অ্যাপলকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদনের পরামর্শ দিল ট্রাম্প

চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এমন সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল। এরই পেরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক এড়াতে চীনের বদলে অ্যাপলকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদনের পরামর্শ দিয়েছেন। খবর বিজনেস ইনসাইডার ও রয়টার্স।

গত শনিবার ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় জানান, চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যে বিপুল অংকের শুল্ক আরোপের কারণে অ্যাপল পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। তবে এর সহজ সমাধানও রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে কোনো কর পরিশোধ করতে হবে না, যদি তারা চীনের বদলে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদন করে। তাই যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুতই কারখানা নির্মাণ করতে অ্যাপলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের বিষয়ে অ্যাপলের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অ্যাপল সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা চালু করলে প্রতিষ্ঠানটি পুরোপুরি কর রেয়াত সুবিধা পাবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। হোয়াইট হাইজের পক্ষ থেকেও তাত্ক্ষণকিভাবে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রে পুরোদমে পণ্য উৎপাদন করতে অ্যাপলকে বরাবরই উৎসাহ দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। তবে এবারই প্রথম দেশের মাটিতে পণ্য উৎপাদন করলে অ্যাপলকে উল্লেখযোগ্য কর রেয়াত সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করেছেন ট্রাম্প। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে পুরোপুরিভাবে পণ্য উৎপাদন অ্যাপলের জন্য ব্যয়বহুল হবে।

চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়ে গত শুক্রবার অ্যাপল মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কাছে একটি চিঠি লিখেছে। এতে বলা হয়েছে, দেশটি থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হলে তাদের কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এর ফলে তাদের ম্যাক মিনি ডেস্কটপ কম্পিউটার, অ্যাইপ্যাড ও অ্যাপল পেন্সিল স্টাইলাসসহ অন্যান্য ডিভাইসের যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিকস পণ্যের চার্জার ও অ্যাডাপ্টার বেশি দামে কিনতে হবে। এর ফলে ভোক্তাদের এসব পণ্যের জন্য বেশি মূল্য গুনতে হতে পারে। তবে চিঠিতে আইফোনের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেনি অ্যাপল। চিঠিতে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর জবাবে শনিবার অ্যাপলকে এমন পরামর্শ দিলেন ট্রাম্প।

গত শুক্রবার ট্রাম্প জানান, চীন থেকে আমদানি করা ২৬ হাজার ৭০ লাখ কোটি ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর তার প্রশাসন নতুন করে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা নিয়েছে। শিগগিরই তা কার্যকর করা হবে। এর আগে দেশটি থেকে আমদানিকৃত ৫ হাজার কোটি ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রযুক্তি পণ্যে অধিক শুল্ক আরোপের কারণে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ ধরনের সমস্যায় পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে অ্যাপল।

সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন কর সুবিধায় সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী অ্যাপল। চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কর সংস্কারের অংশ হিসেবে আগামী পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে তারা ৩৫ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে অ্যাপল চীনে ৯৬০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য বিক্রি করেছে, যা প্রতিষ্ঠানটির মোট রাজস্বের প্রায় ১৮ শতাংশ।

অ্যাপল জানিয়েছে, চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হলে মার্কিন ভোক্তাদের ব্যয় বাড়বে। কারণ দৈনন্দিন জীবনে তারা অ্যাপল পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। চলতি বছরের শুরুর দিকে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুক এক সাক্ষাত্কারে ট্রাম্পকে বলেছিলেন, শুল্ক আরোপ সঠিক সমাধান নয়। তিনি বিকল্প উপায় বের করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ চিপ নির্মাতা ইন্টেল করপোরেশনও চীনা পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি অ্যাপলের শুল্ক আরোপের বিরোধিতাকে সমর্থন করে বলেছে, বৈশ্বিক তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করছে। তারপরও ট্রাম্প প্রশাসন কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, এ নিয়ে বিস্মিত তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *