খবর ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।

বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে ডিভাইস সরবরাহে অ্যাপলকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে হুয়াওয়ে। বাজারটিতে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাংয়ের পরের অবস্থানেই রয়েছে হুয়াওয়ে। তবে গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের চলমান বাণিজ্য বিরোধের জেরে হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ, যা গত শনিবার প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশক কোওয়েনের দাবি, চীনা প্রতিদ্বন্দ্বী হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপে আইফোন ব্যবসায় উল্লম্ফনের আশা করেছিল অ্যাপল। যে কারণে কিছু বাজারের জন্য চুক্তিভিত্তিক ডিভাইস নির্মাতাদের নীরবে আইফোন উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞার কারণে হুয়াওয়ের ডিভাইস ব্যবসার ভবিষ্যৎ অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে নিজেদের পণ্য উন্নয়ন ও উৎপাদনের জন্য মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর কাছ থেকে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও সেমিকন্ডাক্টর পণ্য ক্রয়ের পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা মেনে হুয়াওয়ের স্মার্টফোনে অ্যান্ড্রয়েডের কোর ফিচারগুলোর সমর্থন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল গুগল। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বিক্রির ওপর।

অ্যাপল ৩০ জুন সমাপ্ত প্রান্তিকের জন্য মোট যতসংখ্যক আইফোন উৎপাদনের নির্দেশ দিয়েছিল, তার ৭৫ শতাংশ বা তিন কোটি ইউনিটই ছিল আইফোন এক্সআর, আইফোন এক্সএস ও আইফোন এক্সএস ম্যাক্স। এছাড়া ২৫ শতাংশ ছিল আইফোন ৭ ও আইফোন ৮ ডিভাইস। বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যকার বাণিজ্য বিরোধের জেরে অ্যাপলের দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ নিষেধাজ্ঞার ফলে নিজেদের ডিভাইসের জন্য অ্যান্ড্রয়েডের সমর্থন হারালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল হুয়াওয়ের। কিন্তু হুয়াওয়ে এরই মধ্যে অ্যান্ড্রয়েডের বিকল্প উন্নয়ন সম্পন্ন করেছে, যা চলতি বছরের শেষ দিকে উন্মোচনের ঘোষণাও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়ায় তা আর প্রয়োজন পড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে। হুয়াওয়ের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছে, যদি তাদের স্মার্টফোনে অ্যান্ড্রয়েডের সমর্থন বন্ধ করা হয়, তাহলে তারা নিজেদের অপারেটিং সিস্টেম উন্মোচন করবে। অন্যথা গুগলের অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্ম ছাড়ার কোনো ইচ্ছা নেই প্রতিষ্ঠানটির।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, প্রিমিয়াম স্মার্টফোন ডিভাইসের গুরুত্বপূর্ণ বাজার চীনে দীর্ঘদিন ধরে নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে অ্যাপল। বাজারটিতে আইফোন ব্যবসা নিয়ে খুব একটা ভালো সময় পার করছে না প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) চীনে অ্যাপলের দখল কমে ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অথচ গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকেও (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বাজারটির ১২ শতাংশ দখলে ছিল প্রতিষ্ঠানটি। একই সময় চীনের স্মার্টফোন বাজারে হুয়াওয়ের দখল ২৮ থেকে বেড়ে ৩৪ শতাংশে পৌঁছেছে।

অ্যাপল পণ্য বিশ্লেষক মিং চি-কুয়োর দাবি, চলতি বছর আইফোনের নতুন তিনটি মডেল উন্মোচন করবে অ্যাপল। এর মধ্যে একটি ৬ দশমিক ১ ইঞ্চি ডিসপ্লে সংস্করণ আনা হবে। তুলনামূলক বড় ডিসপ্লের এ ডিভাইস বৈশ্বিক বাজারে ১০ কোটি ইউনিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে অ্যাপল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *