অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক বাজার

স্টাফ রিপোর্টার

কয়েক মাস ধরেই খাদ্যপণ্যসহ ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা চলছিল। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে যা আরো তীব্র হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ইউক্রেন থেকে সূর্যমুখী তেল সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভোজ্যতেলের বাজার হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। এরই মধ্যে গত শুক্রবার পাম অয়েল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে ইন্দোনেশিয়া। শীর্ষ উৎপাদক ও রফতানিকারক দেশের এমন ঘোষণায় বৈশ্বিক ভোজ্যতেলের বাজারে বড় প্রভাব পড়ে। আগামীতে যা আরো অস্থির হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকরা।

ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক বাজারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত হয় পাম, সয়াবিন, সরিষা ও সূর্যমুখী তেল। এর মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি ব্যবহার হয় পাম অয়েল। ভোজ্যতেলটির বৈশ্বিক সরবরাহের ৬০ শতাংশের বেশি আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। ২৫ শতাংশ আসে মালয়েশিয়া থেকে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য রফতানি নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো। বৃহস্পতিবার থেকে যা কার্যকর হওয়ার কথা। এ ঘোষণার পরই ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। বিশেষ করে দেশটির পাম অয়েলের ওপর নির্ভরশীল ভারত, চীন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিসর, কেনিয়াসহ ইউরোপের বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করে।

বুরসা মালয়েশিয়া এক্সচেঞ্জে অপরিশোধিত পাম অয়েলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য গতকাল ৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৪০ শতাংশ বেশি। রয়টার্সের তথ্য বলছে, শিকাগো বেঞ্চমার্কে সয়াবিন তেলের দামও ২০০৮ সালের সর্বোচ্চে উঠেছে। দাম বাড়ছে অন্যান্য ভোজ্যতেলেরও।

বিশ্বের শীর্ষ সূর্যমুখী উৎপাদক ও রফতানিকারক দেশ ইউক্রেন। যুদ্ধের জেরে দেশটি থেকে সরবরাহ অনিশ্চয়তার জেরে পাম অয়েলসহ অন্য ভোজ্যতেলের ওপর তার প্রভাব পড়তে শুরু করে। আর এখন ইন্দোনেশিয়ার রফতানি নিষেধাজ্ঞা বাজারের ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করছে জিআরও ইন্টেলিজেন্স। বৈশ্বিক কৃষি বিষয়ে তথ্য বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠানটি তাদের এক নোটে বলছে, ভোজ্যতেলের বাজার পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। একটির সরবরাহ সংকট দেখা দিলে অন্যটির ওপর চাপ পড়ে। দাম বাড়ে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে।

ভোজ্যতেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় পাম অয়েল। বিস্কুট, ডিটারজেন্ট ও লিপস্টিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে এটি ব্যবহার হয়। ফলে ভোজ্যতেল ছাড়াও বৈশ্বিক খাদ্য ও পণ্যবাজারের ওপর এর প্রভাব পড়বে। কারণ দেশটির বিকল্প উৎস এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়ার বিকল্প উৎস পাওয়া অসম্ভব বলে মনে করেন ডাচভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান রাবো ব্যাংকের কৃষিপণ্যের বাজার গবেষণা বিভাগের প্রধান কার্লোস মেরাও। তার ভাষ্য, রফতানি নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর বড় ধাক্কা। এতে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। সংকট তৈরি হবে। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ভোজ্যতেলের বাজারে যে প্রভাব পড়েছে, সেটিকে আরো তীব্র করে তুলবে। সামনের দিনগুলোয় বাজার পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে বলেও মত দেন তিনি।

ভোজ্যতেলের শীর্ষ ভোক্তা দেশ ভারত। ইন্দোনেশিয়ার রফতানি করা পাম অয়েলের বড় একটি অংশের গন্তব্যও এটি। তাই রফতানি নিষেধাজ্ঞা দেশটির বাজারে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। এর আগে সর্বোচ্চ দাম বাড়ে ২০০৮ ও ২০১১ সালে। তবে বর্তমান বাজার অনিশ্চয়তায় সেই সময়ের চেয়েও ৪৫ শতাংশ বেশি দামে দেশটির বাজারে ভোজ্যতেল লেনদেন হচ্ছে। ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) তথ্য বলছে, ভারতের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম গত মার্চে আগের হিসাব বছরের তুলনায় ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। রফতানি নিষেধাজ্ঞার তাত্ক্ষণিক প্রভাব হিসেবে দাম বেড়েছে আরো ১০ শতাংশের বেশি। ইন্দোনেশিয়ার রফতানি নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার প্রভাব পড়েছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিলসহ ইউরোপের দেশগুলোয়ও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *